মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কোরআন যাদের পথ দেখায় না

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:২১ পিএম

শেয়ার করুন:

কোরআন যাদের পথ দেখায় না

কোরআন হচ্ছে মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। কোরআনের পরতে পরতে রয়েছে মানবতার মুক্তি। মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবন কীভাবে পরিচালিত হবে- এর প্রতিটি বিষয় কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমার নিকট কিতাব নাজিল করেছি। এটি এমন যে, তা সবকিছুর সুস্পষ্ট বর্ণনা আর এটা হেদায়েত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।’ (সুরা নাহল: ৮৯)

তবে, এমন অনেক বান্দা রয়েছে, কোরআন যাদের পথ দেখায় না। তারা কারা? তারা হলো অহংকারী ও আল্লাহর কিতাবের বিদ্রোহী। তারা কোরআন থেকে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয় না। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজেদের কাছে কোনো দলিল না থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর আয়াত নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়, তাদের অন্তরে আছে শুধুই অহংকার। তারা এ ব্যাপারে সফল হবে না। সুতরাং আল্লাহর শরণাপন্ন হও, তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা মুমিন: ৫৬)


বিজ্ঞাপন


কোরআনের হেদায়াত শুধুমাত্র মুমিনের জন্য। এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো ও সুস্পষ্ট গ্রন্থ এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শান্তির পথ দেখান, যারা তাঁর সন্তুষ্টির অনুসরণ করে এবং তাঁর অনুমতিতে তিনি তাদেরকে বের করেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর তাদেরকে সরল পথের দিকে হেদায়েত দেন।’ (সুরা মায়েদা : ১৫-১৬)

আরও পড়ুন: প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতে ‍মুমিনের ঈমান বেড়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিন তারাই, যখন তাদের কাছে আল্লাহকে স্মরণ করা হয়, তখন তাদের অন্তরসমূহ ভয়ে কেঁপে ওঠে। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে।’ (সুরা আনফাল: ২)

অবিশ্বাসী ও কপট লোকেরা মুমিনদের ঠাট্টা করে বলেছিল- কোরআন তোমাদের কার কার ঈমান বাড়াল বল তো? কাফের-মুশরিকদের এই প্রশ্নের জবাব রয়েছে এই আয়াতে— ‘আর যখন কোনো সুরা নাজিল হয়, তখন তাদের মধ্যেকার কিছু (মুশরিক) লোক বলে, এই সুরা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বৃদ্ধি করল? বস্তুত, যারা ঈমান এনেছে, এ সুরা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দ লাভ করেছে’ (সুরা তওবা: ১২৪)


বিজ্ঞাপন


হ্যাঁ এটাই চিরন্তন সত্য যে, পবিত্র কোরআন শুধুমাত্র মুমিনের হেদায়াতের জন্য। কোরআনের প্রতিটি আয়াত ও সুরা মুমিন বান্দার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। কোরআন তেলাওয়াত করার মাধ্যমে হৃদয়-মন শিহরিত হয়। আল্লাহর অসীম ক্ষমতা জানার পর ভয়ে অন্তর কেঁপে ওঠে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ সর্বোত্তম বাণী নাজিল করেছেন, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যা বারবার পাঠ করা হয়। এতে তাদের দেহ-মন শিউরে ওঠে, যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে। অতঃপর তাদের দেহমন প্রশান্ত হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। এটি হলো আল্লাহর পথনির্দেশ। এর মাধ্যমে তিনি যাকে চান পথ প্রদর্শন করেন। আর যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন, তাকে পথ দেখানোর কেউ নেই।’ (সুরা জুমার: ২৩)

আরও পড়ুন: যে ৭ দোয়া জীবন বদলে দেবে

যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, দুনিয়ার জীবনই যাদের কাছে সবকিছু, তাদেরকে কোরআন পথ দেখায় না। যারা পরকালে বিশ্বাস করে, আল্লাহকে ভয় করে তারাই হেদায়াতের উপযুক্ত। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা পরকালে বিশ্বাস করে, তারা কোরআনেও বিশ্বাস করে।’ (সুরা আনআম: ৯২) বিষয়টি অন্য আয়াতে আরো স্পষ্টভাবে এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা (কেয়ামতের দিন) আমার সাক্ষাতের ভয় করে না এবং পার্থিব জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট ও পরিতৃপ্ত থাকে, আর যারা আমার আয়াত সম্পর্কে উদাসীন, তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। এটা তাদের কৃতকর্মের জন্য।’ (সুরা ইউনুস: ৭-৮)

আর কিছু মানুষ অদূর ভবিষ্যতে আত্মপ্রকাশ করবে, যারা কোরআন পাঠ করবে ঠিকই, কিন্তু তেলাওয়াত তাদের স্বর ও কণ্ঠনালীও অতিক্রম করবে না। তারা কারা? আবু সায়িদ খুদরি (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, ‘পূর্ব এলাকা থেকে একদল লোক বের হবে। তারা কোরআন পড়বে, কিন্তু তাদের এ পাঠ তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। তারা আর ফিরে আসবে না, যে পর্যন্ত তীর ধনুকের ছিলায় ফিরে না আসে। বলা হলো, তাদের চিহ্ন কী? তিনি বললেন, তাদের চিহ্ন হল মাথা মুণ্ডন।’ (সহিহ বুখারি: ৭৫৬২)

আরও পড়ুন: কেয়ামতের যেসব আলামত পৃথিবীতে বিদ্যমান

এ বিষয়ে অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, অচিরেই আমার উম্মতের মাঝে মতভেদ হবে। যাদের মাঝে একদলের ভাষা হবে মিষ্ট, কিন্তু কাজ হবে জঘন্য। তারা কোরআন পড়বে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে, যেমন ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। আর ফিরে আসবে না, যে পর্যন্ত ধনুকের ছিলায় না আসে। যারা তাদের হত্যা করবে তাদের সাধুবাদ। তারা আল্লাহর কিতাবের দিকে আহবান করবে, কিন্তু আল্লাহর কিতাবের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। যারা তাদের হত্যা করবে তারা তাদের থেকে উত্তম হবে। সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাদের নিদর্শন কী? তিনি বললেন, ন্যাড়া মাথা। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৬৭)

হজরত সুয়াইদ বিন গাফালা থেকে বর্ণিত, আলী (রা.) বলেন, ‘...আমি রাসুলুল্লাহ(স.)-কে বলতে শুনেছি, শেষ জামানায় এক জাতি আসবে। বয়সে হবে তরুণ। বুদ্ধিতে হবে কাঁচা। তারা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কথা বর্ণনা করবে। কিন্তু তারা দ্বীন থেকে ইসলাম থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেমন ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। তাদের ঈমান তাদের কণ্ঠনালী ভেদ করে নিচে নামবে না। তোমরা তাদের যেখানে পাবে সেখানেই হত্যা করবে। কেননা যারা তাদের হত্যা করবে তারা কেয়ামতের দিন সওয়াব পাবে। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৬৯)

বস্তুত পরকাল ও অদৃশ্যে বিশ্বাসীরা অর্থাৎ মুমিন বান্দারাই কোরআন থেকে সর্বাধিক উপকৃত হয়। কোরআনের বিধানাবলীও এসেছে মুমিনদের জন্যই। ইরশাদ হয়েছে, ‘এই কোরআন পরহেজগারদের জন্য পথনির্দেশ, যারা অদৃশ্যের ওপর ঈমান আনে...’ (সুরা বাকারা: ২-৩)। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করুন। কোরআনের মর্যাদা অনুধাবন করার এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর