বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন আগামী ২৪ ডিসেম্বর। এবারের সম্মেলনেও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে কোনো পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই। পরির্তনের আভাস রয়েছে সাধারণ সম্পাদক পদে। সামনে এসেছে সম্ভাব্য কয়েকজনের নাম। আবার কারও কারও মতে, এবারও সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন নাও আসতে পারে।
২০১৬ সালে দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে দলের নবম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান ওবায়দুল কাদের। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ২১তম সম্মেলনে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।
বিজ্ঞাপন
মাঝে বেশ অসুস্থ ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তবে বর্তমানে পুরোপুরি সুস্থ। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পাশাপাশি সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক- এই দুটি সমানতালেই সামাল দিচ্ছেন কাদের।
নিয়মিত সেতু ভবন ও সচিবালয়ে অফিস করেন সরকারের মন্ত্রী হিসেবে। সরেজমিনে মন্ত্রণালয়ের কাজের তদারকিও করেন। আবার ক্ষমতাসীন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে বসে সাংগঠনিক কার্যক্রমের দিকেও সমান নজর রাখছেন। প্রায় প্রতিদিনই যাচ্ছেন ধানমণ্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে। যোগ দিচ্ছেন দলীয় বিভিন্ন সভা, সমাবেশ ও সম্মেলনে।
আরও পড়ুন: সম্মেলন হয়, পাল্টায় না নেতা
আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে একদিনের। এর আগে ক্ষমতাসীন দলের সম্মেলন দুই দিনব্যাপী আয়োজন করা হতো। স্বল্প সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তনের আভাস খুবই কম৷
বিজ্ঞাপন
সব মিলিয়ে আগামীবারও দলের সাধারণ সম্পাদকের হাল ধরতে পারেন তিনি। হতে পারে হ্যাটট্রিক। এমনই আলোচনা আওয়ামী লীগের নেতাদের মাঝে।
তবে দলের অনেকেই মনে করেন টানা তৃতীয়বার ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাও হতে পারেন। তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন এমন কয়েকজনের নামও শোনা যাচ্ছে।
অনেকেই মনে করেন জ্যেষ্ঠতার বিচারে দলটির সাধারণ সম্পাদকের পদের দাবিদার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। ২০০১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০১৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি।
আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। ছাত্রলীগ থেকে উঠে আসা এই নেতা ঢাকা-১৩ আসনের দুইবারের সংসদ সদস্য। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তবে ২০১৮ সাল থেকে সংসদের বাইরে নানক।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমানও রয়েছেন সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আলোচনায়। তিনি ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
আরও পড়ুন: ‘বোনাস টাইম’ কাটাচ্ছেন তারা
সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। দলের ভেতরে ও বাইরে আলোচনা আছে তাকে নিয়েও। অনেকেই হাছান মাহমুদকে আগামী সাধারণ সম্পাদক পদে দেখতে চান।
আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফও রয়েছেন আলোচনায়। আলোচনায় আছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বি এম মোজাম্মেল হকের নামও শোনা যায়।
এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে চান না আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কেউই। তাদের মতে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই তাদের অভিভাবক। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটিই চূড়ান্ত। শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখছেন সবাই।
আওয়ামী লীগের যত সাধারণ সম্পাদক
আওয়ামী লীগ গঠনের পর ১৯৪৯ সালে দলের প্রথম সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক। এরপর ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দলের দ্বিতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। এরপর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরপর দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক হন আবদুর রাজ্জাক। ১৯৮৭ সালে সাধারণ সম্পাদক হন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। ছিলেন ১৯৯২ সাল পর্যন্ত। এরপর জিল্লুর রহমান আবারও দুই মেয়াদে ২০০২ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
আরও পড়ুন: ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের ম্যাসেজে ‘বিরক্ত’ কাদের
২০০২ সালের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হন আবদুল জলিল। ছিলেন ২০০৯ সাল পর্যন্ত। ওই বছর দলের ১৮তম সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করেন ২০১৬ সাল পর্যন্ত। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে দলের নবম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান ওবায়দুল কাদের। ২০১৯ সালে ২১তম সম্মেলনেও একই পদে বহাল থাকেন তিনি।
কারই/জেএম
