জামাতবদ্ধ হয়ে সেজদার মাধ্যমে মহান আল্লাহর দাসত্বের চূড়ান্ত স্বীকৃতি দেওয়া হয় মসজিদে। তাই মসজিদের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর আত্মার সম্পর্ক। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ স্থান মসজিদ। আল্লাহ তাআলার কাছে এর চেয়ে প্রিয় কোনো জায়গা নেই। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হলো মসজিদ আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা হলো বাজার।’ (মুসলিম: ১৪১৪)।
মসজিদ মুসলিম সমাজের প্রাণকেন্দ্র। রাসুলুল্লাহ (স.) মদিনায় হিজরত করার পর মসজিদে নববীকে কেন্দ্র করেই বিকশিত হয়েছিল ইতিহাসের প্রথম মুসলিম সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার। সাহাবিদের দীন শেখানো থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সব কাজ মসজিদে নববীতে বসেই আঞ্জাম দিতেন বিশ্বনবী (স.)।
বিজ্ঞাপন
মসজিদ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণকারীদের আল্লাহ তাআলা খুব পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারাই তো আল্লাহর মসজিদের আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তারা হবে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।’(সুরা তাওবা: ১৮)
প্রিয়নবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারি: ৪৫০)
তাছাড়া মসজিদ নির্মাণ এমন পুণ্যময় কাজ, যার সওয়াব মৃত্যুর পরও চলমান থাকে। যতদিন সেই মসজিদে আল্লাহর ইবাদত হবে, ততদিন নির্মাণকারী এর সওয়াব পেতে থাকবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সাত ধরনের আমলের প্রতিদান মৃত্যুর পর কবরেও জারি থাকে। ১) যে ব্যক্তি কাউকে দীনি ইলম শিক্ষা দেবে। ২) নদী প্রবাহিত করতে যে সহযোগিতা করবে। ৩) কূপ খনন করবে। ৪) গাছ রোপণ করবে। ৫) মসজিদ নির্মাণ করবে। ৬) অথবা কোরআন বিতরণ করবে। ৭) অথবা সুসন্তান রেখে যাবে, যে তার মৃত্যুর পর তার জন্য দোয়া করবে। (আল বাহরুজ জাখখার: ১৩/৪৮৪)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, মসজিদ নির্মাণ খুবই সওয়াবের কাজ। আল্লাহর প্রিয়বান্দা হওয়ার অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু শর্ত হলো, এতে অহমিকা, গৌরব থাকা যাবে না। মসজিদ নির্মাণের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করা যাবে না। মসজিদ নির্মাণ করতে হবে, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। মসজিদ নিয়ে অহংকার করা কেয়ামতের আলামত। ‘যতদিন লোকেরা মসজিদ নিয়ে গর্ব না করবে, ততদিন কেয়ামত হবে না।’(মুসনাদে আহমদ; সহিহুল জামে: ৭২৯৮; আবু দাউদ: ৪৪৯)
বিজ্ঞাপন
তাই উম্মাহর বিত্তশালীদের উচিত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় মসজিদ নির্মাণ করা। কারো সেই সামর্থ্য না থাকলে কমপক্ষে সহযোগিতা করবে। মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণে আত্মনিয়োগ করবেন একজন প্রকৃত মুমিন। মসজিদকে সর্বদা পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় করে রাখবেন।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করার এবং তা পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। (আবু দাউদ: ৪৫৫)
সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো- নামাজ কায়েম করা। যেহেতু মসজিদের সঙ্গে নামাজের সম্পর্ক। পথহারা মানুষকে সঠিক পথের দিশা দেওয়া। মুসলিম ভাইদের এমনভাবে মসজিদমুখী করতে হবে, যেন তাদের অন্তর মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। কারণ কেয়ামতের দিন সেসব মানুষকে আরশের ছায়ায় স্থান দেওয়া হবে, যাদের অন্তর মসজিদের সঙ্গে লেগে থাকে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মসজিদের প্রতি আন্তরিকতা বাড়িয়ে দিন। মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণে অংশীদার হওয়ার তাওফিক দান করুন, সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।

