অনেককে বলতে শোনা যায়- সুন্দর মসজিদ নির্মাণ করা কেয়ামতের আলামত। বাস্তবে এটি সঠিক কথা নয়। বরং মসজিদ তৈরি করা, মসজিদকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখা মুসল্লিদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করতে, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং সুবাসিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। (তিরমিজি: ৫৯৪)
তবে হ্যাঁ, মসজিদকে অতিরিক্ত কারুকার্যময় করা এবং মুসল্লি কম সত্ত্বেও লোক দেখানোর জন্য এবং অন্যদের সামনে অহংকার করার জন্য বিশাল বিশাল চোক ধাঁধানো মসজিদ নির্মাণ করা কেয়ামতের আলামত। যা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর একাধিক বিশুদ্ধ হাদিস থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়।
বিজ্ঞাপন
হজরত আনাস বিন মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত লোকেরা মসজিদের সৌন্দর্য ও সুসজ্জিতকরণ নিয়ে পরস্পর গর্ব না করবে ততক্ষণ কেয়ামত সংঘটিত হবে না।’ (মুসনাদে আহমদ: ১২৩৭৯, সুনানে দারামি: ১৪৪৮, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৭৩৯, সুনানে আবু দাউদ: ৪৪৯)
আরও পড়ুন
মসজিদ নির্মাণের ফজিলত
ইসলামে মসজিদ পরিচ্ছন্নকারীর মর্যাদা
হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন তোমরা কোরআনে কারিমকে সুসজ্জিত করবে এবং মসজিদগুলোকে কারুকার্যমণ্ডিত করবে, তখন তোমাদের অবনতি এবং ধ্বংস অনিবার্য হবে। (যুহদু ওয়ার রাক্বায়েক লিইবনুল মুবারক: ৭৯৭; মুসন্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৮৭৯৯; কাশফুল খাফা: ২৪২)
বিজ্ঞাপন
হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘যখন কোনো জাতি মসজিদকে কারুকার্যমণ্ডিত করতে থাকবে, তখন তাদের আমল নষ্ট হবে।’ (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক: ৫১৩৪)
হজরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কোনো জাতির অপরাধ বেড়ে যায়, তখন তাদের মসজিদগুলো অত্যন্ত সুন্দর সুন্দর করে বানানো হয়। আর মসজিদগুলোকে একমাত্র দাজ্জাল আত্মপ্রকাশের সময়ই সৌন্দর্যমণ্ডিত করে বানানো হবে। (আসসুনানুল ওয়ারিদা ফিলফিতান লিদদানি: ৪১৬)
আরও পড়ুন: কেয়ামতের যেসব আলামত পৃথিবীতে বিদ্যমান
ইমাম বুখারি (রহ) আনাস (রা.) হতে বর্ণনা করে বলেন, ‘লোকেরা মসজিদ নিয়ে গর্ব করবে, কিন্তু ইবাদতের মাধ্যমে তা আবাদ করবে না।’ (বুখারি, কিতাবুস্ সালাত) ওমর (রা.) মসজিদকে জাঁকজমক করতে নিষেধ করেছেন। (ফাতহুল বারি: ১/৫৩৯)
মোটকথা আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের মাধ্যমে মসজিদ আবাদ করতে হবে। মসজিদকে অপ্রয়োজনীয় কারুকার্যমণ্ডিত করা, লোক দেখানোর জন্য বা অন্যদের সামনে অহংকার করার নিমিত্তে মসজিদ নির্মাণ করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যেকোনো রকম বাড়াবাড়ি পরিহার করার এবং কোরআন-সুন্নাহর প্রকৃত অনুসারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

