শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

স্বাধীনতা-পূর্ব ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকরা কে কোথায়

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:০৬ পিএম

শেয়ার করুন:

স্বাধীনতা-পূর্ব ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকরা কে কোথায়

দেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি। প্রথমে ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’ নামে যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তীতে সাম্প্রদায়িক বিতর্ক এড়িয়ে চলতে ১৯৫৫ সালে নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ’ নামকরণ করা হয়।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এই সংগঠনটির রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। স্বাধীনতার আগে প্রাচীন এই ছাত্র সংগঠনটিতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, যাদের হাত ধরে ছাত্রলীগ আজকের পর্যায়ে এসেছে সেই নেতাদের সম্পর্কে জানার কৌতূহল সবার মনে।


বিজ্ঞাপন


১৯৪৮ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সংগঠনটির প্রথম সভাপতি ছিলেন দবিরুল ইসলাম। ১৯৬১ সালের ১৩ জানুয়ারি তিনি মারা যান। সে সময় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন খালেক নেওয়াজ খান। ১৯৭১ সালের ২ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। ২০০৮ সালে ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য মরণোত্তর একুশে পদক পান এই ছাত্রলীগ নেতা।

১৯৫০ থেকে ১৯৫২ এই দুই বছর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন খালেক নেওয়াজ খান। সে সময় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কামরুজ্জামান। পরের মেয়াদে ১৯৫২ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সভাপতি পদে উঠে আসেন কামরুজ্জামান। আর সাধারণ সম্পাদক হন এম এ ওয়াদুদ।

২০০২ সাল পর্যন্ত কামরুজ্জামান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। তিনি ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন। তবে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে তিনি নির্বাচনে পরাজিত হন। এমএ ওয়াদুদ বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বাবা। তিনি ১৯৮৩ সালের ২৮ আগস্ট মারা যান।

১৯৫৩ থেকে ১৯৫৭ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন আব্দুল মমিন তালুকদার। স্বাধীনতা-উত্তর বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য পদে বেশ কিছুদিন ছিলেন। মমিন তালুকদার ১৯৯৫ সালের ১৫ আগস্ট মারা যান।


বিজ্ঞাপন


১৯৫৩ থেকে ১৯৫৭ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এমএ আউয়াল। ১৯৯২ সালে জলিল-রব-সিরাজের নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠিত হলে সেখানে যোগ দেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে ঢাকা থেকে প্রার্থী হয়ে জামানত হারান এনএ আউয়াল।

১৯৫৭ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন রফিক উল্লাহ চৌধুরী। সিএসপি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী রফিক উল্লাহ আমলাতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থা বেছে নেন। তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখ্যসচিব পদে দায়িত্ব পালন করেন। রফিক উল্লাহ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু হত্যার পর চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। জাতীয় সংসদের বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তার মেয়ে।

১৯৫৭ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত রফিক উল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কাজী আজাহারুল ইসলাম। ব্যারিস্টারি পড়তে বিলাতে গমন করায় পরবর্তী এক বছর (১৯৫৯ থেকে ১৯৬০) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৩ ওই দুই মেয়াদেই সভাপতি হন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন।

স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নির্বাচিত হওয়া মোয়াজ্জেমের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জুটি বাঁধা শেখ ফজলুল হক মনির সম্পর্কের টানাপড়েন ছাত্রলীগের শুরু থেকেই। আওয়ামী লীগে কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ায় বরাবরই অসন্তোষ ছিল তার মনে।

এরশাদের শাসনামলে প্রথমে মন্ত্রী ও পরে উপপ্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় পার্টির মহাসচিব নিযুক্ত হন শাহ মোয়াজ্জেম। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কখনও জায়গা পাননি। সবশেষ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।

শেখ ফজলুল হক মনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের পিতা। তিনি মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক ও স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার দিন তার বাসভবনেও হামলা হয় এবং এতে তিনি এবং তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনিও নিহত হন।

১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ মেয়াদে ছাত্রলীগের সভাপতি কেএম ওবায়দুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আলম খান। আওয়ামী লীগে বেশি দিন টিকে থাকতে পারেননি ওবায়দুর রহমান। ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের সমাজ কল্যাণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদে ও স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে সংসদ সদস্য হন। এরপর প্রতিমন্ত্রীও হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর খুনি মোশতাকের প্রতিমন্ত্রী হন তিনি এবং বিতর্কিত হয়ে পড়েন। জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার আসামিও তিনি। সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান তাকে কাছে টেনে মন্ত্রী করেন। কিছুদিন পর অব্যাহতি দেন। জিয়া নিহত হলে বিচারপতি সাত্তার মন্ত্রিসভা গঠন করেন। কিন্তু তাতে স্থান পাননি তিনি। এরশাদের সামরিক আদালতে দুর্নীতির দায়ে কেএম ওবায়দুর রহমানের ১৪ বছর জেল হলেও তা ভোগ করতে হয়নি।

বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারম্যান হলে কেএম ওবায়দুর রহমান মহাসচিব নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ সালে তাকে এরশাদের সঙ্গে যোগসাজশের দায়ে বহিষ্কার করা হয়। মন্ত্রী হওয়ার গুঞ্জন গুজবে পরিণত হয়। জনতা দল নামে একটা দল গঠন করলেও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপিতে ফিরে গিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ লাভ করেন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকারে এলেও মন্ত্রী হতে পারেননি কেএম ওবায়দুর রহমান। এখন তিনি পরলোকে। তবে তার মেয়ে শামা ওবায়েদ এখন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক।

বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান। তিনি ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্বাধীনতার অন্যতম নিউক্লিয়াস বলে খ্যাত এই নেতা মুজিব বাহিনীরও কাণ্ডারি ছিলেন। স্বাধীনতার পতাকা, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা ইত্যাদির নেপথ্যে মূল ক্রীড়নকের ভূমিকায় থাকা সিরাজুল আলম খান আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলেন না। স্বাধীনতার পর মুজিববাদ নয়, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ভিত্তিতে সর্বদলীয় সরকার গঠনের দাবি জানান তিনি। ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধে চার খলিফা খ্যাত ছাত্রনেতা ডাকসু ভিপি আ স ম রব ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজের নেতৃত্বাধীন অংশ সিরাজুল আলম খানের মতবাদের প্রতি সমর্থন দেন। ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী ও ডাকসু জিএস আব্দুল কুদ্দুস মাখন মুজিববাদের পক্ষে অবস্থান নিলে ছাত্রলীগ ভেঙে যায়।

১৯৭২ সালে গঠিত হয় সিরাজুল আলম খানের দর্শনেই জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ। বঙ্গবন্ধু ও পরে জাতীয় চারনেতা নিহত হওয়ার পর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থান হলে জাসদ ও কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহি বিপ্লব সংঘটন করা হয়। জিয়াকে সরিয়ে সেনাপ্রধান হওয়া খালেদ নিহত হন। মোশতাককে সরিয়ে বিচারপতি সায়েমকে রাষ্ট্রপতি করেছিলেন খালেদ মোশাররফ। খালেদ মোশাররফ নিহত হলে জিয়া সেনাপ্রধান পদে ফিরে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। সিরাজুল আলম খানের জাসদীয় দর্শন বা তাহের ১২ দফা মানতে অস্বীকার করে জেনারেল জিয়া উল্টো তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলান এবং সিরাজুল আলম খানকে কারাদণ্ড দেন সামরিক আদালতে। সিরাজুল আলম খান পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে অদৃশ্য হয়ে যান। বর্তমানে রোগে-শোকে কাহিল এই নেতা নিভৃতে জীবন কাটাচ্ছেন।

ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী ও আব্দুর রাজ্জাক এবং মাজহারুল হক বাকী ও আব্দুর রাজ্জাক জুটিও ছাত্রলীগের ইতিহাসে এক অনবদ্য চরিত্র। ফেরদৌস কোরেশী ছাত্রলীগের সভাপতি শুধু নন, তিনি ডাকসুর ভিপি ছিলেন। ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৬ সালে কোরেশীও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে স্থান পাননি। স্বাধীনতার আগে থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধু ঘরানার বিরোধী। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হয়েছিলেন জেনারেল জিয়ার আমলে। বিগত ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি আলোচনায় উঠে এসেছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে যায় তার সব পরিকল্পনা, যখন সেনাবাহিনী সমর্থিত ফখরুদ্দীনের সরকারের মাইনাস টু থিউরি ভেস্তে যায়।

১৯৬৫ থেকে ১৯৬৬ এই সময়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন মাজাহারুল হক বাকী। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা আন্দোলনের তুখোড় নেতা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের মতো বলিষ্ঠ ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিলেন বাকী। তাকে পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দেখা যায়নি।

বঙ্গবন্ধু যাকে আদর করে বলতেন ‘আমার রাজ্জাক’ সেই রাজ্জাক ছাত্রলীগের দুইবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আব্দুর রাজ্জাকই ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে একমাত্র নেতা যিনি আওয়ামী লীগের দুইবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একবার আব্দুল মালেক উকিলের সঙ্গে আরেকবার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৮৩ সালে বাকশাল পুনরুত্থানের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কার্যত রাজ্জাকেরই ১৪ শতাংশ সমর্থনপুষ্ট ছিল। ১৯৯২ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে বাকশালকে একীভূত করে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন। ২০০৯ সালের কাউন্সিলে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও আব্দুল জলিল প্রমুখ নেতার মতো তিনি সভাপতিমণ্ডলীর পদ থেকে ছিটকে পড়েন। অনেকটা নীরবে নিভৃতে ২০১১ সালে না ফেরার দেশে চলে গেছেন আব্দুর রাজ্জাক।

১৯৬৮ থেকে ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি হন আব্দুর রউফ। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সুবিধা করতে পারেননি তিনি। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর হুইপ হয়েছিলেন উপমন্ত্রীর মর্যাদায়। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর খুনি মোশতাকেরও হুইপ হন ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রউফ। জীবদ্দশায়ই রাজনীতি থেকে হারিয়ে যান।

আব্দুর রউফের সঙ্গে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন খালেদ মোহাম্মদ আলী। গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পেলেও শীর্ষ পদে তাকে কখনও দেখা যায়নি। বর্ষীয়ান এ নেতা বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনেও ভূমিকা রাখেন। বর্তমানে রাজনীতিতে নেই।

ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে কিংবদন্তিতুল্য নেতা হিসেবে দেখা হয় তোফায়েল আহমেদকে। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। তোফায়েল আহমেদ ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ২৩ ফেব্রুয়ারি কারামুক্ত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ছাত্রলীগের সভাপতি হন এর পরপরই। তার সাধারণ সম্পাদক আ স ম আব্দুর রবও পরের বছর ডাকসু ভিপি হন। 

তোফায়েল আহমেদ মুজিব বাহিনীর অন্যতম অধিনায়ক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। স্বাধীনতা-উত্তর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব নিযুক্ত হন মন্ত্রীর মর্যাদায়। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৯২-২০০৯ পর্যন্ত সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। প্রেসিডিয়াম থেকে বিস্ময়করভাবে তাকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। পাঁচ বছর রাখা হয় মন্ত্রিসভার বাইরে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ আবার সরকারে এলে বাণিজ্যমন্ত্রী হন বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান তোফায়েল আহমেদ। ২০১৮ সালে তিনি মন্ত্রিত্ব পাননি। বর্তমানে সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তিনি।

১৯৬৯ থেকে ১৯৭০ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আ.স.ম. আব্দুর রব। তিনি এখন বাংলাদশের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এর নেতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ছিলেন আব্দুর রব। তৎকালীন ডাকসুর ভিপি, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার ছাত্র জনতার মাঝে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত যে পতাকা সেই পতাকা সর্বপ্রথম উত্তোলন করেন আ স ম আবদুর রব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দেন।

১৯৭১ সালের ৩ মার্চ তিনি পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে 'জাতির জনক' উপাধি প্রদান করেন। ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ১৯৭২ সালে ৩১ অক্টোবর আ.স.ম. আব্দুর রব ও শাজাহান সিরাজের উদ্যোগে জাসদ গঠিত হয়। ২৩ ডিসেম্বর দলের প্রথম জাতীয় সম্মেলনে মেজর জলিল সভাপতি, আ.স.ম. আব্দুর রব সাধারণ সম্পাদক এবং শাজাহান সিরাজ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি হাসানুল হক ইনু নির্বাচিত হন। জাসদের জন্ম হয়েছিল সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে, বিপ্লবী পথে। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা।

১৯৭০ থেকে ১৯৭২ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী। ১৯৭১ সালে মুজিববাহিনীরও অন্যতম কর্ণধার ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালে যশোর-২ আসন থেকে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে পরাজিত হয়েছিলেন।

সে সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শাহজাহান সিরাজ। বারবার দল পাল্টানো নেতাদের মধ্যে তিনি একজন। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা এবং সাবেক এই রাজনৈতিক নেতার স্বাধীনতার পরপরই দল পাল্টান। মুক্তিযুদ্ধের পর সর্বদলীয় সমাজতান্ত্রিক সরকার গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠনে ভূমিকা পালন করেন, যা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিরোধী দল। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সহকারী সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন শাহজাহান সিরাজ। পরবর্তী সময়ে জাসদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। জাসদের মনোনয়নে তিনবার তিনি জাতীয় সংসদের টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

শাহজাহান সিরাজ ১৯৯৫ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি বিএনপির মনোনয়নেও একবার একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বেগম খালেদা জিয়া সরকারের শেষ পর্যায়ের দিকে নৌপরিবহন মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

কারই/জেবি/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর