বয়স আনুমানিক ১০-১২ বছর হবে। সেই হিসেবে তারা এখনও উঠতি বয়সের শিশু। অনেকেই আবার প্রাইমারির গণ্ডিও পার হয়নি। সে যাই হোক, দলীয় টি-শার্ট গায়ে জড়িয়ে নানা স্লোগানে রীতিমতো রাজনৈতিক আয়োজনে তারা!
কেউ পায়ে হেঁটে, কেউবা পণ্যবাহী পিকআপে চেপে যোগ দিচ্ছেন রাজনৈতিক নানা আয়োজনে। আবার কেউ কেউ ‘বড় ভাইদের’ মোটরসাইকেলের পেছনে চেপেও নানা সভা-সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। সঙ্গে দল ও বিভিন্ন ব্যক্তিকে নিয়েও নানা স্লোগান দিতে দেখা যায় এসব শিশুদের।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে মুন্না নামে তাদেরই একজন জানান, তিনি চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। স্কুলে না গিয়ে এসেছেন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে।
সাম্প্রতিক সময়ে নানা রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে এমন চিত্র যেন হরহামেশারই। যাদের অনেকেই ঠিকভাবে রাজনীতির ব্যাখ্যাও জানেন না! অথচ, জাতীয় শিশু বিল-২০১৩ এ সুস্পষ্টভাবে রাজনীতিতে শিশুদের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এর নেতিবাচক প্রভাবের উদাহরণেরও কমতি নেই। খুব বেশি দুরে যেতে হবে না, ২০১৫ সালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ঘাঁটলেই দেখা যাবে- রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়ে মোট ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা ১০৪ জন। এরমধ্যে ১৫ জন শিশুর মৃত্যুসহ আহত হয়েছে ৯১ জন শিশু। তার আগের বছর ২০১৪ সালেও রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা ছিল ৫১ জন।
বিজ্ঞাপন
এ নিয়ে জাতিসংঘের অঙ্গ-সংগঠন ইউনিসেফও নানা সময়ে পৃথক বিবৃতিতে শিশুদের যে কোনো ধরনের সংঘর্ষ কিংবা দলীয় প্রোগ্রামে যুক্ত না করতেও বিশ্ব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি একাধিকবার আহ্বান জানিয়েছে। সেসব বিবৃতিতে বিশ্বব্যাপী চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় ঘটে যাওয়া বেশকিছু ঘটনায় উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়েছে।
এমতাবস্থায় সচেতন মহল ও শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনীতিতে শিশু-কিশোরদের এমন ব্যবহার বন্ধ হওয়া জরুরি। এতে সমাজে একদিকে যেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তেমনি অন্যদিকে শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবনও হুমকির মুখে পড়ছে। একই সঙ্গে এতে শিশু-কিশোরদের ভবিষ্যতের রাজনৈতিক বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতাও কমে আসছে।
বিষয়টিতে ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, ‘এটা নতুন না। অনেক বছর ধরেই আমরা দেখছি, তারা (রাজনৈতিক দলগুলো) পিছিয়ে পড়া বা বস্তির শিশুকে তাদের অনুষ্ঠানে নিচ্ছেন। অনেক শিশুরা টাকার বিনিময়েও যায়।’
ঢাবির এই অধ্যাপক বলেন, ‘একটি চক্র আছে, তারা টাকার বিনিময়ে রাজনৈতিক আয়োজনে লোক দিচ্ছে, শিশুদেরকেও দিচ্ছে। তবে কিছু রাজনৈতিক দল যেখানে শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে, কথা বলছে সেখানে যখন শিশুদের এমন উপস্থিতি আমাদের চোখে পড়ে, তখন রাজনৈতিক দলগুলোর কথাগুলো আমাদের কাছে লোক দেখানোই মনে হয়।’
রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে শিশুদের ব্যবহারকে ‘অপরাধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তৌহিদুল হক বলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে এ ধরনের শিশুদের ভবিষ্যতের রাজনৈতিক বিচার-বিশ্লেষণ কমে যায়। এ ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ প্রয়োজন বলেও মনে করছেন এই বিশেষজ্ঞ।
কারই/আইএইচ