শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘কপাল পোড়া’ নেতার তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে বিএনপিতে!

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৩, ১০:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

‘কপাল পোড়া’ নেতার তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে বিএনপিতে!

কেন্দ্র থেকে সরকারের অধীনে কোনো ধরণের ভোটে না যাওয়ার স্পষ্ট ঘোষণা থাকলেও সে কথা কানে তুলছেন না বিএনপির তৃনমূলের নেতাকর্মীরা। এমনকি দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের হুঁশিয়ারিতেও তাদের থামানো যাচ্ছে না। মাথায় বহিষ্কারের খড়গ নিয়ে চলমান সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লড়ছেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের পদধারী নেতারা। গাজীপুরের মতো বাকি চার সিটি করপোরেশনেও ভোটের মাঠে থাকার সিদ্ধান্তে এখনো অনড় আছেন প্রায় ৭০ জনের মতো কাউন্সিলর প্রার্থী। এর আগে গাজীপুরে কাউন্সিলর পদে লড়ে বহিষ্কার হয়েছেন ২৯ জন।

বিএনপি বলছে, বাকি সিটি করপোরেশনেও যারা শেষ পর্যন্ত প্রার্থী থাকবেন তাদেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে।


বিজ্ঞাপন


শুধু তাই নয়, পৌরসভা-ইউনিয়ন পরিষদের ভোটেও যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে লড়ছেন তাদেরও বহিষ্কার করছে বিএনপি। এরই মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে বহিষ্কার করা হয়েছে ১২ জন নেতাকে। দলের জন্য দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম করলেও সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট করায় এসব  নেতাকর্মীদের সহসাই ‘কপাল পোড়ার’ আশঙ্কা আছে। এমনকি ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে প্রার্থী হওয়াদের বহিষ্কারে কেন্দ্রে সুপারিশও পাঠানো হয়েছে।

BNPএ বিষয়ে বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। সেখানে যারা প্রার্থী হবেন তাদের বিষয়ে কোনো ছাড় নয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দল তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।’

যদিও দলের বাইরে গিয়ে ভোট করা কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভাষ্য- স্থানীয়দের চাপে পড়ে নির্বাচনে থাকতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে তাদের প্রত্যাশা পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে একসময় বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করবে বিএনপি। কারণ, এর আগেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়া অনেক প্রার্থীকে বহিষ্কার করার পর আবারও দলে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যাতে আশার আলো দেখছেন এসব নেতাকর্মীরা।

>> আরও পড়ুন: মেয়র প্রার্থী রূপনকে নিয়ে ‘বিরক্ত’ বরিশাল বিএনপি


বিজ্ঞাপন


এদিকে, আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠেয় কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ১২ জন নেতাকে ইতোমধ্যে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এছাড়া এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরওয়ার কামালসহ পাঁচজন কাউন্সিল প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। তবে আজীবনের জন্য বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ১২ কাউন্সিল প্রার্থীর কেউই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। বহিষ্কৃত এসব প্রার্থীদের মধ্যে পাঁচজন পৌরসভার বর্তমান কাউন্সিলর।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া আগামী ১২ জুন খুলনা ও বরিশালে এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটির ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।

BNPবিএনপির পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা থাকলেও আশঙ্কা ছিল মেয়র পদে কেউ কেউ লড়বেন। তবে শেষ পর্যন্ত পাঁচ সিটিতে মেয়র পদে কেউ অংশ নেননি। এরমধ্যে সিলেটের আরিফুল হক চৌধুরী অংশ নেওয়ার কথা বললেও শেষ মুহূর্তে দলের সিদ্ধান্তে সরে এসেছেন ভোট থেকে। কিন্তু সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে অনেক পদধারী নেতা নির্বাচন করায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা ভেতরে-ভেতরে অনেকটা বিব্রত। তাই দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে ভোটে যাওয়া নেতাদের বহিষ্কারে অনড় হাইকমান্ড।

অবশ্য, গাজীপুরে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের যে ২৯ জন নেতাকর্মী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, তাদের আজীবন বহিষ্কার করা হলেও ভোটের লড়াইয়ে জিতেছেন ১১ জন। এরমধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডের ১০ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হয়েছেন একজন।

এদিকে, সিলেট সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে ৪২টি ওয়ার্ডে সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক- এমন ৩২ জন নেতার সন্ধান পেয়েছিল বিএনপি। পরে সম্ভাব্য এসব কাউন্সিলর প্রার্থীদের দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে গত ১৫ মে চিঠি দেওয়া হয়। যেখানে প্রার্থী হলে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের কথাও মৌখিকভাবে জানানো হয় সম্ভাব্য এসব প্রার্থীদের।

পরে অবশ্য আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে চাপে পড়েন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ওই সময় আরিফুল নিজেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন। ফলে গত ২৩ মে পর্যন্ত বিএনপির ১৪ নেতা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দেন।

BNPফলে কেন্দ্রীয় নেতারা আশা করছেন, আগামী ১ জুন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়ের আগে আরও অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে পারেন।

অন্যদিকে, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে অংশ নেওয়া ১৯ প্রার্থীর তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়েছে বিএনপি। এখানে মেয়র পদে সিটির সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা আহসান হাবীব কামালের ছেলে মো. কামরুল আহসান রুপন প্রার্থী হয়েছেন। সাবেক এই ছাত্রদল নেতার অবশ্য বিএনপির কোনো পদে নেই।

তবে শিগগিরই এই সিটিতে প্রার্থী হওয়াদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপির বরিশাল মহানগর আহ্বায়ক কমিটির দফতরের দায়িত্বে থাকা জাহিদুর রহমান রিপন।

ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপির ১৯ নেতাকর্মীর তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিষয়ে কী ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেই নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে তাদের শোকজ করা হবে। এরপর বহিষ্কার। সবার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

>> আরও পড়ুন: বিএনপির ‘হুঁশিয়ারি’ আমলে নিচ্ছেন না ‘ছোট নেতারা’

এদিকে, খুলনায়ও বহিষ্কারের ঝুঁকি নিয়েই ভোটে বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি- ভোটারদের চাপে নিরুপায় হয়েই তাদের প্রার্থী হতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিগত দিনে খুলনা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে তিনবার জয় পেয়েছেন বিএনপি নেতারা, বাকি দুবার জিতেছে আওয়ামী লীগ। আবার বিএনপির জেলা ও মহানগরীতে শক্তিশালী ভিত্তি রয়েছে। এরমধ্যে মেয়র পদে অব্যাহতি পাওয়া নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুর প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন থাকলেও তিনি মনোনয়নই নেননি। কিন্তু বিএনপির অন্তত আট নেতাকর্মী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। এরমধ্যে এবারের নির্বাচনে বিএনপির নেতাকর্মী যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের অনেকেই আগে কাউন্সিলর ছিলেন বা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন বলে জানা গেছে।

BNPঅন্যদিকে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টিতেই বিএনপি নেতারা কাউন্সিলর পদে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়াও বিএনপি সমর্থক কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরও এবার রাজশাহী সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে তাদের কারও বর্তমানে দলীয় কোনো পদে নেই।

যদিও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট ও রাজশাহীর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ হওয়ার পর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা আসতে পারে।

এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সময় হলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহানগর কমিটি দু-একের মধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠাবে। যারা সংগঠন বহির্ভূত কর্মকাণ্ড করছে তাদের বিরুদ্ধে সুপারিশের জন্য অলরেডি আলোচনা হয়েছে।’

নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলীয় নেতাদের মনোনয়ন প্রত্যাহারে উদ্যোগ নেওয়ার প্রশ্নে রাসিকের সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘এটা তো ঢাকা থেকে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত। মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, দফতর সম্পাদক বলে দিয়েছেন, তারপরও যোগাযোগের দরকার কি! যারা মোনাফেকি করবে, তাদের আবার বলে লাভ আছে?’

>> আরও পড়ুন: সিটির ভোটেই ‘ঘুম হারাম’

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে নগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আগামী ১ জুন মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। সেই জন্য আমরা তার পরদিন ফাইনাল করে তাদের আজীবনের জন্য সদস্য থেকে বহিষ্কার করতে সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেব।

মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য চেষ্টা করা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে ঈশা বলেন, ‘তাদেরকে তো দাঁড়াতেই নিষেধ করছি আমরা।’

কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের পরও নেতাকর্মীদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে না পারার কারণ কী- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘যারা ভোটে লড়ছেন তারা হয়তো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে অনেকদিন ধরে আছেন বলে আবারও প্রার্থী হচ্ছেন। কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে তারা দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলবেন এমন প্রত্যাশা ছিল। যারা সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের ব্যাপারে নিশ্চয়ই শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিইউ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর