সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

অপচয় ও কৃপণতার মাঝামাঝি অবস্থাটি উত্তম

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০২:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

অপচয় ও কৃপণতার মাঝামাঝি অবস্থাটি উত্তম

অপচয় না করা একটি উত্তম আমল। কেননা আল্লাহ তাআলা অপচয়কারীকে ভালোবাসেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বনি আদম, তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও, খাও ও পান করো এবং অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আরাফ: ৩১)। ইসলামে অপচয় ঘৃণিত বিষয়। অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই আখ্যা দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ২৭)

পরকালে মহান আল্লাহর সামনে প্রত্যেককে নিজ সম্পদের হিসাব দিতে হবে, সম্পদ কোথা থেকে সে উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে। রাসুল (স.) বলেন, ‘কেয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসিত না হওয়া পর্যন্ত আদম সন্তানের দুই পা তার রবের কাছ থেকে এতটুকুও নড়বে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, কীভাবে তা অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কী কাজে তা বিনাশ করেছে? তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা থেকে তা উপার্জন করেছে এবং কোথায় তা ব্যয় করেছে? আর সে যতটুকু জ্ঞানার্জন করেছিল সে অনুযায়ী আমল করেছে কি না।’ (তিরমিজি: ২৪১৬)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের মুসলমানরা কেমন আছেন

আবার কৃপণতাও মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। একদা রাসুল (সা.) ভাষণ দেন এবং বলেন, ‘তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা কৃপণতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অর্থলোভ তাদের কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে তারা কৃপণতা করেছে, তাদের আত্মীয়তা ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে, তখন তারা তা-ই করেছে এবং তাদের পাপাচারে প্ররোচিত করেছে, তখন তারা তাতে লিপ্ত হয়েছে।’ (আবু দাউদ: ১৬৯৮)

রাসুল (স.) মহান আল্লাহর কাছে সর্বদা কৃপণতা থেকে আশ্রয় চাইতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অক্ষমতা, অলসতা, ভীরুতা, কৃপণতা ও বার্ধক্য থেকে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি থেকে এবং আশ্রয় চাই জীবন ও মরণের বিপদাপদ থেকে।’ (আবু দাউদ: ১৫৪০)। তিনি বলতেন, মুমিন কখনো কৃপণ হতে পারে না। যে ব্যক্তির চরিত্রে এই অভ্যাস থাকবে সে-ই নিকৃষ্ট মানুষ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তির চরিত্রে কৃপণতা, ভীরুতা ও হীন মানসিকতা রয়েছে সে খুবই নিকৃষ্ট। (আবু দাউদ: ২৫১১)

আরও পড়ুন: অমুসলিমদের ওপর হামলা ইসলাম সমর্থন করে না 


বিজ্ঞাপন


অপচয় ও কৃপণতা থেকে বাঁচার সবচেয়ে বড় উপায় হলো মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে উদ্বুদ্ধ করে ইসলাম। মধ্যপন্থা হলো অপচয় ও কৃপণতার মাঝামাঝি অবস্থা। এতেই সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ঈমানদার বান্দাদের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে বলেন, ‘তারা যখন ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না এবং কৃপণতাও করে না; বরং তারা এতদুভয়ের মধ্যবর্তী অবস্থায় থাকে।’ (সুরা ফুরকান: ৬৭)

শুধু ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন নয়; বরং কথাবার্তা, হাঁটা-চলায়ও মধ্যপন্থার নির্দেশনা রয়েছে ইসলামে। ইরশাদ হয়েছে, ‘পদচারণে মধ্যবর্তিতা অবলম্বন করো এবং কণ্ঠস্বর নিচু করো।’ (সুরা লোকমান: ১৯)

সবক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি ত্যাগ করে ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যপন্থা অবলম্বনের শিক্ষা দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনুল কারিমে মুসলমানদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘এমনিভাবে আমি তোমাদের মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি।’ (সুরা বাকারা: ১৪৩)

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ইসলাম এসেছে নবীজির যুগে

মিতব্যয়ী হলে মহান আল্লাহ দারিদ্রমুক্ত জীবন দান করবেন—এমনটিই রাসুল (স.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরিমিত ব্যয় করে সে নিঃস্ব হয় না’ (মুসনাদে আহমদ: ৭/৩০৩)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি অর্থব্যয়ে পরিমিতিবোধের চর্চা করবে, অনটন তার নাগাল পাবে না। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অপচয়ের গুনাহ থেকে এবং কৃপণতা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। সবসময় মধ্যপন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর