সোমবার, ৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

তৃণমূলে কর্মসূচি: কী বার্তা দিতে চায় বিএনপি?

মো. ইলিয়াস
প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৬:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

তৃণমূলে কর্মসূচি: কী বার্তা দিতে চায় বিএনপি?

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে আগামীকাল শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে দলটি। এভাবে উপজেলা, জেলা, বিভাগ পর্যায়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে সব শ্রেণির মানুষকে এক সুঁতোয় গেঁথে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাওয়ার কথা ভাবছে প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। 

আরও পড়ুন: যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির অর্জন কী?


বিজ্ঞাপন


গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। ২৪ ডিসেম্বর এই কর্মসূচি শুরুর কথা থাকলেও আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল থাকার কারণে দলটির অনুরোধে ৩০ ডিসেম্বর কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। যুগপৎভাবে বিক্ষোভ, সমাবেশ, পদযাত্রা ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। আপাতত এভাবেই কর্মসূচি চালিয়ে যাবে দলটি। 

সূত্র জানায়, যেহেতু এখনো নির্বাচনের বাকি প্রায় ১১ মাসের মতো তাই এখনই কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি। চলমান কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মীদের চাঙা রাখাই হচ্ছে বিএনপির মূল লক্ষ্য। ধাপে ধাপে সরকার পতনের জন্য কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে চায় বিএনপি। সেই আন্দোলনে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুরসহ সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণের লক্ষ্যে কাজ করছে দলটি। এই লক্ষ্যে আগামীকাল শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। 

BNP2


বিজ্ঞাপন


জানা গেছে, ইউনিয়নে পদযাত্রার পর ধাপে ধাপ উপজেলা, জেলা, মহানগর ও বিভাগীয় পর্যায়ে দেওয়া হবে কর্মসূচি। এরপর রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে 'লংমার্চ' বা 'ঘেরাও'-এর মতো কর্মসূচি আসতে পারে। যেখান থেকে সরকার হটানোর এক দফার আন্দোলন শুরু হবে। তবে এই কর্মসূচি কখন হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছ, দলের ভেতরে মূল্যায়ন হলো, জনস্বার্থ ইস্যুতে আন্দোলনসহ বেশকিছু কারণে বিএনপিকে নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের স্বপ্ন তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় রাজনীতিতে তারা আর কোনো ভুল করতে চায় না। বরং অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সমমনা দল ও জোটকে সঙ্গে নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য তাদের। তৃণমূল থেকেই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে তারা বার্তা দিতে চায়- সরকার তাদের দাবি মেনে না নিলে জনগণকে নিয়ে কঠোর আন্দোলন করতে বাধ্য হবে।

আরও পড়ুন: আন্দোলনের জন্য কতটা প্রস্তুত ঢাকা মহানগর বিএনপি

ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি ঘোষণার উদ্দেশ্য জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা মেইলকে বলেন, কর্মসূচিগুলো উদ্দেশ্য একটাই, সেটা হচ্ছে জনগণকে সম্পৃক্ত করা। যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আন্দোলন করছি, জনগণকে সে বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন করা এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এটাই হচ্ছে মূল উদ্দেশ্য।

তৃণমূল পর্যায়ে কী বার্তা থাকবে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ‘যেসব বিষয় নিয়ে আমরা আন্দোলন করছি সে বিষয়গুলো মানুষের কাছে পৌঁছানোটাই হচ্ছে মূল বার্তা। সেটা হচ্ছে দ্রব্যমূল্য হ্রাস করা, সরকারের পদত্যাগ, ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন।’

ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি দেওয়ার উদ্দেশ্য জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘যে উদ্দেশ্যে আমরা বিভাগীয় কর্মসূচি পালন করেছি, পদযাত্রা করেছি, জেলা পর্যায়ে করেছি, উপজেলা পর্যায়েও সমাবেশ করেছি; সেই উদ্দেশ্যেই ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই- ১০ দফা দাবি আদায়। ১০ দফা দাবির একটি হচ্ছে এই সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। এই দাবিগুলো আদায়ের জন্য আমরা ইউনিয়ন পর্যন্ত কর্মসূচি দিয়েছি।’

BNP3

আপনারা কি মনে করেন তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন আরও জোরালো করতে পারবেন? এমন প্রশ্নে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আন্দোলন জোরালো করার উদ্দেশ্য নিয়েই আমরা এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আমরা জনগণের জন্য এই আন্দোলন করছি, জনগণ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে, দেশে গণতন্ত্র নেই বলেই জনগণ এসবের শিকার। গণতন্ত্র নেই বলেই আজকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জনগণের সরকার নেই বলেই সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম বৃদ্ধি। আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট এবং সরকার মিলেই এসব করছে। এর জন্য জনগণই ভুক্তভোগী অর্থাৎ জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্যই ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।’

আরও পড়ুন: ‘মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়েই জনগণ রাস্তায় নেমে গেছে’

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তৃণমূল থেকে নেতাকর্মী এবং জনগণকে আগামীতে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে তাদের অবহিত করা। এই আন্দোলনে আমরা তাদের সম্পৃক্ত করতে চাই। সরকারকে বার্তা দিতে চাই- ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশের মানুষ তোমাদের বিরুদ্ধে, মানুষের মতামতকে যদি সম্মান না করো, নিজেরা যদি পদত্যাগ না করো, ক্ষমতায় থাকতে চাও তাহলে আমরা জনগণকে নিয়ে কঠোর আন্দোলন করতে বাধ্য হবো।’

শাজাহান ওমর বলেন, ‘আমরা এই আন্দোলন কেন করছি, কী জন্য করছি এবং আন্দোলনের পরে কী হবে, কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করব সবকিছু আমরা জনগণের কাছে ওপেন করতে চাই। জনগণের আন্দোলন, জনগণের সরকার, জনগণের রাষ্ট্র; এটা বলি কিন্তু জনগণকে কিছুই জানাবো না, সেই রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। যা কিছু করব জনগণের সম্মতি নিয়ে করব। আগামীতে দেশ কীভাবে চলবে সেটা ২৭ দফার মাধ্যমে আমরা জনগণকে স্পষ্ট করেছি।’

এমই/জেবি 

 

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর