মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘বোনাস টাইম’ কাটাচ্ছেন তারা

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর ২০২২, ১১:৩০ এএম

শেয়ার করুন:

‘বোনাস টাইম’ কাটাচ্ছেন তারা

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২১তম সম্মেলন হয়েছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। তিন বছর মেয়াদী কমিটির মেয়াদ শেষ হবে এ বছরের ডিসেম্বরে। ঠিক হয়েছে সম্মেলনের দিনক্ষণও। তবে দলটির বিভিন্ন ভাতৃপ্রতীম ও সহযোগী সংগঠনের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আছে। কেউ এক বছর, কেউ দুই বছর আবার কেউবা পাঁচ বছর ধরে কাটাচ্ছেন ‘বোনাস টাইম’।

শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিনক্ষণ ঠিক হয়। দলটি তাদের ২২তম সম্মেলন করবে আগামী ২৪ ডিসেম্বর। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিল শুক্রবার হয়ত বহুলকাঙ্খিত সম্মেলনের তারিখ আসছে ছাত্রলীগ, তাঁতীলীগ, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের। 


বিজ্ঞাপন


২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর দুই মাস পর ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ গঠিত হয়েছিল। কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মেয়াদ শেষ হয়েছে।

আরও পড়ুন: ভার্চুয়াল মাধ্যমে জনপ্রিয়তার প্রমাণে প্রতিযোগিতায় আ.লীগ-বিএনপি

ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক হন গোলাম রাব্বানী। এক বছরের মাথায় অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগে শোভন-রাব্বানীকে অপসারণ করা হয়। 

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এক নম্বর সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে সভাপতি ও এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।  


বিজ্ঞাপন


তবে ছাত্রলীগের বর্তমান নেতাদের ভাষ্য, সম্মেলন ও কমিটি ঘোষণার দিন হিসাবে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় আড়াই বছর আগেই। সম্মলন নিয়ে এই নেতারা কিছু কথাই বলে না।

জানা গেছে, গত ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসা আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য্য ‘ভারমুক্ত’ করে ঘোষণা দেন তাদের ‘সাংগঠনিক নেত্রী’ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে কাউন্সিল ছাড়াই নিয়মিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পায় জয় ও লেখক। ছা্ত্রলীগের বর্তমান কমিটির অনেক নেতারাই বলেছেন, সাংগঠনিক নেত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সময়ও যদি হিসেব করি তাহলেও এই নেতৃত্বের সময় ফুরিয়েছে এই বছরের জানুয়ারিতেই। 

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ। সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি সাফিয়া খাতুন এবং সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক। 

প্রায় ১৪ বছর পর ২০১৭ সালের ৪ মার্চ মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। এতে সাফিয়া খাতুন সভাপতি এবং মাহমুদা বেগম কৃক সাধারণ সম্পাদক হন। তিন বছর মেয়াদি কমিটি ‘বোনাস টাইম’ কাটিয়েছে পাঁচ বছর।

দীর্ঘ সময়েও সংগঠনের সকল কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি তারা। 

আলোচনা আছে, মহিলা আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বিদায় নিতে পারেন বর্তমান সভাপতি সাফিয়া খাতুন। তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক। 

২০০৪ সালের ৫ মার্চ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের সভাপতি হন নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক হন অপু উকিল। ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ সংগঠনের দ্বিতীয় সম্মেলনে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনঃনির্বাচিত হন। কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এখন দ্বিতীয় দফায় ‘বোনাস টাইম’ কাটাচ্ছেন সংগঠন নারী নেত্রীরা।

১৮ বছর ধরে তারা দুজনই এই সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে যাচ্ছেন। তবু সকল কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন: স্বাধীনতা-পূর্ব ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকরা কে কোথায়

জানা গেছে, আসন্ন সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রায় অর্ধেক পদেই পরিবর্তন আসতে পারে।

২০১৭ সালের ১৯ মার্চ সম্মেলনে তাঁতী লীগের সভাপতি হন ইঞ্জিনিয়ার শওকত আলী এবং খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ সাধারণ সম্পাদক হন। 

দিবসভিত্তিক কর্মসূচির বাইরে মাঠের কর্মসূচিতে খুব একটা সক্রিয় নয় তাঁতী লীগ। ২০২০ সালের ১৯ মার্চ আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠনের মেয়াদও শেষ হয়েছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে ‘বোনাস টাইম’ কাটাচ্ছেন তুলনামূলক কম সক্রিয় এই সংগঠনের নেতারা।

এদিকে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলনে করার জন্য দলীয় সভাপতি নির্দেশ দিয়েছেন। এই ব্যাপারে আমরা সমন্বয় করছি। তারা নেত্রীর উপস্থিততে সম্মেলন করতে চান। তার সময়সূচির সঙ্গে মিলিয়ে আমরা তারিখগুলো দিয়ে দেব।

আরও পড়ুন: রাজনীতিতে ব্যবহার বাড়ছে শিশুদের!

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে এই সম্মেলনগুলো হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ সকল (সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম) সংগঠনের সম্মেলন করে ফেলব।

সোমবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা এক বৈঠকে বসেন। বৈঠকের একাধিক সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগের সম্মেলনের সম্ভব্য তারিখ ঠিক করা হয়েছে আগামী ১০ ডিসেম্বর। যুব মহিলা লীগের সম্মেলনের সম্ভব্য তারিখ ২৪ নভেম্বর, মহিলা আওয়ামী লীগের ৩ ডিসেম্বর। মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে পারে আগামী ১৭ ডিসেম্বর।

নির্ধারণ করা এ সব সম্ভাব্য তারিখ আওয়ামী সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে। তিনি সম্মতি দিলেই নির্ধারিত তারিখে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানা গেছে।

কারই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর