- নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র দেখছেন নেতারা
- সহসাই সুস্পষ্ট রোডম্যাপ পেতে চায় বিএনপি
- সবকিছু পরিষ্কার হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাতে
- প্রয়োজনে এপ্রিলের পর মাঠে নামার ভাবনা
আওয়ামী লীগের বিদায়ের পর রাজনীতির মাঠে কিছুদিন স্বস্তিতে কাটলেও বিএনপির যেন চাপ কমছে না। বিশেষ করে আগামী নির্বাচন কবে নাগাদ হবে তা নিয়ে অন্তবর্তী সরকারের আট মাস পার হলেও সুস্পষ্ট কোনো বার্তা না আসায় ধোঁশায়ায় দলটির নেতারা। প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের ইঙ্গিত দিলেও তাতে ভরসা পাচ্ছেন না দলটির নেতারা। তাই ভোট নিয়ে সরকারের প্রকৃত ভাবনা জানতে চায় বিএনপি। একইসঙ্গে নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ পেতে চান নেতারা। অন্যথায় এপ্রিলের পর প্রয়োজনে নির্বাচনের দাবি নিয়ে মাঠেও নামার চিন্তা চলছে দলটির ভেতরে।
বিজ্ঞাপন
তৃণমূল থেকেও নির্বাচন ইস্যুতে চাপ বাড়ায় সোমবার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সিদ্ধান্তে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চাওয়া হয়। আগামী ১৬ এপ্রিল সাক্ষাতের দিন ধার্য করা হয়েছে। যেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনের রোডম্যাপকে সামনে রেখে নানা ইস্যুতে কথা বলবেন বিএনপি নেতারা। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ওইদিন চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরেরও সাক্ষাতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, সময় যত যাচ্ছে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তত বাড়ছে। শীর্ষ নেতারা সভা-সমাবেশে এ নিয়ে কথাও বলছেন। তাই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কোনো বার্তা না পেলে ভোটের দাবি নিয়ে তারা প্রয়োজনে মাঠে নামার কথা ভাববেন। সেক্ষেত্রে সরকারকে এপ্রিল মাস সময় দিতে পারেন তারা।
সাক্ষাতের এজেন্ডা ইতোমধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ পরিষ্কার করেছেন। সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। আমরা সে অনুযায়ী ওনাকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানাব। সংস্কারপ্রক্রিয়া চলছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আমাদের বৈঠকও হচ্ছে। সংস্কারপ্রক্রিয়া চালু থাকা অবস্থায় নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া যাবে না, বিষয়টা তো ওই রকম না।
বিজ্ঞাপন
বিএনপি নেতারা বলছেন, সময় যত যাচ্ছে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তত বাড়ছে। শীর্ষ নেতারা সভা-সমাবেশে এ নিয়ে কথাও বলছেন। তাই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কোনো বার্তা না পেলে ভোটের দাবি নিয়ে তারা প্রয়োজনে মাঠে নামার কথা ভাববেন। সেক্ষেত্রে সরকারকে এপ্রিল মাস সময় দিতে পারেন তারা।
এদিকে ডিসেম্বরে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে সামনে নিয়ে এগুতে চায় বিএনপি। দলটির নেতারা একাধিকবার এ বিষয়ে কথাও বলেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, খেয়াল করে দেখবেন এখন আর যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে না। আমরা বলছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের কথা। সরকারও ডিসেম্বরের কথা বলেছে। নির্বাচন কমিশনও সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাহলে পরিষ্কার করে বলতে সমস্যা দেখছি না। তারপরও সরকার সে পথে না হাঁটলে অতীতের মতো করে নির্বাচন আদায় করার পথে হাঁটতে হবে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিয়ে প্রয়োজনে মাঠে নামার কথা বলেন।
সরকারের মনোভাব বুঝতে চলতি এপ্রিল মাসটা দেখবে বিএনপি। এর মধ্যে নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণার বিষয়ে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক অগ্রগতি না দেখলে দলটি ‘ভোটাধিকার’ প্রশ্নে কর্মসূচি শুরু করবে। এর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোকেও সক্রিয় করা হবে। সবার মূল লক্ষ্য থাকবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা এবং নির্বাচন আয়োজনের জন্য রূপরেখা ঘোষণা করা।
ওই অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। জনগণের স্বার্থে যদি কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয় তাহলে বিএনপি আবার মাঠে নামবে। আমরা সেটা হতে দেব না, খুব পরিস্কার কথা।
শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ভোট পিছিয়ে দিয়ে অন্তবর্তী সরকার লম্বা সময় ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছে এমন অভিযোগ করছেন।
বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, সরকারের মনোভাব বুঝতে চলতি এপ্রিল মাসটা দেখবে বিএনপি। এর মধ্যে নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণার বিষয়ে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক অগ্রগতি না দেখলে দলটি ‘ভোটাধিকার’ প্রশ্নে কর্মসূচি শুরু করবে। এর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোকেও সক্রিয় করা হবে। সবার মূল লক্ষ্য থাকবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা এবং নির্বাচন আয়োজনের জন্য রূপরেখা ঘোষণা করা।
এদিকে নির্বাচনের দাবি আদায়ে মাঠের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করছে দল ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে। তবে এখনও আন্দোলনের বিষয়টি প্রকাশ্যে বলতে চাচ্ছে না কেউ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, সবাই তো ধরে নিয়েছে নির্বাচন ডিসেম্বরে পরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অনেকে তো ডিসেম্বরকেই বেশ বিলম্ব মনে করছে। ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন হলে দেশ সঠিক পথে থাকবে। কারণ দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি অবশ্যই এই দাবি জোরালো করবে।
অন্যান্য দলের তুলনায় বিএনপি নির্বাচন নিয়ে বেশি তাড়াহুড়া করছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা মেইলকে বলেন, যারা ভোটের চেয়ে সংস্কারে জোর দিচ্ছেন তারাও তো প্রচারণা চালাচ্ছেন। আমরাও তো সংস্কার চাচ্ছি, নির্বাচনও চাচ্ছি। সেই নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই হতে হবে। এটা ঠেকানোর সুযোগ নেই। নির্বাচিত সরকার বাকি সংস্কার করবে। এখানে তাড়াহুড়োর কিছু নেই। মানুষ ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছে।
বিইউ/এএস