মসজিদ আল্লাহর ঘর। মুসলিম সমাজের প্রাণকেন্দ্র। রাসুল (স.) হিজরতের প্রথম দিনই মসজিদ নির্মাণের কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন। মদিনায় হিজরতের সময় যাত্রাবিরতিকালে তিনি কুবা নামক স্থানে ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। পরে মদিনায় পৌঁছে মসজিদ-ই-নববী স্থাপন করেন। মসজিদকে তিনি পৃথিবীর সর্বোত্তম স্থান বলেছেন।
মহানবী (স.) বলেন, ‘..আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘পৃথিবীর নিকৃষ্টতর স্থান বাজার এবং উৎকৃষ্টতর স্থান মসজিদ।’ (ইবনু হিববান, ১৫৯৯; মেশকাত: ৭৪১, পৃ-৭১)
মসজিদ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণকারীদের মহান আল্লাহ খুব পছন্দ করেন। এটি হেদায়াতপ্রাপ্ত বান্দাদের নিদর্শন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদের আবাদ করবে, যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি, সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা তাওবা: ১৮)
আরও পড়ুন: যে শহর প্রাচীন মসজিদের
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারি: ৪৫০)
মসজিদ নির্মাণের পাশাপাশি এর রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন রাসুল ( স.)। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আমার উম্মতের সওয়াব (ইবাদতের প্রতিদান) আমার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে, এমনকি মসজিদ থেকে কারো ময়লা-আবর্জনা দূর করার সওয়াবও। অন্যদিকে আমার উম্মতের গুনাহও আমাকে দেখানো হয়েছে। আমি তাতে কোরআনের কোনো সুরা বা আয়াত শেখার পর তা ভুলে যাওয়ার চেয়ে বড় গুনাহ আর দেখিনি। (আবু দাউদ: ৪৬১)
বিজ্ঞাপন
মসজিদকে অপবিত্র করা, ময়লাযুক্ত করা কিংবা দুর্গন্ধযুক্ত করার অধিকার কারো নেই। জাবির ইবনে আবুদুল্লাহ (রা.) থেকে বলেন, নবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ রসুনজাতীয় উদ্ভিদ খাবে, কোনো কোনো সময় তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি পেঁয়াজ, রসুন বা মুলা খাবে সে যেন আমার মসজিদের কাছেও না আসে। কেননা মানুষ যেসব জিনিসের মাধ্যমে কষ্ট পায় ফেরেশতারাও সেসব জিনিসের মাধ্যমে কষ্ট পায়।’ (মুসলিম: ১১৪১)
আরও পড়ুন: যেভাবে মসজিদের শহর হয়ে উঠল ঢাকা
মসজিদ সব সময় পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় রাখতে হবে। এই দায়িত্ব সবার। নবীজিও এই দায়িত্ব পালন করেছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (স.) কেবলার দিকের দেয়ালে নাকের শ্লেষ্মা, থুথু কিংবা কফ দেখলেন এবং তা পরিষ্কার করলেন। (বুখারি: ৪০৭)
সুতরাং আপনিও এ ধরনের ক্ষুদ্র কাজ করে প্রশংসার দাবিদার হতে পারেন। প্রিয়নবী (স.)-এর দোয়া পেতে পারেন। এই ঘটনা প্রমাণ করে তিনি মসজিদের সম্মান বজায় রাখা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় কত গুরুত্ব দিতেন।
আয়েশা (রা.) আরও বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করতে, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং সুবাসিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। (তিরমিজি: ৫৯৪)
সামুরা (রা.) নিজের ছেলেকে পত্রে লিখেছিলেন, ‘অতঃপর বলি যে আল্লাহর রাসুল (স.) আমাদেরকে আমাদের মহল্লায় মসজিদ বানাতে, তার তরমিম করতে এবং তা পবিত্র রাখতে আদেশ করতেন।’ (আবু দাউদ: ৪৫৬)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই এই মসজিদগুলোতে কোনো ধরনের নোংরা, পেশাব-পায়খানা (ইত্যাদি দ্বারা অপবিত্র করা) সংগত নয়। মসজিদ কোরআন পাঠ, আল্লাহর জিকির এবং নামাজের জন্য। (মুসনাদ আহমদ ও সহিহুল জামে: ২২৬৮)
মসজিদে থুথু বা কফ ফেলা গুনাহের কাজ। থুথু ইত্যাদি নোংরা বস্তু মসজিদ থেকে পরিষ্কার করা সওয়াবের কাজ। (সহিহুল জামে: ২৮৮৫)
আরও পড়ুন: মসজিদে শুধু বসে থাকলে যে সওয়াব
যে কেউ স্বেচ্ছায় মসজিদের সেবা করতে পারে। হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একজন কালো বর্ণের পুরুষ অথবা বলেছেন কালো বর্ণের নারী মসজিদ ঝাড়ু দিত। সে মারা গেল। নবী (স.) তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সাহাবিরা বলেন, সে মারা গেছে। তিনি বলেন, তোমরা আমাকে খবর দিলে না কেন? আমাকে তার কবরটা দেখিয়ে দাও। অতঃপর তিনি তার কবরের কাছে গেলেন এবং তার জানাজার সালাত আদায় করলেন। (বুখারি: ৪৫৮)
মসজিদ পরিচ্ছন্ন করার কাজে নিযুক্ত থাকার কারণে একজন কৃষ্ণাঙ্গও ইসলামে অনেক মর্যাদার অধিকারী। উল্লেখিত হাদিস সে কথারই প্রমাণ। ওই ঝাড়ুদের কবরে গিয়ে স্বয়ং বিশ্বনবী (স.) জানাজা পড়েছেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উৎকৃষ্ট স্থান মসজিদের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ, ময়লামুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।