শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

সোহরাওয়ার্দীতে যেতে কেন 'ঘোর আপত্তি' বিএনপির? 

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১২:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

সোহরাওয়ার্দীতে যেতে কেন 'ঘোর আপত্তি' বিএনপির? 
ফাইল ছবি

নিজেদের চাওয়া জায়গার বদলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি পাওয়া নিয়ে সন্দেহ বাড়ছে বিএনপিতে। যে কারণে আগামী ১০ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী কর্মসূচি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। সামগ্রিক পরিস্থিতি, ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের গতিবিধি পর্যালোচনা করে সোমবার (২৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে।

দলটির নেতারা মনে করেন, সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করার নামে তাদের দেয়ালবন্দি করার চেষ্টা করছে সরকার। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হলে বড়ধরনের ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বেন নেতাকর্মীরা।


বিজ্ঞাপন


দেশের অন্য বিভাগীয় সমাবেশে অনুমতি দেওয়া নিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হলেও ঢাকায় অনেকটা সময় বাকি থাকতেই বিএনপিকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে স্বসম্মানে অনুমতিপত্র বিএনপির কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে বিএনপি।

অন্যসময় কর্মসূচির আগের দিন অনুমতি দেওয়ার নজির থাকলেও হঠাৎ এবার কেন এত আগে দেওয়া হলো তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে বিএনপিতে।

আরও পড়ুন: বিএনপির সুবিধার কথা ভেবেই সোহরাওয়ার্দী বরাদ্দ: তথ্যমন্ত্রী

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, একাধিকবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি নিতে বিএনপিকে কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। অনুমতি না পেয়ে কর্মসূচি থেকে সরে আসার ঘটনাও আছে। কিন্তু প্রথমবার সরকারের দায়িত্বশীল পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার কথা আগেভাগেই জানানো হয়।


বিজ্ঞাপন


দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তি, জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপক্ষে সরকারের দাবিতে বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে সমাবেশ করেছে বিএনপি।

আরও পড়ুন: ২৬ শর্তে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশের অনুমতি

ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট ও কুমিল্লায় বিভাগীয় সমাবেশ সম্পন্ন করেছে দলটি। এরই অংশ হিসেবে ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে গণসমাবেশ করবে বিএনপি। সবশেষ ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই কর্মসূচি।

এর আগে ঢাকায় নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে গত ২০ নভেম্বর ডিএমপির কাছে আবেদন করে বিএনপি। যার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৬টি শর্তে অনুমতি দেয় পুলিশ। 

দলীয় সূত্রে জানা যায়, সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না, দিলেও রাজধানীর পাশে কোথাও দেওয়ার কথা বলে আসছিলেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। কিন্তু হঠাৎ সেই অবস্থান থেকে অনেকটা ইউটার্ন করায় সন্দেহ বাড়ছে বিএনপির।

জানা গেছে, সোমবার বৈঠকে প্রত্যেক সদস্যই জানিয়েছেন, সরকারের আচরণ সন্দেহজনক। তবে কেউ কেউ উত্তপ্ত পরিস্থিতি ঠেকাতে সোহরাওয়ার্দীতে যাওয়ার ব্যাপারে মত দেন বলে জানা গেছে। যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতের কাছে তা গুরুত্ব পায়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আগে অনুমতি চাইতাম সোহরাওয়ার্দীতে, সরকার ঠেলে পাঠাতো নয়াপল্টনে। আমরা এখন সব সময়ই নয়াপল্টনে মিটিং করি। আজকে হঠাৎ করে কী হয়ে গেল যে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়া হলো! এতে দুরভিসন্ধি আছে বলে মনে করি।’

আরও পড়ুন: যেসব শর্তে ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি পেল বিএনপি

জানা গেছে, সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায়ও ঢাকার গণসমাবেশের ভেন্যু (স্থান) নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। অধিকাংশ নেতা মত দেন, বিএনপি নয়াপল্টনের একটি ভেন্যুই চেয়েছে, এটি দলের সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলে নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে। তাছাড়া সরকার কোনো অজানা ‘ভয়‘ বা ‘আতঙ্ক’ থেকে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকিয়ে সমাবেশ করাতে চাইছে।

অবশ্য সরকারি দলের তরফে ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দীতে টানতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। কারণ আওয়ামী লীগ এটাকে নিজেদের জায়গা বলে অনেকটা মনে করে থাকে।

FF

যদিও বিএনপির কোনো কোনো নেতার মত, শেষ পর্যন্ত নয়াপল্টনে অনুমতি না পেলেও কর্মসূচি বদল করা বা পিছিয়ে যাওয়া যাবে না। তেমন হলে নেতাকর্মীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে।

কেন এত সন্দেহ?

এদিকে যে ২৬ শর্তে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে তার কিছু শর্ত বিএনপিকে আরও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

পরিবহন ধর্মঘটসহ নানা শঙ্কায় দেশের সব বিভাগীয় সমাবেশে নেতাকর্মীদের আগেভাগে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জড়ো হয়েছেন। সেখানে ঢাকায় অনুষ্ঠানের মাত্র দুই ঘণ্টা আগে সমাবেশস্থলে আসার শর্ত দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও সরকারি দলের অনুষ্ঠানে যেখানে সার্বিক নিরাপত্তায় প্রশাসনের বিস্তর প্রস্তুতি থাকে সেখানে বিএনপিকে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে।

দলটির নেতারা বলছেন, এসবের পেছনে একটা রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিও রয়েছে। বিএনপিকে দেওয়ালবেষ্টিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আবদ্ধ রেখে নিজেদের নিরাপদ রাখা, একই সঙ্গে নয়াপল্টন এলাকায় বড় গণজমায়েতের যে রাজনৈতিক প্রভাব, সেখান থেকে বঞ্চিত করার কৌশল রয়েছে আওয়ামী লীগের। কারণ নয়াপল্টনের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি লোক ছাড়া সোহরাওয়ার্দীতে বড় সমাবেশ করা সম্ভব হবে না।

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির সভায় নেতারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ না করার পেছনে যুক্তি দেন, উদ্যান আগের মতো খোলামেলা নেই। চারদিকে দেওয়ালবেষ্টিত উদ্যানে প্রচুর গাছপালা। বসার জায়গাও তুলনামূলকভাবে কম, ঢোকার গেট ছোট। ফলে বড় আকারের সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢুকতে এবং বের হতে বেশ কষ্ট হয়।

এছাড়া সমাবেশ শেষ করে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়তে হতে পারে। অন্যদিকে অতীতের মতো কর্মসূচি শেষে পুলিশের পক্ষ থেকে লোকজনকে গ্রেফতার করারও ভয় আছে বিএনপিতে।

আরও পড়ুন: ১০ ডিসেম্বর নয়া পল্টনেই বিএনপির মহাসমাবেশ হবে: রিজভী

এদিকে ঢাকার গণসমাবেশ সফল করতে সাতটি উপকমিটি করা হয়েছে। যেখানে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান ও আবদুস সালামকে কো-কনভেনর এবং ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদকে সদস্য সচিব করে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা উপকমিটি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম ঢাকা মেইলকে বলেন, সারাদেশের সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে পরিবহন ধর্মঘট হয়েছে, পথে পথে হামলা হয়েছে। এবার মন্ত্রীরা বলছেন কোনো ধর্মঘট হবে না। বিএনপি কোনো ফাঁদে পা দেবে না।

নয়াপল্টনে সমাবেশের সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,  ‘আমরা নয়াপল্টনে সমাবেশ করব। এটা আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। নয়াপল্টন ঘিরেই আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সরকার অনুমতি দিলেও আমরা তো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চাইনি। সেখানেই সরকার কেন অনুমতি দিল? তাদের উদ্দেশ্য কী?’

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর