ইসলামে নবী ইয়াকুব (আ.)-এর বংশধরদের বনি ইসরাইল বলা হয়। তারা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত ইব্রাহিম (আ.)-এর বংশধরদের একটি শাখা। এ শাখারই একটি অংশ পরবর্তীকালে নিজেদের ইহুদি নামে পরিচয় দিতে থাকে। হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর এক পুত্রের নাম ছিল ইয়াহুদা। সেই নামের অংশবিশেষ থেকে ‘ইহুদি’ নামকরণ করা হয়েছিল। (তাফসিরে মাওয়ারদি: ১/১৩১)
যুগে যুগে তাদের অপকর্ম ও ঐতিহাসিক শাস্তির কথা রয়েছে পবিত্র কোরআনে। ইহুদি জাতি নিয়ে বেশি কষ্টে ভুগেছেন নবী হজরত মুসা (আ.)। কোরআনের বহু জায়গায় এর বিশদ বর্ণনা এসেছে। সুরা বাকারার শুরুর দিকে ইহুদি জাতির ওপর আল্লাহর রহমত এবং প্রায় ১২টি কুকর্ম ও এর শাস্তির বিবরণ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আল্লাহ তাদের মিসরের ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা করার পর মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত আনার জন্য গেলে তারা গরুর বাছুরের পূজা আরম্ভ করে। আল্লাহ তাদেরকে এর শাস্তি দিয়ে ক্ষমা করার পর আবার তারা বায়না করে বসে আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখার জন্য। এজন্য তাদের ওপর ফেরেশতার মাধ্যমে তুর পাহাড় উঠিয়ে শাস্তির ভয় দেখানো হয়। মুসা (আ.)-এর দোয়ায় তাদের জন্য কুদরতি খাবারের ব্যবস্থা করা হলে তারা অকৃতজ্ঞ হয়ে তা খেতে অস্বীকার করে। কখনো তারা মুসা (আ.)-এর ওপর খারাপ অসুস্থতা ও ব্যভিচারের অপবাদ দেয়। এভাবে মুসা (আ.) আজীবন তাদের নিয়ে কষ্ট করেন।
আরও পড়ুন: বনি ইসরাইলের অবাধ্য স্বভাব ও ৪০ বছর অবরুদ্ধ থাকার ঘটনা
হজরত দাউদ (আ.) প্রতি শনিবার আল্লাহর কিতাব জবুর পাঠ করতেন, ওই সময় সমুদ্রের মাছও কিনারে এসে তাঁর তেলাওয়াত শুনত। কিন্তু ইহুদিরা ওই সময় মাছগুলো ধরে নিত। আল্লাহর পক্ষ থেকে ওই দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ হলে তারা আল্লাহর বিধানেও তাদের কূটবুদ্ধির অবতারণা করে, তারা শনিবার মাছ ঘেরাও করে রেখে রবিবার তা ধরত। আল্লাহ এর শাস্তিস্বরূপ তাদের একদলকে বানরে পরিণত করেন। তিন দিনের মাথায় ওই বানরের দল সব মারা যায়। (সুরা বাকারা: ৪৯-৭৩)
ইহুদি জাতি হজরত সুলাইমান (আ.)-এর ওফাতের পর পারস্পরিক বিভক্তি এবং ধর্মদ্রোহিতা ও কুকর্মের পথ অবলম্বন করে। কোনো কোনো নবী এসে আল্লাহর নির্দেশে ইহুদিদের এ ধরনের কার্যকলাপের শোচনীয় পরিণাম সম্পর্কে সতর্কবাণী শোনালেও তারা তাঁর কথা না মেনে উল্টো নবীর সঙ্গে বিদ্রোহ করে। তখন আল্লাহর গজব হিসেবে তাদের ওপর মিসরের জনৈক সম্রাট চড়াও হয়ে ব্যাপক হত্যা ও লুণ্ঠন চালায়।
বিজ্ঞাপন
এরপর কিছুদিন তারা মোটামুটি ভালোভাবে চলে, কিন্তু তাদের উপাদানগত কুপ্রবৃত্তি তাদের ভালো থাকতে দেয়নি। তারা খোদাদ্রোহিতার বশবর্তী হয়ে মূর্তিপূজা আরম্ভ করে। হজরত ইলিয়াস (আ.) ইহুদিদের পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। তিনি ইহুদিদের বিরাগভাজন হয়ে নির্যাতনের শিকারই শুধু হননি, তারা তাঁকে হত্যার জন্যও উদ্ধত হয়। পরিণামে আবার তাদের ওপর মিসরের জনৈক সম্রাট চড়াও হয়ে হত্যা ও লুণ্ঠন চালায়। তারপর অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়।
অতঃপর আবার অপকর্মে জড়িয়ে পড়লে তাদের ওপর বাবেল সম্রাট বুখতে নসর চড়াও হয়। সম্রাট বায়তুল মাকদিসে আক্রমণ চালিয়ে মসজিদে আকসা ধ্বংস করে দেয়। হত্যাযজ্ঞ ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে শহরটি উজাড় করে দেয়। এরপর ইহুদিরা বায়তুল মাকদিস থেকে নির্বাসিত হয়ে বাবেলে স্থানান্তরিত হয়। সেখানে চরম লাঞ্ছনা ও দুর্গতির মধ্যে ৭০ বছর পার করে। অতঃপর জনৈক ইরান সম্রাট বাবেল দখল করে ইহুদিদের ওপর দয়াপরবশ হয়ে তাদের আবার সিরিয়ায় পৌঁছে দেয়।
আরও পড়ুন: বানর কি বনি ইসরাইলের বিকৃত মানুষগুলোরই বংশধর?
অতঃপর ঈসা (আ.)-এর জন্মের ১৭০ বছর আগে আবার তারা পাপে লিপ্ত হলে আন্তাকিয়ার সম্রাট তাদের ওপর চড়াও হয়ে ৪০ হাজার হত্যা করে এবং ৪০ হাজার বন্দি করে। সম্রাট মসজিদে আকসারও অবমাননা করে। এর অনেক বছর পর বায়তুল মাকদিস রোম সম্রাটের দখলে চলে গেলে সে ইহুদিদের সাহায্য করে। এর আট বছর পর ঈসা (আ.)-এর জন্ম হয়।
এভাবে বারবার ইহুদি রাজ্যের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছলেও এরা আল্লাহর নাফরমানি করতে থাকে। নবীগণ তাদের সতর্ক করলে তারা ওই নবীদের হত্যা করতে থাকে। (তাফসিরে বয়ানুল কোরআন: ২/৩৬৭-৩৬৮)
হজরত ইয়াহইয়া (আ.) ইহুদিদের অশ্লীল কার্যকলাপের বিরোধিতা করলে তারা তাঁকে দ্বিখণ্ডিত করে কতল করে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, বনি ইসরাইল ৩০০ আল্লাহর নবীকে হত্যা করেছে। (তাফসিরে ইবনে আবি হাতেম: ১/১২৬)
বর্তমান বিশ্বে ইহুদি জাতির ষড়যন্ত্র ও অপকর্মের ইতিহাস সর্বজনবিদিত। ইসরাইল পৃথিবীর একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র। ইউরোপ থেকে বহিষ্কৃত এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদি নিধনযজ্ঞের পর তারা ১৯২০ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে ইউরোপ থেকে পালিয়ে ফিলিস্তিনে ঠাঁই নেয়। সেখানে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিনিয়তই মুসলমানদের জমি দখল করেছে এবং অবৈধভাবে গড়ে তুলেছে স্থাপনা। এভাবে ভূখণ্ড দখলের মধ্যদিয়ে তারা রাষ্ট্র গঠন করে। নিজেদের আগ্রাসন টিকিয়ে রাখতে দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের নির্যাতন করে চলেছে অদ্যাবধি।
কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, ইহুদিরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী জাতি। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, যখনই তারা যুদ্ধের আগুন জ্বালায়, আল্লাহ তা নিভিয়ে দেন এবং তারা জমিনে ফিতনা ফাসাদ ও গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। আল্লাহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের ভালোবাসেন না। (সুরা মায়েদা: ৬৪) ‘...তারা ছিল নাফরমান ও সীমা লঙ্ঘনকারী।’ (সুরা বাকারা: ৬১)
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন নিয়ে কোরআন-হাদিসের অমূল্য বাণী
এই অভিশপ্তরা জাকারিয়া (আ.)-কে হত্যা করেছে। ইয়াহইয়া (আ.)-কে হত্যা করেছে। ঈসা (আ.)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে। কতবার চেষ্টা করেছে আমাদের প্রিয়নবী (স.)-কে হত্যা করতে! খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দেওয়ার ঘটনা কি ইতিহাস ভুলে যাবে? নবীজি মৃত্যুশয্যায় বলেছিলেন, ‘খাইবারের সেই বিষাক্ত খাবার আমাকে আজও পীড়া দিয়ে যায়। এই তো আমার ধমনি বন্ধ হওয়ার সময় চলে এসেছে!’
আল্লাহ তাআলা নবী-রাসুলদের প্রহি তাদের অহংকার ও কুকর্মের কথা তুলে ধরে বলেছেন, ‘তবে কি যখনই কোনো রাসুল তোমাদের কাছে এমন কিছু নিয়ে এসেছে যা তোমাদের মনঃপূত নয়। তখনই তোমরা দাম্ভিকতা প্রকাশ করেছ এবং কতককে অস্বীকার করেছ, আর কত কে হত্যা করেছ?’ (সুরা বাকারা: ৮৭)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘বলো, যদি তোমরা মুমিন হতে, তবে অতীতে কেন আল্লাহর নবীদের হত্যা করেছিলে?’ (সুরা বাকারা: ৯১)
বিকৃত ‘তালমুদ’ তাদের শিক্ষা দেয় নবীরা হলেন বিশ্বাসঘাতক, খুনি, নেশাগ্রস্ত ও প্রতারকদের একটি দল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের মুখনিঃসৃত বাক্যও কী সাংঘাতিক! তারা শুধু মিথ্যা বলে।’ (সুরা কাহফ: ৫)
মূলত এই ঘৃণ্য জাতীর অন্তরে আল্লাহ মোহর এঁটে দিয়েছেন। ফলে সেগুলো হয়ে পড়েছে কালো, রুগ্ন। পাথরের মতো শক্ত কিংবা তার চেয়েও পাষাণ্ড। ‘তারা বলে, আমাদের হৃদয় আচ্ছাদিত। বরং কুফুরির জন্য আল্লাহ তাদের লানত করেছেন। সুতরাং অল্পসংখ্যকই ঈমান আনে।’ (সুরা বাকারা: ৮৮)
আরও পড়ুন: সিরিয়া-ফিলিস্তিন-ইয়েমেনের জন্য যে দোয়া করেছেন নবীজি
তাদের অন্তরজুড়ে হিংসা-বিদ্বেষের বসবাস। সারাক্ষণ অন্যের ক্ষতি করার ফন্দি আঁটতে ব্যস্ত। অন্যকে কষ্ট দিতে পারলেই সে আগুন কিছুটা প্রশমিত হয়! তাই তো দেখা যায়, তারা শুধু দাঙ্গা-হাঙ্গামার শিখা জ্বালাতে ব্যস্ত। পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোই যেন তাদের একমাত্র মহাকর্ম। আল্লাহ বলেন, ‘যতবার তারা যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিত করে ততবার আল্লাহ তা নির্বাপিত করেন এবং তারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে বেড়ায়। আর আল্লাহ পছন্দ করেন না বিশৃঙ্খলাকারীদের।’ (সুরা মায়েদা: ৬৪)
তারা নিজেদের মনে করে আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত একমাত্র শ্রেষ্ঠ জাতি। শুধু তাই নয়; ‘তারা বলে, ইহুদি-খ্রিষ্টান ছাড়া অন্য কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সুরা বাকারা: ১১১)। কারণ, তাদের মতে, ‘তারা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়জন’ (নাউজুবিল্লাহ)।
অন্যান্য জাতি তাদের দৃষ্টিতে একেবারেই হীন ও নিকৃষ্ট। তাই অন্য কাউকে তারা নিজেদের ধর্মের প্রতি আহ্বান করে না। বরং তারা অন্যদের চতুষ্পদ জন্তু মনে করে তাদের ধন-সম্পদ নিজেদের জন্য বৈধ করে নেয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘এটা এজন্য যে, তারা বলে রেখেছে, উম্মিদের অধিকার বিনষ্ট করাতে আমাদের কোনো পাপ নেই।’ (সুরা আলে ইমরান: ৭৫)
তারা হারামকে হালাল সাব্যস্ত করে। ক্রয়-বিক্রয়ে চতুরতার আশ্রয় নেয়। নির্দ্বিধায় সুদ ভক্ষণ করে। আল্লাহ বলেন, ‘এবং (তারা যে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল তা ছিল) তাদের সুদ গ্রহণের জন্য। যদিও তা তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং অন্যায়ভাবে মানুষের ধন-সম্পদ হ্রাস করার জন্য। তাদের মধ্যে যারা কাফের, তাদের জন্য আমি মর্মন্তুদ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি।’ (সুরা নিসা: ১৬১)
দুনিয়ার লোভে তারা আসমানি বিধিবিধানেও বিকৃতি সাধন করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা আল্লাহর আয়াতগুলো তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে।’ (সুরা তাওবা: ৯) এদের রক্তে-মাংসে মিশে গেছে মিথ্যা আর প্রতারণা। আল্লাহ বলেন, ‘তারা মিথ্যা শ্রবণে অত্যন্ত আগ্রহশীল এবং অবৈধ ভক্ষণে অতি আসক্ত।’ (সুরা মায়েদা: ৪২)। প্রতিশ্রুতি, চুক্তি ও নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই তাদের অভিধানে। আল্লাহ বলেন, ‘তবে কি যখনই তারা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে, তখনই তাদের কোনো একদল তা ভঙ্গ করেছে।’ (সুরা বাকারা: ১০০)
আরও পড়ুন: মসজিদুল আকসা নিয়ে নবীজির মোজেজা
তাদের এই বিশ্বাসঘাতকতার ধারা একদিনের নয়, বরং তা চলে আসছে যুগযুগ ধরে, বংশ পরম্পরায়। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করছেন, ‘আপনি সর্বদা তাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত সবাইকেই বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখবেন।’ (সুরা মায়েদা: ১৩)
তারা ভীতু। নারী কিংবা দুর্বলদের ওপরই তাদের ক্ষমতা ও দাপট সীমাবদ্ধ। প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হওয়ার সৎসাহস নেই তাদের। আল্লাহ বলেন, ‘তারা সংঘবদ্ধভাবেও তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবে না। তারা যুদ্ধ করবে শুধু সুরক্ষিত জনপদে অথবা দুর্গপ্রাচীরের আড়াল থেকে। তাদের পারস্পরিক যুদ্ধই প্রচণ্ড হয়ে থাকে। আপনি তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ মনে করেন; কিন্তু তাদের অন্তর শতধাবিচ্ছিন্ন। এটা এ কারণে যে, তারা এক কাণ্ডজ্ঞানহীন সম্প্রদায়।’ (সুরা হাশর: ১৪)
ইহুদিদের সম্পর্কে উল্লেখিত এসব তথ্য রূপকথার গল্প নয়। তাদের কুকর্মের টুকরো অংশ মাত্র। যা বর্ণনা করেছেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা মহান রাব্বুল আলামিন। তাদের ব্যাপারে আল্লাহর চেয়ে ভালো কে জানতে পারে?
আজ অবধি তাদের চরিত্রে এতটুকু পরিবর্তন আসেনি। তারা যেমন ছিল, তেমনি আছে। যতদিন বিকৃত ‘তালমুল’ তাদের চালিকাশক্তি হয়ে কাজ করবে, ততদিন পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনাও নেই। ইহুদি জাতির প্রধান চালিকাশক্তি হলো তাদের বিকৃত ধর্মগ্রন্থ ‘তালমুদ’। এটি তাওরাতের মতো নয়, শুধু ইহুদিদের মৌখিক আইন হিসেবে পরিচিত। এতে তারা নিজেদের সুবিধামতো বিধি-বিধান প্রণয়ন করেছে। ‘তালমুদ’ তার অনুসারীদের ভ্রষ্টতার সুদূর প্রান্তরে নিক্ষেপ করেছে। তাদের অন্তরে বপন করে দিয়েছে আমিত্ব ও দাম্ভিকতার আত্মঘাতী বীজ।
তারা আল্লাহর সত্তার ব্যাপারে বিকৃতির শিকার। মহান আল্লাহর ব্যাপারে তাদের বক্তব্য এমন জঘন্য, যার কারণে আকাশমণ্ডলী বিদীর্ণ হয়। পৃথিবী খণ্ডবিখণ্ড হয়ে পড়ে। পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। তারা বিশ্বাস করে, উযাইর (আ.) আল্লাহর পুত্র। (নাউজুবিল্লাহ)। আল্লাহ বলেন ‘ইহুদিরা বলে, উযাইর আল্লাহর পুত্র। এবং খ্রিষ্টানরা বলে, মাসিহ আল্লাহর পুত্র।’ (সুরা তওবা: ৩০)
তাদের অতীত ও বর্তমানের চিত্র অভিন্ন। নবীযুগে হুআই ইবনে আখতাব বলেছিল, ‘মুহাম্মদের সঙ্গে আমার শত্রুতা চলবে আমৃত্যু।’ এই উম্মতের একটা বিষাক্ত বিষফোঁড়া ছিল আবদুল্লাহ ইবনে সাবা। অতীতে ইহুদিরাই তাকে জন্ম দিয়েছে। ফেতনার এমন আগুন সে উস্কে দিয়েছিল, যা উসমান (রা.) এর প্রাণ হরণ করে তবেই ক্ষান্ত হয়েছে!
অতীতে তারাই বিশ্বযুদ্ধের আগুন জ্বালিয়েছে। উসমানি খেলাফতের পতন ডেকে এনেছে! এতসবের পরও আজকের ইহুদিরা কীভাবে সাধু হতে পারে? তারা তো নিকৃষ্ট পূর্বসূরির নিকৃষ্ট উত্তরসূরি! আজ পুরোনো সেই বিদ্বেষেরই পুনঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে তারা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘শত্রুতাপ্রসূত বিদ্বেষ তাদের মুখ ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশি জঘন্য।’ (সুরা আলে ইমরান: ১১৮)