শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মুসলমানদের অনৈক্যের পরিণাম

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

মুসলমানদের অনৈক্যের পরিণাম

মুসলমানদের দলে দলে বিভক্ত হতে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নিষেধ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সুরা আলে ইমরান: ১০৩)

সুতরাং এই নির্দেশ মানতে হবে। বস্তুত মহান আল্লাহর একটি নির্দেশও না মানার সুযোগ মুসলমানের নেই। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দেওয়া হুকুম-আহকাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে ইমামদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সে আর মুমিন থাকবে না। মুখে ঈমানের কথা বলে অন্তরে তা অস্বীকার করাও কুফরি। আর তার শাস্তি হিসেবে ইরশাদ হয়েছে—‘যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্যতা করে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে, আল্লাহ তাকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।’ (সুরা আন-নিসা: ১৩-১৪)


বিজ্ঞাপন


যারা দ্বীনের মধ্যে মতভেদ, ফিরকা বা দল-উপদল সৃষ্টি করে, রাসুলুল্লাহ (স.) তাদের থেকে দায়মুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দ্বীনকে (বিভিন্ন মতে) খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোনো দায়িত্ব আপনার নয়।’ (সুরা আনআম: ১৫৯)

আরও পড়ুন: হিংসা-বিদ্বেষ না থাকা জান্নাতিদের গুণ

মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু ফিরকা সৃষ্টি করা যাবে না। সাহাবি ও তাবেয়িনদের যুগেও মতের মিল-অমিল ছিল, কিন্তু তাঁরা ফিরকাবন্দী হননি বা দলে দলে বিভক্ত হয়ে যাননি। কারণ, তাঁদের সকলের আনুগত্য ও আকিদার মূলকেন্দ্র ছিল এক ও অভিন্ন। আর তা হলো কোরআন-সুন্নাহ। অথচ, মুসলমনারা আজ ফিরকা সৃষ্টি তো করছেই, উপরন্তু নিজ নিজ ফিরকা নিয়ে সন্তুষ্টির ঢেকুর তুলছে। ভাবছে, শুধুমাত্র তারাই হেদায়েতপ্রাপ্ত। কোরআনে সে কথাটিও তুলে ধরা হয়েছে এভাবে—‘যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লাসিত। (সুরা রুম ৩০: ৩২)

আসলে বিভক্তি হলো নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো। সেই বিভক্তিতেই একপ্রকার শাস্তি মিশে আছে। আল্লাহ তাআলা সে বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, ‘..তোমাদের ওপর কোনো আজাব তিনি উপর থেকে বা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে অথবা বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত করে তোমাদের সবাইকে মুখোমুখি করে দিবেন এবং পরস্পরকে আক্রমণের স্বাদ আস্বাদন করাবেন।’ (সুরা আনআম: ৬৫)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: মুসলিম হয়েও জান্নাতে যাবেন না যারা

উক্ত আয়াতের বাস্তব চিত্র এখন দিবালোকের মতো পরিষ্কার। মুসলিমরা যখন নিজেদের মত নিয়ে বিভেদের রাস্তা তৈরি করেছে, তখন থেকে মুসলিম বিশ্ব রাজত্ব হারাতে শুরু করেছে। জুলুম, নির্যাতন ও নিপীড়নে নিপতিত হয়েছে।

সুতরাং দল-উপদল করে আল্লাহর হুকুমের অবাধ্য হওয়া যাবে না, সাধারণ মুসলমানদেরকে দ্বিধায় ফেলা যাবে না, ফেতনা সৃষ্টি করা যাবে না। বর্তমানে আল্লাহ তাআলার এই বড় হুকুমটির উপেক্ষা চলছে। তাই অশান্তিও সম্মিলিতভাবে গ্রাস করছে। মুসলমানদের মধ্যে বিভিন্ন মতের মানুষ থাকবে। আল্লাহ সব জেনেই ঘোষণা দিয়েছেন যে মুসলিম হিসেবে এক হও। তাই মহান প্রভুকে সন্তুষ্ট করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। আর তাঁরই পছন্দ-অপছন্দ অনুযায়ী মুমিন মুসলমানদের জীবন যাপন করা জরুরি।

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, আল্লাহ তাআলা তিন কাজে তোমাদের প্রতি খুশি হন, আবার তিনটি কাজ অপছন্দ করেন। যে তিনটি কাজে খুশি হন তা হলো- ১. আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা। ২. আল্লাহর রশিকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরা এবং দলে দলে বিভক্ত না হওয়া। ৩. দায়িত্বশীলদের কল্যাণ কামনা করা।

আর যে তিনটি কাজ তিনি অপছন্দ করেন তা হলো- ১. অনর্থক কথা-বার্তা বলা। ২. সম্পদ নষ্ট করা এবং ৩. বেশি বেশি প্রশ্ন করা। (সহিহ মুসলিম: ৪৫৭৮; মুসনাদে আহমদ: ৮৭৯৯)

তাই সবাই মিলে একই কাতারে আবদ্ধ হয়ে তাঁরই দাসত্ব করতে হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘এই যে তোমাদের জাতি, এ তো একই জাতি, আর আমি তোমাদের পালনকর্তা, অতএব তোমরা (ঐক্যবদ্ধভাবে) আমারই দাসত্ব করো।’ (সুরা তাওবা: ৯২)

আরও পড়ুন: মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করার সওয়াব

মুসলিম সমাজে প্রায়ই পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার কুফল নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়, বস্তুত তারও আগে যেটি আলোচনা করা উচিত, সেটি হচ্ছে- মুসলমানদের পরস্পর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ যিনি দিয়েছেন, তিনি কে? কার নির্দেশকে উপেক্ষা করে নিজ দলে আহ্বান করছেন উপদলের নেতারা। অথচ নিজের ‘মুসলমান’ পরিচয়টাই উম্মাহর সবচেয়ে বড় পরিচয় হওয়া উচিত ছিল। এজন্যই তো আল্লাহ তাআলা এক মুমিনকে অন্য মুমিনের ভাই বানিয়েছেন। বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।’ (সুরা হুজরাত: ১০)

জাহেলি যুগে আউস ও খাজরাজ গোত্রদ্বয়ের মধ্যে যুদ্ধ, রক্তক্ষয়ী বিগ্রহ ও কঠিন শত্রুতা ছিল। অতঃপর যখন গোত্রদ্বয় ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়, তখন আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহে তারা পূর্বের সবকিছু ভুলে গিয়ে ভাই-ভাইয়ে পরিণত হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা সেই অনুগ্রহের কথা স্মরণ করে দিয়ে বলেন—‘তিনি তোমাকে স্বীয় সাহায্য ও মুমিনদের দ্বারা শক্তিশালী করেছেন এবং তিনি তাদের পরস্পরের হৃদয়ের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন। পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ ব্যয় করলেও তুমি তাদের হৃদয়ে প্রীতি স্থাপন করতে পারতে না; কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন।’ (সুরা আনফাল: ৬২-৬৩)

অতএব ইসলামের নামে দল-উপদল সৃষ্টি না করে ঐক্যবদ্ধ হওয়া মুসলিম উম্মাহর একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার কঠিন গুনাহ থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর