সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছে বিএনপি। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকারবিরোধী আরও বেশ কয়েকটি সমমনা রাজনৈতিক জোট, দল ও সংগঠন। যাদের সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি।
এই ১০ দফা দাবি আদায় এবং নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি ও বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে পবিত্র রমজানের আগে আগামীকাল শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশে বড় শোডাউন করতে চায় বিএনপি। আগামী ২৪ মার্চ থেকে রমজান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তাই রমজানে 'ইফতার রাজনীতি' ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে যাওয়ার আগে এইদিন ঢাকায় ব্যাপক লোকসমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। তবে এ ক্ষেত্রে সংঘাত এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে শোডাউন করতে চায় দলটি।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির অর্জন কী?
সূত্র জানায়, পবিত্র রমজান মাসেও চলমান আন্দোলন কর্মসূচি চারিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দেয় দলটির হাইকমান্ড। এর প্রতি পূর্ণ সমর্থন দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দলীয় সমর্থক সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে বিএনপি। প্রতিটা বৈঠকেই জনপ্রতিনিধিদের মতামত শোনেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের শীর্ষ নেতারা। রমজানের মধ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের মতামত জানতে চাইলে তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দেন। তবে রমজান মাসে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন কর্মসূচিতে না যাওয়ার পরামর্শ দেন তারা। জনপ্রতিনিধিদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে রমজান মাসে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকতে পারে বিএনপি।
তবে সূত্র আরও জানায়, নির্বাচন ও আন্দোলনের বছর হওয়ায় আসন্ন রমজানে ঘরোয়া রাজনীতির পাশাপাশি জনসম্পৃক্ত ইস্যু নিয়েও মাঠে সক্রিয় থাকতে পারে বিএনপি। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-বিদ্যুতের দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধিসহ জনদুর্ভোগ এবং সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের প্রতিবাদে আন্দোলনের থাকা বিএনপির পক্ষ থেকে রমজানে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।
বিএনপি নেতারা জানান, শনিবারের সমাবেশ সফল করার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সব মহানগরে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের প্রস্তুতির সভা সম্পন্ন হয়েছে। সর্বোচ্চ নেতাকর্মী সমর্থক উপস্থিত নিশ্চিত করার জন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে, পাড়ায়, মহল্লায় মিটিং যৌথ সভা মতবিনিময় সভা, গণসংযোগ চলছে। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সমাবেশে উপস্থিত নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে রমজানের পর দাবি আদায়ে বিএনপি যে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবে, সরকারকে সেই বার্তা দিতে চায় দলটি।
আরও পড়ুন: জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যে কৌশলে মাঠে থাকবে বিএনপি
জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালে প্রিন্স ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘যেখানে পদযাত্রার মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা হয়, সেখানে সমাবেশের মতো কর্মসূচিতে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকাটাই স্বাভাবিক। পবিত্র রমজানের মাসেও আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ১৮ মার্চ সমাবেশের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সমাবেশ সফল করার জন্য ইতোমধ্যে সকল মহানগরে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের প্রস্তুতির সভা সম্পন্ন হয়েছে। সমাবেশে সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মী সমর্থক উপস্থিত নিশ্চিত করার জন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে, পাড়ায়, মহল্লায় মিটিং, যৌথ সভা, মতবিনিময় সভা ও গণসংযোগ চলছে। একই সাথে কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘শনিবার ১৮ মার্চ সমাবেশের জন্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া রমজান মাসব্যাপী বিএনপির কর্মসূচি থাকবে। ধারাবাহিকভাবে আসবে একের পর এক কর্মসূচি। আগামীকাল দলের মহাসচিব কর্মসূচি ঘোষণা দেবেন, এছাড়া ২৬ মার্চ উপলক্ষেও কর্মসূচি রয়েছে।’
মজনু বলেন, ‘রমজান মাসে ইফতার মাহফিল ছাড়াও সাংগঠনিক কার্যক্রম চলবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ারসহ নেতাকর্মীদের মুক্তি অবৈধ সংসদ বাতিল, সরকারের পদত্যাগ, মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে যে কর্মসূচি রয়েছে তা চলমান থাকবে। এর বাইরে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী রাস্তার কর্মসূচিও থাকতে পারে।’
আরও পড়ুন: আন্দোলনের জন্য কতটা প্রস্তুত ঢাকা মহানগর বিএনপি
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর বিএনপি'র সদস্য সচিব আমিনুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘১৮ মার্চ রমজানের আগে সমাবেশ এবং রমজানের পরেও কর্মসূচির বিষয়ে সিনিয়র নেতারা যেভাবে নির্দেশনা দেবেন সেভাবেই করব। শনিবার সমাবেশের জন্য আমাদের প্রস্তুতি খুবই ভালো প্রস্তুতি রয়েছে। কারণ আমরা প্রতিটি কর্মসূচি সফল করার জন্য গুরুত্ব সহকারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকি। আন্দোলনের যে যুদ্ধে নেমেছি সেই যুদ্ধে জয়ী হতে হলে প্রত্যেকটি কর্মসূচি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর গুরুত্ব সহকারেই প্রতিটি কর্মসূচি সফলের চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
এমই/জেবি