নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে ইসির শর্ত পূরণ করে নিবন্ধনের জন্য দ্রুত আবেদন করতে চায় দলটি।
গত সোমবার (১০ মার্চ) সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক এমন নতুন দলগুলো নিবন্ধন দেওয়ার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইসি’র জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, নতুন দল নিবন্ধনের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। নতুন যারা রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত হতে চান, তারা আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারিত শর্ত পূরণ করে আমাদের কাছে আবেদন করতে পারবেন। এরপর পর্যালোচনা ও যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
বিজ্ঞাপন
নিবন্ধনের শর্ত শিথিল করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যমান আইন মেনেই আবেদন করতে হবে। নতুন করে শর্তারোপ বা শর্ত শিথিল করা হয়নি।
ইসি’র সকল শর্ত পূরণ করে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হবে জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব সারাদেশে যতগুলো জায়গায় শর্ত পূরণ করা প্রয়োজন আমরা সেটা করবো। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছে তাদের আমরা যুক্ত করবো। এছাড়া সারাদেশে কিভাবে আরও কর্মী যুক্ত করা যায় সে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সিনিয়র সিটিজেনসহ আঠারো বছর পেরিয়ে যাওয়া সকলকে আমরা যুক্ত করবো। নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধনের জন্য যতটুকু শর্ত পূরণ করা প্রয়োজন ততটুকু শর্ত পূরণ করতে চাই আমরা।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হলে; একটা দলীয় প্রতীক নিতে গেলে নিবন্ধনের প্রয়োজন হয়। আর এ নিবন্ধনের জন্য যেসব শর্ত পূরণ করতে হয় সেসব শর্ত দ্রুত পূরণের জন্য আমরা কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। নিবন্ধন পেতে যে যে কাজ করা দরকার তা আমরা করা শুরু করে দিয়েছি।
এনসিপি’র সদস্য সচিব বলেন, সামনে যে নির্বাচন হতে চলেছে সে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হলে পুলিশের বিদ্যমান কাঠামোতে বড় মাত্রায় রদবদল করা প্রয়োজন।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের মধ্যে দিয়ে পুলিশ বাহিনী যে নৈতিক অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছে তাতে করে পুলিশের এই সেটআপ দিয়ে নতুন করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব কিনা সেখানে একটি বিভ্রান্তি থেকে গেছে।
আখতার হোসেন বলেন, অন্যান্য দলগুলোও জাতীয় নির্বাচনের কথা বলছে; তবে শুধু জাতীয় নির্বাচনই নয় একই সঙ্গে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিও জানিয়ে আসছি আমরা।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী নিবন্ধন শর্ত পূরণ করে অফেরতযোগ্য নিবন্ধন ফি ৫ হাজার টাকা জমাসহ ১০টি তথ্য আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। দলীয় প্যাডে দরখাস্তের সঙ্গে দলের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনী ইশতেহার (যদি থাকে), দলের বিধিমালা (যদি থাকে), দলের লোগো ও দলীয় পতাকার ছবি, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্যের নামের তালিকা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সর্বশেষ স্থিতি, তহবিলের উৎস, দল নিবন্ধনের আবেদনকারীর ক্ষমতাপত্র, নিবন্ধন ফি বাবদ অফেরতযোগ্য ট্রেজারি চালানের কপি এবং নিবন্ধন শর্তের তিনটির মধ্যে যেকোনো একটি পূরণের দলিলাদি জমা দিতে হবে।
জানা যায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কমিশনের তিনটি শর্তের মধ্যে একটি পূরণ হলে একটি দল নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়। এগুলো হলো—
১. দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যেকোনো জাতীয় নির্বাচনে আগ্রহী দলটিতে যদি অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকেন;
২. যেকোনো একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী অংশ নেওয়া আসনগুলোয় মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পায়।
৩. দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ (২১টি) প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকে।
ইসি কর্মকর্তারা বলেছেন, পুরোনো দলগুলোর ক্ষেত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কমিশনের তিনটি শর্তের মধ্যে একটি পূরণ করতে পারলেই নিবন্ধন পেয়ে যাবে ওই রাজনৈতিক দলটি। তবে নতুন দলের ক্ষেত্রে তৃতীয় শর্তটি পূরণ ব্যতিরেকে নিবন্ধন পাওয়ার কোনো সুযোগ নাই।
সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। সম্প্রতি নতুন দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি)।
নতুন দলের জন্য কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা কমিটির তালিকাসহ শর্তপূরণের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, এবার তো অনেক দল আবেদন করতে পারে বলে মনে হয়। শর্ত পূরণ করতে পারলে আবেদনের নির্ধারিত সময়ের যেকোনো দিন করতে পারে। নিবন্ধনও লম্বা প্রসেস। বিদ্যমান আইন অনুযায়ীই আমরা চাইব। তারপর দেখা যাক। পরবর্তীতে কোনো সংশোধনী এলে তখন আইন-বিধিমালা পরিবর্তন সম্ভব হলে সে আঙ্গিকে হবে।
২০০৮ সালে এটিএম শামসুল হুদা কমিশন আইনি সংস্কার এনে নিবন্ধন প্রথা চালু করে। তাতে তিনটি নিবন্ধন শর্ত দেওয়া হয়। ভোটে নিবন্ধিত দলগুলোকেই অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। সে সময় থেকে ধরে এখন পর্যন্ত ৫৪টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণে ব্যর্থ বা আদালতের আদেশে পাঁচটি দলের (জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন বাতিল করা হয়। জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে এবি পার্টি, নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), মাহমুদুর রহমানের নাগরিক ঐক্য এবং গণসংহতি আন্দোলনকে নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে ইসির নিবন্ধিত দলের সংখ্যা হয়েছে ৪৯টি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হলে এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।
ইসি’র কর্মকর্তারা জানান,আমাদের লক্ষ্য ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন করা। এ জন্য অক্টোবরকে আমরা তফসিলের মাস ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এক্ষেত্রে নতুন দলের আবেদন নেওয়ার পর তা আগস্টের মধ্যে আমাদের শেষ করতে হবে।
এমএইচএইচ/এফএ