বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়েই জনগণ রাস্তায় নেমে গেছে’

মো. ইলিয়াস
প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০২২, ১২:২১ পিএম

শেয়ার করুন:

‘মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়েই জনগণ রাস্তায় নেমে গেছে’

বিগত সময়ের আন্দোলন, সামনের পরিকল্পনা এবং শরীকদের সঙ্গে দলের অবস্থানসহ চলমান রাজনীতির নানা দিক নিয়ে ঢাকা মেইলের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। 

তার কথায় উঠে এসেছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একমতের আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার। বিএনপির এই শীর্ষ পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মেইলের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. ইলিয়াস


বিজ্ঞাপন


ঢাকা মেইল: আপনি চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশের দায়িত্বে ছিলেন। বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা খুবই উজ্জীবিত। আসলে ভবিষ্যৎ আন্দোলন কোন দিকে যাচ্ছে?
আমীর খসরু: আন্দোলন যাচ্ছে জনগণের মালিকানা ফিরে পাবার দিকে। জনগণ যেটা হারিয়েছে সেটা ফিরে পাবার দিকে। বাংলাদেশকে ফিরে পাবার আন্দোলন এটা। বাংলাদেশ হারিয়ে গেছে, বাংলাদেশের আত্মাও হারিয়ে গেছে। বাংলাদেশকে ফিরে পেতে হবে, বাংলাদেশের আত্মাও ফিরে পেতে হবে। রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক যে অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে সেটাকে ফিরে পাওয়ার আন্দোলন। দেশকে আজকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুৎহীনভাবে। গ্যাসের অভাবে মানুষ রান্নাবান্না করতে পারছে না, ফ্যাক্টরি চালাতে পারছে না, উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তারপরে মানুষ দুবেলা খেতে পারছে না। ৪০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে চলে গেছে। মানুষ ঢাকামুখী হয়ে গেছে গ্রামাঞ্চলে চাকরি-বাকরি নেই, মেইল ফ্যাক্টরিতে প্রোডাকশন কমে যাচ্ছে, বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের অভাবে। এই ভয়াবহ একটি অবস্থা। 

তিনি বলেন, সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে মানুষের জীবনের নিরাপত্তাহীনতা। গুম, খুন, হত্যা, মিথ্যা মামলা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া, ভাঙচুর করা, সমস্ত অধিকারগুলোকে কেড়ে নেওয়া, মানবাধিকার কেড়ে নেওয়া। সব কিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ সেখান থেকে মুক্ত হবার যে আকাঙ্ক্ষা, সে আকাঙ্ক্ষা নিয়েই জনগণ রাস্তায় নেমে গেছে। এমন ভাবে নেমে গেছে তাদের জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে কী- আত্মত্যাগের একটি বিষয় চলে আসছে। জনগণ আত্মত্যাগের সিদ্ধান্ত যখন নেয় যেটা মুক্তিযুদ্ধের সময় নিয়েছিল সে বিষয়টি কিন্তু পুনর্বার ফিরে এসেছে। আত্মত্যাগ অর্থাৎ নিজের জীবন দিয়ে হলেও দেশকে বাঁচাতে হবে। মানুষ যখন নিজের জীবন দিতে প্রস্তুত হয় তখন তাকে তো আর বাধাগ্রস্থ করা যায় না। ভাষা আন্দোলনের সময় পারে নাই, স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ও পারে নাই, স্বৈরাচার বিরোধী যে আন্দোলন হয়েছে তখনও পারেনি। আমি মনে করি এগুলোর চেয়েও বেশি আজকে। হাজার হাজার মানুষ জনসভায় যোগ দেওয়ার জন্য রাস্তায় ঘুমাচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে করে মানুষ সমাবেশে উপস্থিত হচ্ছে, ট্রলারে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমাবেশে উপস্থিত হচ্ছে। ৫০ থেকে ১০০ মাইল হেঁটে সমাবেশে যোগ দিচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে। আক্রান্ত হচ্ছে কিন্তু তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না। সুতরাং এই যে অবস্থায় চলে আসছে, জনগণ এখান থেকে তো ফিরে যাবে না, মুক্তি নিয়েই তারা ঘরে ফিরে যাবে এটাই জনগণের আকাঙ্ক্ষা।

ঢাকা মেইল: সমাবেশ করে কী অর্জন করছে বিএনপি? 
আমীর খসরু: সমাবেশে অর্জন বড় কথা নয়। সমাবেশ হচ্ছে জনসংযোগের বিষয়। সমাবেশ থেকে বড় হচ্ছে সমাজে, দেশে মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে। মানুষের রাজনৈতিক জীবন, সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এখান থেকে মুক্তির জন্য আজকের সমাজের সর্বস্তরের জনগণ জেগে উঠেছে। তার প্রতিফলন হচ্ছে জনসমাবেশ। জনসমাবেশ হচ্ছে তার একটি প্রতিফলন কিন্তু বিভিন্ন দিকে তার প্রতিফলন ঘটছে। আগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলতে মানুষ ভয় পেত কিন্তু এখন ভয় পাচ্ছে না। মানুষ তাদের মতামত প্রকাশ করছে। ভয়ের যে সংস্কৃতি সৃষ্টি করে তারা এতদিন ক্ষমতায় টিকে রয়েছে সেই ভয়কে জনগণ জয় করে ফেলেছে। এখন তারা জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। ফ্যাসিস্টের টিকে থাকার প্রধান দিক হচ্ছে ভয়ের সাংস্কৃতি সৃষ্টি করা। যখন ভয়ের সংস্কৃতি শেষ হয়ে যায় মানুষ এটাকে জয় করে ফেলে তখন কিন্তু ফ্যাসিস্টকে বিদায় নিতে হয়। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সেই ঘটনা ঘটছে। ভয়ের সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা এই সংস্কৃতি থেকে জনগণ বেরিয়ে আসছে। জনগণ সেটাকে জয় করেছে সুতরাং ফেসিস্টের বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গেছে।

ঢাকা মেইল: বাধা বিপত্তির পরও নেতাকর্মী সরব উপস্থিতির কারণ কী? 
আমীর খসরু: একটি হচ্ছে মানুষের অর্থনৈতিক চাপ আরেকটি হচ্ছে সে দুইবেলা খেতে পারছে না। লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে মানুষ অন্ধকারে নিমজ্জিত। লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করে তেলের ব্যবসা করেছে কিন্তু আজকের তেল নেই বাংলাদেশ। তেলের অভাবে প্রতিটা ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়ে গেছে। মানুষের জীবন অনাহারে অর্ধাহারে চলছে। ৪০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে চলে গেছে। মানুষের একদিকে অর্থনৈতিক জীবন যাত্রার মান কমে গেছে। চলতে পারছে না, খেতে পারছে না, চাকরি-বাকরি নেই। অন্যদিকে রাজনৈতিক অধিকার সব কেড়ে নিয়েছে। ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছি, বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে, তার জীবনের নিরাপত্তা কেড়ে নিয়েছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা করে নিয়েছে, বিচার ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই, মানুষ বিচারহীনতায় ভুগছে। সুতরাং তার নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে, রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে, সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। মানুষ সবদিক থেকে বঞ্চিত, জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মানুষের পিঠ দেয়ালে থেকে গেছে তাই আজকে মাঠে নেমেছে, তার অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য, মালিকানা ফিরে পাওয়ার জন্য। যেটা তারা (সরকার) কেড়ে নিয়েছিল। 


বিজ্ঞাপন


ঢাকা মেইল: বিএনপি যুগপৎ আন্দোলন শুরু করবে। সেটা কবে নাগাদ আলোর মুখ দেখতে পারে?
আমীর খসরু: এটা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কর্মসূচি পালন করছে, রাস্তায় নেমে যার যার অবস্থান থেকে কাজ শুরু করে দিয়েছে। বিএনপির বড় দল হিসেবে দেখা যাচ্ছে কিন্তু ওরা ছোট দল হিসেবে তেমন দেখা যায় না। ওদেরটা হয়তো নজরে আসেনি কিন্তু নজরে আসবে। ওরা ওদের কার্যক্রম আস্তে ধীরে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকে শুরু করছে বাকিরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেকে সেই আন্দোলনে নেমে গেছে।

তিনি বলেন, রূপরেখা একটাই এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। সেই নিরপেক্ষ সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে, তারা নির্বাচনে জঞ্জাল পরিষ্কার করে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে। জনগণ ভোট প্রয়োগ করে তাদের নির্বাচিত সংসদ সরকার গঠিত করবে। যারা জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যে সকল দল কাজ করবে তাদেরকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। জাতীয় সরকার দেশ মেরামতের কাজ করবে। তারা রূপান্তর মূলক দেশ সংস্কার করবে। 

ঢাকা মেইল: জোটের শরিকদের বাদ দিয়ে এককভাবে কর্মসূচি পালন করে বিএনপি কি নিজেদের শক্তির জানান দিচ্ছে?
আমীর খসরু: জোটের শরিকদের বাদ দেওয়ার প্রশ্ন আসে না। যার যার অবস্থান থেকে সকলে একই লক্ষ্যে চলছি। যুগপৎ আন্দোলন মানে কাউকে বাদ দেওয়া নয়। যুগপৎ অর্থ হচ্ছে সবাইকে নিয়ে কাজ করার একটি ভিন্ন প্রক্রিয়া। অর্থাৎ যার যার অবস্থান থেকে একই লক্ষে আমরা চলছি। কেউ ডানে কেউ বামে কেউ সামনে পিছনে লক্ষ্যমাত্রা এক জায়গায় গন্তব্যস্থান একটাই। সুতরাং আমরা সকলে ঐক্যমত হয়েছি। চলার পথে চলতে চলতে যখন যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন তখন সেটাই না হবে। যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত কিন্তু সকলে মিলে নিয়েছে। এটা বিএনপি’র একার কোনো সিদ্ধান্ত নয়। বিশ দলের মধ্যে আলোচনা হয়েছে, এর বাইরে ২২ দলের যাদের সাথে আলোচনা হয়েছে সকলে কিন্তু ঐক্যমতের ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা বিএনপির একার সিদ্ধান্ত নয়। 

ঢাকা মেইল: আলোচনায় ১০ ডিসেম্বর। আসলে কী হবে সেদিন? মহাসমাবেশ থেকে কোন ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা আসতে পারে?
আমীর খসরু: দিনক্ষণ ঘোষণা দিয়ে কোনো আন্দোলন হয় না। আন্দোলনের নিজস্ব গতি-প্রকৃতি রয়েছে। আন্দোলন তার নিজস্ব পথ বেছে নেয়। ১০ ডিসেম্বর আসতে আসতে দেশ কোন পথে চলবে, যে চলমান আন্দোলন সেটা তার নিজে গতিতে সিদ্ধান্ত আসবে। আগেভাগে বলে-কয়ে কোনো আন্দোলন হয় না; বলে-কয়ে সরকারের পতনও হয় না। দেশের মানুষ যখন সিদ্ধান্ত নেয় তখন সরকারের পতন হয়। বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের পতন হবে এটা কি এক মাসে হবে, নাকি দুই মাসে হবে, আপনাকে তিন মাসে হবে সেটার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি দেওয়া রয়েছে এটা চলুক এবং চলতে চলতে যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকার পতনের জন্য যে সিদ্ধান্তের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ঢাকা মেইল: সরকারি দল বলছে ডিসেম্বর মাসে বিএনপিকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না। বিএনপি কী মাঠে থাকতে পারবে? 
আমির খসরু: সেটা বাংলাদেশের জনগণ উত্তর দিবে বিএনপি দেবে কেন? কারণ দেশ তো সকলের। বাংলাদেশের মালিক হচ্ছে জনগণ, আওয়ামী লীগ তো দেশের মালিক নয়। দেশের মালিক সিদ্ধান্ত নেবে, ১০ ডিসেম্বর কি হবে ১০ ডিসেম্বরের পরে কি হবে। বাংলাদেশের সংবিধানে যে অধিকার দেওয়া আছে, যারা এ সকল কথা বলে তারা কি দেশের মালিক হয়ে গেছে নাকি? তাদের এই কথা বলার কারণ জনগণ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন, জনগণের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। জনগণের উপর তাদের কোনো আস্থা নেই সুতরাং তাদের এই পথ বেছে নিতে হয়। আমাদের নির্ভরতা জনগণের উপর তাদের নির্ভরতা অন্য জায়গায়। জনগণের উপরে তাদের আস্থা নেই সুতরাং তাদের নির্ভরতা হচ্ছে বাধা দেওয়া, দখল করা, আর এ ধরনের বক্তব্য দিতে থাকবে আর আমরা জনগণকে নিয়ে চলতে থাকব কার বিজয় হয় সেটা সেটা জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।

ঢাকা মেইল: ডিসেম্বরে বিএনপিকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না সরকারি দলের এমন বক্তব্যে সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে কিনা?
আমির খসরু: যারা সংঘাতের রাজনীতি করতে চায় তারা তো এ ধরনের বক্তব্যই দেবে। অগণতান্ত্রিক বক্তব্য, অসাংবিধানিক, অরাজনৈতিক, অনৈতিক বক্তব্য। কারণ তাদের নীতি নৈতিকতা জনগণের উপর আস্থা হারিয়ে এ ধরনের পথ বেছে নিয়েছে। সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে ভয়-ভীতি সৃষ্টির পথ বেছে নিয়েছে, ভয়-ভীতির সংস্কৃতির মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিন্তু সম্ভব নয়। দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা সামনে এগিয়ে যাবে। ভয়-ভীতির পরিবেশ যেটা সৃষ্টি করেছে সেটা শেষ হয়ে গেছে। সময় শেষ। ফ্যাসিস্টদের একটি সেলফ লাইফ রয়েছে কিছু দিন থাকে।

এমই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর