শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

বিরহের কথা সে লিখে পাঠাল (পর্ব-০৪)

অমিয় দাশ
প্রকাশিত: ০১ জুন ২০২৪, ০৮:০৮ পিএম

শেয়ার করুন:

বিরহের কথা সে লিখে পাঠাল (পর্ব-০৪)

এরপর থেকে নিয়ম করে প্রতি বুধবার স্কুলের ছুটির পর বাড়িতে এসে হাতমুখ ধুয়ে, খেয়ে, ফুটবল মাঠে খেলতে যাওয়ার আগে ঈশরাত আপুদের বাড়ি গিয়ে খামটা নিয়ে লোকমান ভাইকে পৌঁছে দিতাম। পিয়নের কাজটা আমার একদম পাকাপাকি হয়ে গেল।

বাতাসা খেতে খেতে প্রতি সপ্তাহের খামটা লোকমান ভাইয়ের জিম্মায় পৌঁছে দেওয়া একটি এক্সাইটিং কাজ বলে মনে হতো। টমিকে গিয়ে একটু আদর করা, তারপর কদমা খেতে খেতে ফুটবল মাঠে গিয়ে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলার জন্য উপস্থিত হওয়া, একটা রুটিন হয়ে গেল।


বিজ্ঞাপন


এভাবে বেশ কয়মাস চলল। এক বুধবারে আমি পিয়নের ডিউটি করতে গিয়েছি ঈশরাত আপুদের বাড়িতে। বাড়িতে পা দিতেই একটু অন্যরকম মনে হলো। বাড়ির উঠানের থেকে বারান্দার সবকিছু বেশ পরিপাটি করে গোছানো। উঠানের উপর রোদে শুকানোর জন্য টাঙানো তারের উপর কোনো ধোয়া জামাকাপড়, শুকনো বা ভেজা লুঙ্গি, শাড়ি বা কোনো কিছুই ঝুলছে না। যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জিনিসপত্র পরিপাটি করে সাজানো। লোকজনের কথাবার্তায় বাড়িটা বেশ জমজমাট। রান্নাঘরে ঈশরাত আপুর মায়ের সাথে রান্নাবান্নাতে জোগাল দিচ্ছে ওপাড়ার আর এক মহিলা। বারান্দায় যেখানে বসে ঈশরাত আপু পড়াশোনা করে সেখানে চারজন লোক ঈশরাত আপুর আব্বার সাথে বসে কথা বলছে। আমি ওদের বাড়ির গেটের বেড়া পার হতেই থেমে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আর এক পাও এগোতে সাহস হলো না। আমাকে ঠিক ঈশরাত আপুর আব্বা দেখে ফেললেন। বললেন,

- ‘কিরে দীপ্ত, কেমন আছিস?‘

আমি একটু এগিয়ে গিয়ে বললাম,

- ‘ভালো আছি আঙ্কেল। ঈশরাত আপু বাড়িতে আছে?‘


বিজ্ঞাপন


বারান্দায় বসা সবাই একবার আমাকে পরখ করে দেখে নিল। মেহমানদের একজন অল্পবয়সী। লোকমান ভাইয়ের থেকে দু’চার বছরের বড় হবে বোধ হয়। প্যান্ট-শার্ট পরা। বাকি তিনজন পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা। একজনের মাথায় মখমলের খয়েরি রঙের টুপি। মনে হচ্ছে লোকটা এইমাত্র কাশ্মীর থেকে ভেড়া চড়ানো ছেড়ে উঠে এসেছে। টেলিভিশনের একটা বিদেশি অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম, কাশ্মীরে ভেড়ার রাখালরা ওরকম টুপি পরে পাহাড়ি শীতের জায়গায় ভেড়া চরায়। ঈশরাত আপুর বাবাও বেশ একটা জম্পেশ আর ইস্ত্রি করা পাঞ্জাবি পরে বসে কথা বলছিলেন।

ঈশরাত আপুর আব্বা বললেন,

- ’ঈশরাত আজকে একটু ব্যস্ত আছে। মেহমান এসেছে, কালকে আসিস।’

‘আচ্ছা’, বলেই ঘুরে দাঁড়িয়ে ওদের বাড়ির থেকে বের হওয়ার জন্য হাঁটা শুরু করলাম। গুঞ্জন কানে এলো, ‘ছওয়ালডা কিডা?‘

ঈশরাত আপুর আব্বার গলা শুনলাম,

‘আমাদের প্রতিবেশীর ছেলে। মাঝে মাঝে ঈশরাতের কাছে পড়াশোনা দেখিয়ে নিতে আসে।‘

- ‘ও আচ্ছা‘, বলল প্রশ্নকারী।

ভাবলাম, আমার কাছে কোনো বইপত্র, খাতা নেই। তাহলে ঈশরাত আপুর বাবা ওটা বললেন, যদি আবার মেহমানরা আরও কিছু একটা জিজ্ঞেস করে বসে? তাড়াতাড়ি স্থান ত্যাগ করছি, এমন সময় দেখলাম ঈশরাত আপু ওদের রাস্তার দিকের জানালা খুলে হাত ইশারা করে আস্তে আস্তে বলল, ‘কাল আসিস, কেমন?‘

হাত নেড়ে, চোখ বুজে, মাথা ঝাঁকিয়ে বোঝালো, ‘আজ কিছু নেই পাঠানোর।‘ 

আমি ‘হ্যাঁ’ সূচক ঘাড় নেড়ে ফুটবল খেলার মাঠের দিকে রওনা হলাম।

লোকমান ভাইদের বাড়ির সরু রাস্তা পার হয়ে ফুটবল মাঠে যেতে হয়। সরু রাস্তা পার হওয়ার পূর্বেই মনে হলো যদিও আজকে কিছু দেওয়ার নেই, তথাপিও লোকমান ভাইকে ব্যাপারটা জানানো দরকার। তা না হলে হয়তো সে আমার আশায় বসে থাকবে। অগত্যা বড় রাস্তা থেকে নেমে লোকমান ভাইদের বাড়িতে যাওয়ার সরু মাটির পথে হাঁটতে হাঁটতে লোকমান ভাইয়ের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম। আমাকে দেখেই টমি আস্তে আস্তে একটু কুঁই কুঁই করে ডেকে পাশে এসে দাঁড়িয়ে লেজ নাড়তে লাগলো। তারপর টমি কাছে এসে আমার হাঁটুতে, পকেটের কাছে শুঁকে নিরুৎসাহীর মতো দাঁড়িয়ে লেজ নাড়ানো থামিয়ে, মাটিতে শুয়ে পড়ল। ইতিমধ্যে লোকমান ভাই শার্টটা গায়ে চাপাতে চাপাতে তার সাইকেলটা ঠেলে হাঁটতে হাঁটতে আমার কাছে এলো।

আমার দিকে ইশারা করে বলল,

- ‘কই?‘

- ‘আজ কিছু নেই‘

- ‘নেই কেন? ওদের বাড়িতে যাসনি?‘

- ‘গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম, একগাদা মেহমান এসেছে।’

লোকমান ভাই একটু চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

- ‘তাই?’

- ‘হ্যাঁ। ঈশরাত আপু আগামীকাল আমাকে যেতে বলেছে।’

‘ও আচ্ছা’, বলেই কাগজে মোড়া কয়েকটা কদমা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে চিন্তিত মনে সাইকেল চালিয়ে বড় রাস্তার দিকে চলে গেলেন। কদমাগুলো হাতে ধরে খাব, কি খাব না তা ভাবলাম কিছুক্ষণ। আমি তো আজ পিয়নের কাজটা পরিপূর্ণভাবে করিনি। তাহলে কদমাগুলি কি আমার নেওয়া ঠিক হয়েছে? না, ঠিক হয়নি মনে হয়। কিন্তু কিছু বোঝার বা বলার আগেই তো লোকমান ভাই দ্রুতগতিতে চলে গেলেন। আচ্ছা, আজ না হয় টমির সাথে ভাগাভাগি করে খাই। কাল যদি লোকমান ভাই কদমা দিতে চান তাহলে না নিলেই হবে। একটা কদমা টমির দিকে উঁচু করে ছুঁড়ে দিলাম। টমি ঠিক ক্যাচ ধরে মুখের মধ্যে নিয়ে চুপচুপ করে শব্দ করে চুষে চুষে তারপর মাটিতে ফেলে তা আবার চেটে চেটে খেতে লাগলো।

টমীকে বললাম,

- ’যাহ, কিরে তুই? কদমা কামড়ে খা।’

বলেই আমার একটা কদমা কামড়ে ওকে দেখালাম যে কিভাবে কামড় দিয়ে খেতে হয়। কিসের কি? টমি কিছু বুঝলো বলে মনে হলো না! সে একইভাবে মুখের মধ্যে নিয়ে চুষে আবার মাটিতে ফেলে দিয়ে চেটে চেটে খেতে লাগলো।

ওখানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে আমার খেলতে যেতে দেরি হবে। আমাকে ফুটবল মাঠে যেতে হবে। 
বললাম,

- ‘টমী, তোকে আমি অন্যদিন শিখিয়ে দেবো কিভাবে কদমা কামড়ে খেতে হয়।’

টমি কি বুঝলো জানি না, তবে আমার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে একবার একটু তাকিয়ে আবার কদমা চাটতে লাগলো। আমি চলে গেলাম খেলার মাঠে।

পরদিন কথামতো আমি ঈশরাত আপুর বাড়িতে গেলাম। ঈশরাত আপুকে দেখে খুব বিধ্বস্ত মনে হলো। কাল থেকে মনে হয় চুল আচড়ায়নি। চুলগুলো যেদিকে খুশি সেদিকে এলোমেলো হয়ে আছে। চোখ ফোলা ফোলা, জবা ফুলের মতো টকটুকে লাল। মনে হয় কোনো কারণে অনেক কান্নাকাটি করেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমার কি হয়েছে?’

- ‘কিছু না।’ বলেই অন্যদিকে তাকালো।

তারপর বলল,

- ‘তুই দাঁড়া।’

বলেই ঘরে গিয়ে কয়েকটা দানাদার মিষ্টি আর একটা খাম ওড়নার মধ্যে লুকিয়ে এনে দানাদারগুলো আমার হাতে দিয়ে খামটা আমার পকেটে পুরে দিল।

আর বলল, ‘এখন যা, আমি একটু শুয়ে থাকবো।’

ওদিনকার খামটা অন্যদিনের তুলনায় বেশ ভারি আর মোটা বলে মনে হলো। পকেটে যে কিছু আছে তা হাঁটতে গেলে বেশ অনুভব করা যাচ্ছিল। লোকমান ভাইদের বাড়ির কাছাকাছি যেতেই চোখে পড়ল সে টমিকে নিয়ে রাস্তায় হাটাহাটি করছেন। আমাকে দূর থেকে দেখতে পেয়েই তড়িঘড়ি করে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল,

- ‘কিরে, কি খবর দীপ্ত? কেমন আছিস?’

মাথা নেড়ে বললাম,

- ‘ভালো।’

বলেই পকেট থেকে খামটা বের করে লোকমান ভাইকে দিলাম। খামটা নিয়েই সে তার জিন্সের পকেটে ভরে নিল। অন্য পকেট থেকে একটা কাগজে মোড়া কয়েকটা কদমা আমার হাতে দিয়েই তার বাড়ির দিকে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়ালো। টমি তখনও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে লেজ নাড়ছে। আমি একটা কদমা বের করে সেদিনের মতো উঁচু করে ছুঁড়ে দিলাম। টমি কদমাটাকে ক্যাচ ধরে লোকমান ভাইয়ের পিছু নিল। লোকমান ভাই ঘাড় ঘুরিয়ে টমিকে কদমা দেওয়ার ব্যাপারটা দেখল। তারপর একটু মুচ্কি হেসে তার বাড়ির দিকে চলে গেল।

এরপর আমার পিয়ন-ডিউটি সপ্তাহে একদিন থেকে বেড়ে সপ্তাহে দু’দিন হয়ে গেল। খাম দিতে গেলেই প্রায়ই দেখতাম লোকমান ভাই টমিকে নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাকে আর খুঁজতে হতো না। আজকাল তাকে বেশ পেরেশান লাগে। লোকমান ভাইয়ের ছোট রিমোটের মতো একটা মোবাইল ফোন দিয়ে অনেক কথা বলতে দেখতাম। ফোনে কথা বলতে বলতে সে অকারণে এদিক থেকে ওদিক, আবার ওদিক থেকে এদিক অযথা হাঁটাহাঁটি করতো। ঈশরাত আপুর কোনো মোবাইল ফোন ছিল না। লোকমান ভাই হয়তো চাকরি-বাকরি কিছু খুঁজছেন বা অন্য কোনো বিষয় থেকে থাকবে। ঈশরাত আপু আমার সাথে বসে তেমন আর গল্প করত না। সবসময় কি যেন চিন্তা করত, অন্যমনস্ক থাকতো। দেখেই বোঝা যেত যে সেও বড় কোনো ধকলের মাঝে আছে।

এতদিনে আমি ঠিকই বুঝে গেছি যে, ঈশরাত আপুর সাথে লোকমান ভাইয়ের লাইন আছে। ওরা একে অন্যকে খুব পছন্দ করে ও খুব ভালোবাসে। ঈশরাত আপুর মনে হয় লোকমান ভাইয়ের সাথে বিয়ে হবে।

একদিন সন্ধ্যায় আমার ঘরে আমি পড়তে বসেছি। বারান্দায় আমার মায়ের সাথে আমার বাবার কথাবার্তা শুনে আমার খুব কান খাড়া হলো।

মা বাবাকে বলল,

- ‘শুনেছ, ও পাড়ার ঈশরাতের বিয়ে ঠিক হয়েছে।’

শুনেই আনন্দে আমার চোখ বড় বড় হয়ে কান আরও বেশি খাড়া হলো। লোকমান ভাইয়ের সাথে ঈশরাত আপুর বিয়ে, এটা তো ওরা দুজনের কেউই আমাকে বলেনি। লোকমান ভাইকে বলতে হবে যে আমি তার বিয়ের বরযাত্রী হবো। যদিও খুব কাছে কাছেই বিয়ে। লোকমান ভাইদের বাড়ি থেকে ঈশরাত আপুদের বাড়ি হাঁটার দূরত্ব। তাতে কি? আমরা বাজি পোড়াতে পোড়াতে, নাচতে নাচতে আনন্দ করবো। অনেক মজা হবে। আর আমাকে না নিয়ে পারবেই না। আমি তো ওদের দুজনের কাছে একটা খুউব গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। বাবা একটা বই নিয়ে নিবিষ্টভাবে কি যেন পড়ছিলেন।

বাবা বললেন,

- ‘ও। তা কবে বিয়ে?’

- ‘এ মাসের শেষ শুক্রবারে। ২৮ তারিখে।’

- ’তার মানে তো শিগগিরই। আর মাত্র ১০ দিন বাদেই বিয়ে। তা কোথায় বিয়ে ঠিক হলো?’

- ’ফরিদপুরের কি একটা জায়গায়।’

বলেই মা কোনো প্রশ্নের জন্য আর তর সইতে না পেরে বড় বড় করে পূর্ণ বৃত্তান্ত বলা শুরু করলো।

মা বলল, ’ছেলেটা নাকি দেখতে বেশ ভালো। শিক্ষিত ও সরকারি চাকরি করে। বেতন মোটামুটি ভালো। তবে অনেক উপরি আছে।’

বলেই বেশ গদগদ হয়ে পড়ল। বুঝলাম বেতনের চেয়ে উপরিটাই মায়ের বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উপরিটা যে কি জিনিস তা বুঝলাম না যদিও। আমার মাথায় তখন কিছুই ধরছে না। পড়াশোনার বইয়ের কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। বুঝতে বাকি রইল না যে, ঈশরাত আপুর সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে, সে মোটেই লোকমান ভাই নয়। অন্য কেউ। বিশাল সর্বনাশ হতে চলেছে। ঈশরাত আপুর ফরিদপুর নামে দূরে কোথাও বিয়ে হচ্ছে। ঈশরাত আপুর সাথে আর বসে বসে গল্প শোনা যাবে না। লোকমান ভাইয়ের সাথে বিয়ে হলেও মাঝেমধ্যে গিয়ে হাজির হওয়া যেতো। গল্প শোনা যেতো, অরিগামী শেখা যেতো। তাছাড়া দানাদার কদমার একটা স্থায়ী ব্যবস্থা হয়ে যেতো। সব ভণ্ডুল হবে। খুব খারাপ হবে।

বাবা জিজ্ঞেস করলেন,

- ‘তো, পাত্র কি চাকরি করে?’

মা বলল, ‘কানুর গু।’

বাবা অবাক হয়ে, একটু স্পষ্টভাবে, আগের চেয়ে একটু উঁচু স্বরে আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি চাকরি?

- ’কানুর গু। তাই শুনলাম।’

- ’কানুর গু?’

বলেই বাবা হো হো করে হেসে উঠলেন। হাসির তোড়ে তার হাত থেকে বইটা ফ্লোরে পড়ে যাওয়ার শব্দ পেলাম। বাবা হাসলে এরকম করেন। উচ্ছ্বসিত হাসি হাসেন। একদম নির্ভেজাল সে হাসি। হাসছেন তো হাসছেনই, আর চেয়ারের হাতল চাপড়াচ্ছেন। কোনোভাবেই হাসি ঠেকাতে পারছেন না। তাই চেয়ারের হাতল চাপড়িয়ে নিজেকে প্রশমিত করার চেষ্টা করছেন। আমরা সবাই হা করে চুপ করে বসে আছি। এর মধ্যে মা যেন কি বলেছিল। কিন্তু বাবার হাসির তোড়ে তা আর আমি শুনতেই পাইনি।

আমারও একটু খট্কা লাগলো। মা কানুর কথা বলছে কেন? আমাদের ও পাড়ায় কানুগোপাল নামে একজন লোক আছে। খুব খচ্চর আর কেউটে ধরনের লোক। মাঝে মাঝেই বাচ্চাদেরকে অযথা ভয় দেখায়। একদিন আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছি। হঠাৎ করে নিঃশব্দে সাইকেল নিয়ে, বলা নেই কওয়া নেই আমার কাছাকাছি পেছনে এসেই ঘেউ ঘেউ করে একদম কুকুরের মতো ডাক দিয়ে ফুস্ করে বেরিয়ে গেল। আজব। আর একটু হলেই আমি ভয় পেয়ে, রাস্তার পাশে পড়ে যেতাম কুকুরের ভয়ে। সবাই কানুগোপালকে সংক্ষেপে ‘কানু’ বলে ডাকে।

কিন্তু কানুর মতো একটা খচ্চর লোকের গু পরিষ্কার করতে কোনো সরকারি লোকের কেন দরকার হবে? তাও আবার ফরিদপুরের লোক। কে জানে? ওই কানু হয়তো যেখানে সেখানে রাস্তাঘাটে পায়খানা করে রাখে। বাবার হাসি থামলে তারপর বললেন,

- ‘আরে কানুর গু না। কানুনগো।’

- ‘কি জানি বাবা। ঈশরাতের আম্মা তো তাই কইলো।‘

বাবা বললেন,

- ‘কানুনগো একটা সরকারি পদ। হ্যাঁ, খারাপ না।‘

- ‘কানুনগোদের কি কাজ?‘

- ‘জমিজমার সার্ভে, মানে মাপঝোপ করে কানুনগো পদে চাকরি করা লোকজন।’

- ‘তার মানে কি সরকারি আমিন?’

- ‘তা ঠিক না, তবে কাছাকাছি।’

- ‘তাহলি ঠিক আছে। জমিজমা মাপতি যাইয়ে এট্টু আট্টু কম বেশি দিলিই তো পয়সা। মাইয়েডা ভালোই থাইকপেনে।’

এবার উপরির ব্যাপারটা বুঝলাম। আর মা যে সেটার খুব গুরুত্ব দিচ্ছে তাও বুঝলাম।

লেখক: অমিয় দাশ, ফার্মাসিস্ট, ওষুধ প্রস্তুতকারক, বোকা রেটন, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র
Email: [email protected]

বিরহের কথা সে লিখে পাঠাল (পর্ব-০৩)
বিরহের কথা সে লিখে পাঠাল (পর্ব-০২)
বিরহের কথা সে লিখে পাঠাল (পর্ব-০১)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর