বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বিএনপির ‘হুঁশিয়ারি’ আমলে নিচ্ছেন না ‘ছোট নেতারা’

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ২০ মে ২০২৩, ১০:০৬ পিএম

শেয়ার করুন:

বিএনপির ‘হুঁশিয়ারি’ আমলে নিচ্ছেন না ‘ছোট নেতারা’
ফাইল ছবি

বিএনপি বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সব ধরনের ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলেও তৃণমূলের নেতাদের নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে দলটি। বিশেষ করে আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে পারলেও সমস্যা হচ্ছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে। বারবার হুঁশিয়ারি দিলেও তা আমলে নিচ্ছেন না কাউন্সিলর পদে লড়তে আগ্রহী থানা ও ওয়ার্ড বিএনপির পদধারী নেতারা। দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও আছেন এই তালিকায়।

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ভোটে গেলে কঠোর হওয়ার কথা একাধিকবার বলেছে বিএনপির হাইকমান্ড। গাজীপুরের এমন ২৯ জনকে আজীবন বহিষ্কারও করা হয়েছে। এরপরও অন্য ৪টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। অবশ্য কিছু কিছু নেতা শুরুতে আগ্রহী হলেও এখন ভোটে অনীহার কথা জানাচ্ছেন।


বিজ্ঞাপন


মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে সর্বশেষ সিলেটের আরিফুল হক চৌধুরী অনেক নাটকীয়তার পর আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন, তিনি দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে ভোটে থাকছেন না। এজন্য তিনি সবার কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। যদিও লন্ডন থেকে ফিরে তিনি ভোটে অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ দশা বিএনপি নেতাকর্মীদের

আরিফুল হক শনিবার (২০ মে) সিলেটে এক অনুষ্ঠনে বলেন, আমি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেছি। জীবন থাকতে দলের ক্ষতি হয় এমন সিদ্ধান্ত নেব না। অনেকে আমাকে উকিল আব্দুস সাত্তার বানানোর চেষ্টা করেছেন। আমি সে সুযোগ কাউকে দিতে চাই না, আর দেব না।

ভোটে না থাকার কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, এই সরকার মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। বিশেষ করে ইভিএম সম্পর্কে নগরীর মানুষজন জানে না। ইভিএম মানে ভোট কারচুপির মহা-আয়োজন। আমি দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, আমার মা এবং শ্রদ্ধেয় আলেম-ওলামাদের পরামর্শে নির্বাচন বর্জন করলাম। আপনারা আমাকে ক্ষমা করুন।


বিজ্ঞাপন


বরিশালে শেষ পর্যন্ত বিএনপির কোনো নেতা মেয়র পদে না লড়লেও সাবেক মেয়রের ছেলে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা কামরুল আহসান রূপম মেয়র পদে লড়ছেন। রাজশাহীতে সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে নিয়ে আলোচনা থাকলেও তিনি ভোটে লড়ছেন না। খুলনায় আগের মেয়রপ্রার্থী ও দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া নজরুল ইসলাম মঞ্জুর কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন না করার সম্ভাবনা আছে।

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ভোটে গেলে কঠোর হওয়ার কথা একাধিকবার বলেছে বিএনপির হাইকমান্ড। গাজীপুরের এমন ২৯ জনকে আজীবন বহিষ্কারও করা হয়েছে। এরপরও অন্য ৪টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। অবশ্য কিছু কিছু নেতা শুরুতে আগ্রহী হলেও এখন ভোটে অনীহার কথা জানাচ্ছেন।

ভোটে যাওয়ার বিষয়ে বরিশালের মেয়রপ্রার্থী কামরুল আহসান রূপম ঢাকা মেইলকে বলেন, দল নির্বাচনে যাবে কি না তা হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। কিন্তু আমি বাবার অনুসারী ছাড়াও দলের নেতাকর্মীদের একটি অংশের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। ভোটে লড়াই করে সরকারের অধীনে যে ভোট সুষ্ঠু হয় না সেটা প্রমাণ করার সুযোগ পাব।

অন্যদিকে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদ হাসান প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা গেলেও গত বৃহস্পতিবার তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: প্রার্থী হচ্ছেন না মেয়র আরিফুল হক

মেয়র পদে আলোচিতদের যখন এই অবস্থা তখন কাউন্সিলর প্রার্থীদের কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। অবশ্য প্রার্থী ও আগ্রহীদের দাবি, একাধিকবার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করায় দলের বাইরে ও স্থানীয়দের চাপে ভোটে থাকতে হচ্ছে।

তবে কাউন্সিল প্রার্থীদের ব্যাপারে আপাতত বিএনপির নমনীয় হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। বরং বারবার সাবধান করে দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভোটারদেরও ভোট দান থেকে বিরত থাকতে বলেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যারা ভোটে যাবে তাদের বিরুদ্ধে দল শক্ত অবস্থানে থাকবে। ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত কার্যকর করা শুরু হয়েছে।

কোন সিটিতে কী হাল?

আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচন। খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচন ১২ জুন। এই দুই সিটিতে ২৫ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। সিলেট ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৩ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ১ জুন। আর ভোটগ্রহণ ২১ জুন।

দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৩০ নেতা কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। প্রথমে দল থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পরে একজন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। বাকি ২৯ জনকে আজীবন বহিষ্কার করেছে দলটি।

গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাদের বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।

আরও পড়ুন: নির্বাচনে অংশ নিলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি বিএনপির

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্যদিয়ে বিএনপি অন্য সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাদের কঠোর বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এরপরও বাকি চার সিটিতে কাউন্সিলর পদে ভোট করতে বিএনপির অনেক নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সিলেটে মেয়র পদে আরিফুল হক প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দিলেও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হতে চেষ্টা করছেন অনেকে। যদিও এরইমধ্যে প্রার্থী না হতে সিলেটের ৩২ নেতাকে মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

দলের দুই শতাধিক নেতা এরইমধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে রয়েছেন। অনেকে শেষ মুহূর্তে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন বলে আলোচনা আছে।

জানা গেছে, বরিশালের অন্তত ২৪টি ওয়ার্ডে বিএনপির বর্তমান ও সাবেক ২৫ নেতা কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে তিনজন বর্তমান মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। পাঁচজন সদস্য। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ১০টি পদের মধ্যে ৭টিতে দলের বর্তমান ও সাবেক পদধারীরা প্রার্থী হয়েছেন।

সিলেটে মেয়র পদে আরিফুল হক প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দিলেও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হতে চেষ্টা করছেন অনেকে। যদিও এরইমধ্যে প্রার্থী না হতে সিলেটের ৩২ নেতাকে মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

চিঠি পাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডে টানা চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তিনি মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। আরিফুল হক ভোটে না থাকার ঘোষণার পর সিলেটে আরও অনেকের সরে আসার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (আরসিসি) নির্বাচনে বিএনপিপন্থী অন্তত ২৫ জন কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে মেয়র পদে বিএনপির কোনো প্রার্থী থাকছেন না।

এদিক থেকে অবশ্য খুলনায় কাউন্সিলর পদে দলটির পদধারী মাত্র দুজন নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনের মাঠে থাকবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে।

বিএনপির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, আগে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের উদাহরণ আছে। এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। শেষ পর্যন্ত এদের আর দলে ফেরত নেওয়ার সম্ভাবনা কম।

বিইউ/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর