বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

বিরহের কথা সে লিখে পাঠাল (পর্ব-০১)

অমিয় দাশ
প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২৪, ০৫:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

বিরহের কথা সে লিখে পাঠাল (পর্ব-০১)

বীথি আর দীপ্ত দুজনেই হাইস্কুল পাশ করে কলেজে চলে যাওয়ার পর থেকে তাদের দেখা-সাক্ষাৎ খুবই কম হচ্ছে। দীপ্ত ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে, আর বীথি পড়ে ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে। আন্তঃস্কুলের এক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে ওদের দুজনের প্রথম পরিচয়। তারপর অল্প অল্প করে জানাশোনা থেকে বন্ধুত্ব। বছর খানেক আগেই বন্ধুত্বের গণ্ডি পেরিয়ে গাঢ় মধুর সম্পর্কের দাগ ছুঁয়েছে।

দীপ্ত যখন কলেজের প্রথম বর্ষে, বীথি তখন হাইস্কুলের গণ্ডীটি পার হবে হবে। দীপ্ত কলেজ থেকে ছুটি-ছাটাতে বাড়িতে এলেই বিভিন্ন অজুহাতে দেখা হতো বীথির সাথে। দীপ্তদের বাড়ি বিথীদের বাড়ি থেকে বেশি একটা দূরে নয়, আবার তেমন একটা কাছেও নয়। সাইকেল চালিয়ে গেলে চল্লিশ-পয়তাল্লিশ মিনিট সময় লেগে যায়। স্মার্টফোনের বদৌলতে কোথায়, কখন দেখা হবে তা ঠিক করে নিতে তেমন বেগ পেতে হয় না।


বিজ্ঞাপন


দীপ্তর কাছে চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ মিনিট সাইকেল চালিয়ে বীথির কাছে যাওয়া যেন কয়েক মিনিটের মতো। বীথির কাছে যাওয়ার সময় তার সাইকেল যেন পঙ্খীরাজের মতো চলে। কিছু বোঝার আগেই সে হাজির হয়ে যায় আগে থেকে ঠিক করে রাখা জায়গায়।

বীথিদের বাড়ির পাশ দিয়ে একটা নদী বয়ে গিয়েছে। ওখানেই সাধারণত দেখা হয়। শীতকালে ওটাকে নদী বললে ভুল হবে। বলা উচিত স্থির হয়ে বসে থাকা একটা মরা নদী। কোথাও কোথাও তির তির করে সাপের মতো একটু একটু পানির প্রবাহকে নদী বলা চলে না। তবে কুল কুল শব্দটা বড় মায়াময়।

নদীর মাঝখানের দিকে তাকালে মনে হবে উঁচু-নিচু বালুর ঢিপি। যেখানে তির তির করে পানি বয়ে যাচ্ছে, সেই ঢালু জায়গাটাতে দাঁড়ালে মনে হয় চারিদিকে বালুর ছোট ছোট টিলা। এসব টিলার আবার মালিক আছে। এলাকার গণ্যমান্য চেয়ারম্যান বা মেম্বার শ্রেণির লোকজনের দখলে বালুর টিলাগুলো। বিক্রি হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়। বিক্রি ও ট্রাকের বোঝাই দেওয়ার কাজ চলে রাতের অন্ধকারে। ঠিক আইনসম্মত কাজ না, তাই। দিনে কেউ সাধারণত এ দিকটা মাড়ায় না।

দীপ্ত আর বিথী দেখা করে এই নদীর পাড়ে। তারপর দুজনে হাঁটতে হাঁটতে সাইকেলটা নিয়েই ওই বালুর টিলার মেইজে গিয়ে কোনো ঘাসের ওপর বসে গল্প করে। মাঝে মাঝে দীপ্ত চানাচুর ভাজা কিংবা বাদাম কিনে কাগজের প্যাকেটে করে নিয়ে আসে।


বিজ্ঞাপন


নদীর দুধারে অজস্র খেজুর গাছ আর শিমুল গাছ। খোলা জায়গা পেয়ে শিমুল গাছগুলো তাদের ডালপালা বিস্তার করতে যেন একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করছে। খেজুর গাছগুলোও কম যায় না। বাড়তে বাড়তে অনেকগুলো খেজুর গাছ এখন এত বড় হয়েছে যে গাছিরাও সাহস করে না রস সংগ্রহ করতে। নদীর মাঝখানে থেকে দেখলে মনে হবে সবুজের মাঝে গাঢ় লাল রঙের শিমুল ফুলের ছলচাতুরী। এখানকার দুটো বড় বড় খেজুর গাছ নদীর ধার ঘেঁষে হেলে নদীর উপরে গা এলিয়ে আছে। এই খেজুরগাছ দুটো দীপ্ত ও বীথির খুব প্রিয়। মাঝেমাঝেই ওরা হেলে থাকা গাছের একটার উপর বসে গল্পগুজব করে। লোকজনের তেমন যাতায়াত নেই এদিকটায়। দু একটা জুটি দেখা যায়। তারাও সবাই একটা দূরত্ব রেখে বসে।

এ বছর যোগাযোগটা সেভাবে আর হচ্ছে না। বীথি একটি কলেজে পড়ে, যা রাজধানীর সেই ভিড় কোলাহলমুখর পরিবেশের একটা বড় কলেজ। কলেজের কাছেই তার বড় খালার বাসায় সে থাকে। বীথি একদিন দীপ্তকে বলেছে যে ওদের কলেজটার নাকি বেশ নামডাক। দুটো সেকশন আছে। ইংলিশ মিডিয়াম, আর বাংলা মিডিয়াম। বীথি অবশ্য বাংলা মিডিয়ামে পড়ে।

বীথির কলেজের ছুটি-ছাটার ব্যাপার গুলো বেশ গোলমেলে। শুধুমাত্র তিনটে ধর্মীয়, তিনটে রাষ্ট্রীয় ছুটি ছাড়া আর সব ছুটিগুলো দীপ্তর কলেজের ছুটির সাথে একদম মেলে না। ফলে ওদের দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি বেশ কিছুদিন। মাঝেমাঝেই বিথী বলে যে, থ্যাংকস্ টু গড ফর দা স্মার্ট ফোন। তা না হলে যে কি হতো? কিভাবেই বা যোগাযোগ হতো, ইত্যাদি।

প্রতিদিন না হলেও নিয়মিত ওদের টেক্সটিং বা খুদে-বার্তার আদান-প্রদান হয়। দুতিন দিন পর পর, পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে। ভালোই দিন কেটে যায় ওদের। কত রকম ইমোজি ব্যবহার করে বীথি তার যেন ইয়ত্তা নেই।

দীপ্ত নাম শুনে যেমন মনে হবে সে সুদর্শন, মেধাবী, চটপটে, এককথায় স্মার্ট একটা কলেজ পড়ুয়া ছেলে। ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। দীপ্ত একটু মুখচোরা স্বভাবের। সাদামাঠাভাবে কথা বলে। কথা বলার সময় তেমন কোনো নাটকীয় অঙ্গভঙ্গিও থাকে না। আর সব গুণ থাকা সত্ত্বেও ওকে ঠিক স্মার্ট ছেলেদের দলে ফেলা যায় কিনা তা নিয়ে অনেকেরই দ্বিমত হবে। অন্যদিকে বীথি অনেক চটপটে। লেখাপড়ায়ও ভালো। তা না হলে তো আর অত ভালো আর বড় একটি কলেজে চান্স পেত না। তবে ইদানিং কথার মাঝে ইংরেজি শব্দ, কখনো কখনো পুরো লাইনই ইংরেজিতে বলে। মনে হয় কোনো ইংরেজি মিডিয়ামের সহপাঠীরর সাথে ঘোরাফেরা বা আড্ডা দেয়।

কিছুদিন আগে বীথি খুব চাপাচাপি করে দীপ্তকে তার ফেসবুক ফ্রেন্ডস লিস্টে যোগ করে নিয়েছে। দীপ্ত ফেসবুকিং করে বটে, তবে অনর্গল বলে একটা কথা আছে, সেভাবে নয়। মাঝে-মধ্যে পড়ার ব্রেকে একটু দেখে নেওয়া, এই আর কি। ফ্রেন্ড লিস্টেও তেমন বেশি কেউ নেই। তাছাড়া সাথে সাথে দ্রুত মেসেঞ্জারের জবাব না পেয়ে ফ্রেন্ডলিস্টের বন্ধুরাও বোধ হয় দীপ্তকে ইগনোর করা শুরু করেছে।

এই গত কয়েকদিনে বীথি বেশ মেসেজ করছে, সাথে ইমোজি পাঠাচ্ছে। কিছু কিছু ইমোজির মানে কি তার রহস্য ভেদ করতে দীপ্তকে গুগুল করতে হচ্ছে। কাদের যে খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, গাদা গাদা ইমোজি বানায়! সেদিনই তো বিথি একটা ইমোজি পাঠিয়েছে, যা দীপ্ত বাপের জন্মেও দেখেনি। কি যন্ত্রণা। ইগনোর করারও উপায় নেই, আবার জানতেও ইচ্ছে করছে। গুগল করে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করতেই সে দেখলো, সেই ইমজিটির সম্বন্ধে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের বিভিন্ন মতামত। কেউ বলছে ইমোজিটির মানে হলো ‘মুচকি হাসি’, কেউ কেউ বলছে ‘হাল্কা হাসি’, আবার এক জায়গায় পেল ‘ছদ্মগাম্ভীর্যের সাথে হাসি’। কোনো মানে হয়? তার নিজের কোনো ধরনের হাসি আসা তো দূরের কথা, বিরক্তিতেই মনটা তেঁতো হয়ে গেলো। ফোন রেখে, কলেজের একটা এসাইনমেন্ট ছিল, তার দিকে মন লাগালো।

কয়দিন ধরেই বীথি তাকে খুব খোঁচাচ্ছে ফেসবুক মেসেঞ্জারে, যে তাকে একটা চিঠি লিখতে। ওরা একে অন্যকে এত মেসেজ লিখছে, মাঝেমধ্যে কথাও হচ্ছে, তথাপি চিঠিটা তার চাই-ই চাই। বলেছে যে, একটা ছেলে যদি একটা মেয়েকে প্রেমের চিঠি লেখে তাহলে যে রকম হবে, সেরকম। ব্যাপারটা সে একটু আধটু যে বোঝেনি তা নয়। তবে এমনও হতে পারে যে কোনো বান্ধবীকে প্রেমের চিঠি পেতে দেখেছে। আজকাল যা হয়েছে না, শুধু অনুসরণ আর অনুকরণ। যেমন কেউ কাউকে সেলফি তুলতে দেখলো কি খট্টাশ করে নিজের ধামা সাইজের একটা ফোন বের করে ওর থেকে বেশি কয়েকটা সেলফি না তোলা পর্যন্ত পেটের মধ্যে বাডুর-বুডুর চলতেই থাকবে যেন।

অগত্যা মনের মাধুরী মিশিয়ে একটা চিঠি লিখল দীপ্ত। সময় করে চিঠিটা ছেড়েও দিল বীথির নতুন ঠিকানায়। বীথিকে চিঠি ছাড়ার কথা জানাতেই সে কমপক্ষে কুড়িটা প্রশ্ন ছুড়ে মারল। কবে লিখলো, কখন লিখলো, কিভাবে, কিসের খামে, কত বড় চিঠি, প্রেমের চিঠি না নরমাল চিঠি, মন থেকে লিখেছে কিনা, কবে পাবে, ইত্যাদি, ইত্যাদি আরো কত কি। দীপ্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো, কিছু ইচ্ছে করেই বলল না বা গুছিয়ে বলতে পারবে না বলে এড়িয়ে গেলো। বীথি তো আর ছেড়ে দেয়ার বান্দা না। এদিকে দীপ্তও বলছে না। এক পর্যায়ে কথোপকথনটা কথা কাটাকাটিতে পরিণত হলো। দীপ্ত আস্তে আস্তে বলে ফেলল,
- ‘ও তুমি বুঝবে না। ওসব বলতে আমার যে বড়ো কষ্ট হয়।’

- ‘আমাকে বলতে তোমার কষ্ট হয়? আচ্ছা অত আর কষ্ট করতে হবে না।’

বলেই ক্লিক। বীথি ফোনটা কেটে দিলো। ‘টা টা’ পর্যন্ত বলল না। দীপ্ত বীথিকে কথার শেষে ‘বাই’ বলে, আর বীথি ওকে বলে ‘টা টা’। মনটা বিষণ্ন করে দীপ্ত অনেকক্ষণ বসে থাকলো। ভাবলো, সে নিজে এরকম কেন? কেন সে বীথির কাছে সবকিছু গুছিয়ে বলতে পারে না? তার মনের আকাশে অনেক কথা, অনেক স্মৃতি ভেসে উঠল।

মনে পড়ল গতবছর পহেলা ফাল্গুনের দিনটি। বীথি দীপ্তকে ওই নদীর পাড়ে আসতে বলেছিল ওদিনটায়। দিনটাতে প্রেমিকাকে ফুল দেয়া একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। দেখা করতে আসার পথে দীপ্ত চেষ্টা করেও কি রকম ফুল নিয়ে যাবে ভেবে পায়নি। গোলাপ ফুল ছাড়া আর কিছুর কথা মনে আসেনি। কাছের বাজারে ফুলের একটা দোকানে গিয়ে দ্যাখে গোলাপ ফুল সব শেষ। কি করবে ভাবতে ভাবতে আসার পথে নাগালে পাওয়া যায় এরকম একটা শিমুল গাছের ডাল থেকে একটা শিমুল ফুল তুলে, পাশের একটা কলাগাছের থেকে কলাপাতা নিয়ে, তার মধ্যে মোড়ক করে এনে দিয়েছিল বীথিকে।

বীথি অবাক হয়ে দীপ্তর মুখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, ‘আমি মনে করলাম তুমি গোলাপ ফুল দেবে।‘ বলেই হি হি করে হেসে ফেলল।

- ‘গোলাপ ফুল কিনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু গোলাপ ফুল পাইনি।‘

- ‘তাই বলে শিমুল ফুল আনলে? শিমুল ফুল তুলতে গিয়ে কাঁটা ফুটেনিতো?’ বলেই ফুলটাকে পরখ করে দেখে নিয়ে বীথি বললো, ‘গাছ তলার থেকে কুড়িয়ে আনা মনে হচ্ছে না, একদম ফ্রেশ!‘

- ‘হ্যাঁ, গাছ থেকে পেড়ে এনেছি। কাঁটা ফুটেনি।‘

তারপর নদীর দুই ধারের অজস্র শিমুল গাছ দেখিয়ে দীপ্ত বলেছিল, ‘ওই দেখো, নদীর দুধারের শিমুল গাছগুলোতে সবেমাত্র ফুল ফোটা শুরু হয়েছে। তাতেই কত রক্তিম সুন্দর! এই লক্ষ শিমুল ফুলের একটা তোমাকে দিলাম!’

বিথী অবাক হয়ে মুখচোরা দীপ্তর মুখে কথার খৈ ফুটতে দেখে, তার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আজ তোমাকে অনেক রোমান্টিক লাগছে!’

- ‘তা জানি না, তবে আজকে আমার মনটা অনেক ফুরফুরা রকমের ভালো লাগছে। তুমি সাথে থাকলে আমার সবকিছু কেমন যেন ভরা ভরা লাগে। তোমাকেও এই সুন্দর কমলা রঙের শাড়ি, আর খোঁপায় গাঁদা ফুলের মালা অনেক সুন্দর লাগছে!’

একে অন্যের দিকে তাকিয়ে তারা বসেছিল অনেকক্ষণ। নিস্তব্ধতা কাটিয়ে বীথি বলে উঠলো, ‘খেজুরের রস খাবো।‘

নদীর পাড় দিয়ে এক গাছি কাঁধে করে তার বিকেলের সংগ্রহের রসের ভাড় নিয়ে যাচ্ছিল বাঁশের চটা দিয়ে বানানো বাঁকে করে। বীথি তাকে দেখেই রস খাওয়ার কথা বলেছে। দীপ্ত দৌড়ে গাছির কাছে পৌঁছে, তাকে বলে কয়ে থামালো। ইশারা করে বীথিকে ডেকে কাছে আনলো। রাস্তাঘাটে এভাবে রস বিক্রি হয় না।গাছির কাছে গ্লাস না থাকায় তারা হাত পেতে রস খেয়েছিল, টিউবয়েলের পানি খাওয়ার মত। গাছি রস হাতের উপর আস্তে আস্তে ঢেলেছিল রসের ভাড় থেকে। সে দাম নিতে চায়নি। তাও বিথী দশ টাকার একটা নোট বের করে জোর করে ধরিয়ে দিয়েছিল গাছিকে।

রস খেয়ে যখন ওরা বালুর টিলার চোরাগলিতে গেল, তখন সূর্য কেবল গাঢ় গোলাপি রং হয়ে আস্তে আস্তে অস্ত যেতে চলেছে। বিথির মুখে রোদ পড়তেই মনে হচ্ছিল তার ঠোঁটের পাশ থেকে সোনালী রোদ চকচক করছে।

ওই চকচকে ভাবটা কেন? এটা বুঝতে দীপ্তই চকচকে জায়গাটাতে হাত দিয়ে আলতো করে স্পর্শ করল। বীথি কি বুঝল কে জানে? এগিয়ে এসে একটু উঁচু হয়ে দীপ্তর ঠোঁটের কাছে এলিয়ে দিল মুখটা। দীপ্ত একটা আলতো চুমু দিল। তারপর থুঁতনি ধরে বীথির মুখটা একটু তুলে পরপর ঘন ঘন কয়েকটা চুমু বসিয়ে দিল বীথির ঠোঁটে ও গালে। তারপর জিহ্বা দিয়ে নিজের ঠোঁট চেটে বলল, ‘মিষ্টি‘।

- ‘তাই নাকি?‘ বলেই মুচকি হাসলো বীথি।

দীপ্ত এবার বীথিকে কাছে টেনে নিয়ে বীথির মুখ বিড়ালের মতো দুবার চেটে নিল। তারপর চকোলেট চুষে খাওয়ার মত চুক চুক শব্দ করে বললো, ‘তুমি তোমার মুখের উপর শুকিয়ে যাওয়া খেজুরের রসের চেয়েও অনেক বেশি মিষ্টি!‘ বলেই একটু মুচকি হাসলো।

আর যায় কোথায়। বীথি দীপ্তকে প্রথমে একটু ধাক্কা মেরে, তারপর আরো সজোরে কাছে টেনে দীপ্তকে লম্বা একটা চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে থাকলো। অনুভব করল একে অন্যের হৃদস্পন্দন।পৃথিবীর সব শব্দ যেন থেমে গেল কিছুক্ষণের জন্য। শুধু অনুভূত হল একে অন্যের হৃদস্পন্দন, অনেকক্ষণ।

এই বালুর ঢিপির আড়ালেই তাদের প্রথম একে অন্যকে জড়িয়ে ধরা, চুমু খাওয়া। দুজনের কাছে জীবনের প্রথম মধুর, প্রগাঢ় অভিজ্ঞতা। সারাজীবন মনে রাখার মত মধুর ঘটনা। জীবনের প্রথম চুমু সবার মনে থাকে। প্রকৃতির কাছে মন খুলে কিছু চাইলে, প্রকৃতি মনে হয় তা দেওয়ার জন্যে ইশপিস করে, দিতে তার কার্পণ্য হয় না। সময় কত তাড়াতাড়ি চলে যায়। এই তো দিনটা ছিল গত বছর বসন্তের শুরুতে। কিন্তু মনে হচ্ছে যেন এক যুগ আগে।

বীথি কি অভিমান করলো, না রেগে গিয়ে ফোন হ্যাংআপ করে ব্রেকআপ করলো? আর হয়তো কখনো যোগাযোগই রাখবে না। মন খারাপ করে, ভাবতে ভাবতে দীপ্ত তার ফোনটা নিয়ে মেসেঞ্জারে বীথিকে মেসেজ টাইপ করা শুরু করল। একটা কথা বলতে গিয়ে অনেক কথা বেরিয়ে আসছে। কিন্তু মেসেঞ্জারে এত বড় মেসেজ ধরছে না, ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সব কথা বীথির জানা উচিৎ। দীপ্ত ভাবলো, একটা ডকুমেন্ট ফাইল বানিয়ে ইমেইলে এটাচ্মেন্ট করলে কেমন হয়? সে গুগল ডকে একটা ফাইল তৈরি করবে, যেটা কিনা এটাচ্মেন্ট হিসাবে ইমেইল করতে পারে।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর