বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নয়াপল্টন ‘পাচ্ছে না’ বিএনপি

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:৩৪ এএম

শেয়ার করুন:

নয়াপল্টন ‘পাচ্ছে না’ বিএনপি

আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশের জন্য বিএনপির অনুমতি পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। উল্টো বিভাগীয় পর্যায়ের সর্বশেষ এই সমাবেশ নিয়ে গ্রেফতার, মামলাসহ নানামুখী চাপে পড়েছে দলটি। এমন অবস্থায় ঢাকার সমাবেশের জন্য বিকল্প কোনো ভেন্যুর প্রস্তাব পেলে তা বিবেচনায় করবে বিএনপি। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ না করার ব্যাপারে অনড় দলটির নেতারা।

খালেদা জিয়ার মুক্তি, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, আন্দোলন চলাকালে নেতাকর্মী নিহত হওয়ার বিচার দাবি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশের কর্মসূচি নেয় বিএনপি। তারই শেষ ধাপে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে গত ২০ নভেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) চিঠি দেয় দলটি। সেই সমাবেশে বিপুল জনসমাগম ঘটিয়ে সরকারকে নিজেদের শক্তির জানান দিতে চায় তারা।


বিজ্ঞাপন


বিএনপির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ নভেম্বর বিএনপিকে ২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়। তবে বিএনপির দাবি, তারা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে এবং নয়াপল্টন ছাড়া অন্য কোনো ভেন্যু তারা চায়নি।

আরও পড়ুন: ঢাকায় সমাবেশ: পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে যে আলোচনা হলো বিএনপির

বিষয়টি নিয়ে বিএনপি অনড় অবস্থান নিলেও আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সমাবেশ করতে হলে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই যেতে হবে। নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি মিলবে না। একইসঙ্গে হুশিয়ার করে দেয়া হয়েছে, অনুমতি ছাড়া নয়াপল্টনে কর্মসূচি পালন করলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।

বিএনপির পাল্টা কৌশল হিসেবে ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সক্রিয় অবস্থায় রাখার চিন্তাও আছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।


বিজ্ঞাপন


‘হার্ডলাইনে’ সরকার

ঢাকায় বিএনপির এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও প্রভাবশালী মন্ত্রীরা কঠোর ভাষায় কথা বলেছেন। যদিও বিএনপির প্রস্তুতি নির্বিঘ্ন করতে ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ বদল করা হয়েছে বলে সরকারি দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি অসৎ উদ্দেশ্যে নয়াপল্টনে সভা করতে চায়। তারা যদি এ চেষ্টা করে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।

আরও পড়ুন: সোহরাওয়ার্দীতে যেতে কেন ‘ঘোর আপত্তি’ বিএনপির?

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, সমাবেশ করতে হলে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই করতে হবে। না করতে চাইলে নাই। নয়াপল্টনে তারা অনুমতি পাবে না। আর না পেলে সমাবেশ করতে পারবে না।

অন্যদিকে পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনও শনিবার এ নিয়ে কথা বলেছেন। বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে এমন আশার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, বিএনপিকে সমাবেশ করতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করার কথা বলছে। আমরা আশা করি যেখানে অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেখানেই তারা সমাবেশ করবে।

বিএনপিতে নরম সুর

বিএনপির সমাবেশ ঘিরে একদিকে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অন্যদিকে রাজধানীজুড়ে বেড়েছে পুলিশের তৎপরতা। এলাকাভিত্তিক রেইড দিয়ে চালানো হচ্ছে তল্লাশি। বিএনপির দাবি, গত চারদিনে তাদের ১ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুও রয়েছেন।

এমন অবস্থায় নয়াপল্টন নিয়ে বিএনপিতেও নরম সুর দেখা যাচ্ছে। সমাবেশের আগ পর্যন্ত এভাবে ধরপাকড় চললে দলটির শীর্ষ নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হতে পারে- এমন আশঙ্কায় নয়াপল্টন ছাড়তেও রাজি আছেন নেতারা। যার অংশ হিসেবে সোহরাওয়ার্দী ও নয়াপল্টন ছাড়াও বিকল্প কোনো ভেন্যু নিয়ে আলোচনায় রাজি তারা। এরইমধ্যে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে বিকল্প প্রস্তাবও চেয়েছেন নেতারা।

আরও পড়ুন: ১০ ডিসেম্বর কী বার্তা দেবে বিএনপি?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর বিএনপির একজন নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, সরকারকে ছাড় দেবে না- এটা মোটামুটি ধরেই নিয়েছি। কিন্তু দরকষাকষি করায় তো দোষের কিছু নেই।

বিকল্প প্রস্তাব পেলে বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, অবশ্যই সোহরাওয়ার্দী, তুরাগ নয়। এর বাইরে কোনো জায়গার প্রস্তাব আসলে কথা বলা যাবে। অবশ্য ঢাকার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আর নয়াপল্টন ছাড়া সমাবেশ করার মতো ভেন্যু নেই।

তবে বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে বিএনপি ‘বল’ অনেকটা পুলিশের কোর্টে ছেড়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকা মেইলকে বলেন, ধরপাকড় চলতে থাকলে আর দুই পক্ষ অনড় থাকলে শেষ পর্যন্ত সমাবেশ হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। একদম শেষ বেলায় সোহরাওয়ার্দীতে গেলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।

বিইউ/জেএম/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর