সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কোরআনে প্রশস্ত অন্তরের মানুষের প্রশংসা

প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:২১ পিএম

শেয়ার করুন:

কোরআনে প্রশস্ত অন্তরের মানুষের প্রশংসা

মানুষ সাধারণত নিজের সুবিধাটিই পছন্দ করে। কিন্তু ইসলামের শিক্ষা হলো—মুমিন তার মুমিন ভাইয়ের কল্যাণকামী হবে। ভাইয়ের কীভাবে উপকার করা যায়, সেই চিন্তা করবে। এমনকি নিজের ওপর ভাইকে অগ্রাধিকার দেবে। যেটি ভ্রাতৃত্বের চূড়ান্ত পর্যায়। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এ ধরনের মুমিনের প্রশংসা করেছেন। 

মদিনার আনসারদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা (আনসারি সাহাবি) তাদের কাছে যারা হিজরত করে এসেছে তাদের ভালোবাসে এবং মুহাজিরদের যা দেওয়া হয়েছে তার জন্য তারা অন্তরে কোনো হিংসা অনুভব করে না, আর তারা (আনসারি সাহাবি) তাদের (মুহাজিরদের) নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও। আসলে যাদের অন্তরের কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম।’ (সুরা হাশর: ০৯)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: সালফে সালেহিন কারা, এত মর্যাদা কেন তাঁদের?

মুহাজিররা বাইরের মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণে আল্লাহ আনসার সাহাবিদের প্রশংসা করেছেন। কেননা কেউ কারো জন্য সাধারণত এরকম ত্যাগ করে না। এসব ক্ষেত্রে দেশি ও ভিনদেশির প্রশ্নও বড় একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আনসাররা মুহাজিরদের শুধু স্থানই দেননি; বরং নিজ নিজ ঘর শেয়ার করেছেন, নিজেদের ধন-সম্পদে অংশীদার করেছেন। এমনকি মুহাজিরদের জায়গা দেওয়ার জন্য তারা প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এজন্য কিছু আনসারি আবেদন পর্যন্ত করেছেন। শেষ পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে এর নিষ্পত্তি করতে হয়েছে। (ইবনে কাসির, ফাতহুল কাদির ও বাগাভি)

এ ঘটনা থেকে জানা যায়, প্রকৃত ইসলামি শিক্ষায় গড়ে ওঠা সমাজ নিঃস্বার্থ হতে শেখায়, অন্যকে অগ্রাধিকার দিতে শেখায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যা ভালোবাসো তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত কখনো সওয়াব অর্জন করবে না। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবগত।’ (সুরা আলে ইমরান: ৯২)

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করবে, যা নিজের জন্য পছন্দ করে। (সহিহ বুখারি: ১২)


বিজ্ঞাপন


মনে কার্পণ্য থাকলে অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া অসম্ভব একটি ব্যাপার। রাসুল (স.) মহান আল্লাহর কাছে সর্বদা কৃপণতা থেকে আশ্রয় চাইতেন। (আবু দাউদ: ১৫৪০)। তিনি বলতেন, মুমিন কখনো কৃপণ হতে পারে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তির চরিত্রে কৃপণতা, ভীরুতা ও হীন মানসিকতা রয়েছে সে খুবই নিকৃষ্ট। (আবু দাউদ: ২৫১১)

আরও পড়ুন: অপচয় ও কৃপণতার মাঝামাঝি অবস্থাটি উত্তম

পক্ষান্তরে মনে প্রশস্ততা থাকলে মানুষ নিজের অভাব থাকা সত্ত্বেও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে। কোনো প্রতিদানের আশা ছাড়াই। কোরআনের বর্ণনায় এর প্রতিদান জান্নাত ছাড়া অন্যকিছু নয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকিন, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে এবং বলে, শুধু আল্লাহর সস্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে আমরা তোমাদের খাবার দান করি, আমরা তোমাদের কাছ থেকে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয়। নিশ্চয়ই আমরা আশঙ্কা করি আমাদের রবের কাছ থেকে এক ভীতিকর ভয়ংকর দিনের। পরিণামে আল্লাহ তাদের রক্ষা করবেন সে দিনের অনিষ্ট থেকে এবং তাদের প্রদান করবেন হাস্যোজ্জ্বলতা ও উৎফুল্লতা। আর তাদের ধৈর্যের পুরস্কারস্বরূপ তিনি তাদের প্রদান করবেন উদ্যান ও রেশমি বস্তু। সেখানে তারা হেলান দিয়ে আসীন থাকবে সুসজ্জিত আসনে, তারা সেখানে খুব গরম অথবা খুব শীত দেখবে না। আর তাদের ওপর সন্নিহিত থাকবে গাছের ছায়া এবং তার ফলমূলের থোকাসমূহ সম্পূর্ণরূপে তাদের আয়ত্তাধীন করা হবে। আর তাদের ওপর ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হবে রৌপ্যপাত্রে এবং স্ফটিক-স্বচ্ছ পানপাত্রে, রুপার স্ফটিক পাত্রে, তারা তা পরিমাণ করবে সম্পূর্ণ-পরিমিতভাবে।’ (সুরা দাহার: ৮-১৬)

অতএব মুমিনের উচিত, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মনকে কৃপণতামুক্ত করা, অন্যের উপকার করার চেষ্টা করা। অভাব থাকলেও অন্যকে প্রাধান্য দিতে পারা সফল মুমিনের চরিত্র। বিশেষ করে সংকটময় মুহূর্তে সামর্থ্য অনুযায়ী সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করা ইসলামি মূল্যবোধের অংশ। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (স.) বলেছেন, দুজনের খাদ্য তিনজনের জন্য যথেষ্ট এবং তিনজনের খাদ্য চারজনের জন্য যথেষ্ট।’ (বুখারি: ৫৩৯২)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পরোপকারী, কল্যাণকামী ও প্রশস্ত অন্তরের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর