বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে বিএনপি?

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে বিএনপি?
  • আগ্রহ দেখাচ্ছেন তৃণমূলের অনেকেই
  • নীরব সমর্থন আছে কেন্দ্রেরও এক পক্ষের
  • কর্মীদের চাঙা হওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ
  • শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের রেশ না কাটতেই সামনে এসেছে উপজেলা পরিষদের ভোট। এপ্রিলের শেষদিকে শুরু করে ধাপে ধাপে স্থানীয় এই নির্বাচন শেষ করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির পক্ষ থেকে বিএনপিসহ সবাইকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানোর কথা বলা হলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা দলটি কী করবে তা এখনো চূড়ান্ত করেনি।


বিজ্ঞাপন


দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও বিএনপির তৃণমূলের কর্মীদের সক্রিয় রাখতে ভোটে কেউ গেলে তাদের ব্যাপারে হার্ডলাইনে না থাকার আলোচনাও আছে। দ্রুত এ বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত না থাকার কারণে নানামুখী চাপে থাকা মাঠের কর্মীরা পুরোপুরি কোনঠাসা অবস্থায় আছে। তাই স্থানীয় নির্বাচনকে ঘিরে কর্মীদের চাঙ্গা রাখার পাশাপাশি নিজেদের শক্তির জানান দিতে চান নির্বাচনে আগ্রহীরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় ভোটে ভালো করার সম্ভাবনাও দেখছেন তারা।

নির্বাচন কমিশন সচিব বলছেন, দলীয় প্রতীক না থাকলে উপজেলা নির্বাচন বেশি অংশগ্রহণমূলক হবে। এই নির্বাচনে বিএনপিসহ সবাইকে তারা অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাবেন।


বিজ্ঞাপন


এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের একটা পক্ষ যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত তারাও ভোটের মাঠে নিজেদের প্রার্থী রাখার কথা ভাবছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে এ নিয়ে তারা সতর্কতার সঙ্গে কথা বলছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলীয় ফোরামে এখনো আলোচনা হয়নি। শিগগিরই স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে নির্বাচন সংক্রান্ত ইস্যুতে প্রস্তাবও সংগ্রহ করছে বিএনপি। শিগদিরই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে হাইকমান্ড।

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশ করা না করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। ৩০ তারিখের (জানুয়ারি) পর দেখেন না কি হয়, অপেক্ষা করতে হবে। হুট করেই কিছু বলা যায় না। একটু সময় দিতে হবে।’

অবশ্য বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দিলেন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ইঙ্গিত।

ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনই তো সুষ্ঠু হবে না বলছি। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে সিদ্ধান্ত তা হচ্ছে- শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাব না। কারণ, তার অধীনে কোনো নির্বাচন কখনো অবাধ-সুষ্ঠু হয় না।’

অবশ্য এর আগে ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পর উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের অনেকে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। অবশ্য ধীরে ধীরে ফলাফল খারাপ হতে শুরু করে। আর ২০১৮ সালের পর স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রথম দিকে অংশ নিলেও পরবর্তীতে আর ভোটে যায়নি বিএনপি।

২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্বের ৯৭টি উপজেলার মধ্যে ৪৩টিতে বিএনপি-সমর্থিত ও ১২ উপজেলায় জামায়াতে ইসলামী-সমর্থিত প্রার্থিরা বিজয়ী হন। সব মিলিয়ে ৫৫ উপজেলায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থীরাই বিজয়ী হন। দ্বিতীয় দফায় ১১৪টি উপজেলা নির্বাচনে ৫০টিরও বেশি উপজেলায পরিষদে জয়ী হন বিএনপির সমর্থকরা, আর ৪০টিতে জয় পায় আওয়ামী লীগ।

পরে ২০১৮ সালের পর স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রথম দিকে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। তবে ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আগামীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমরা আর কাউকে মনোনয়ন দেব না।'

দলীয় তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছিলেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। পরবর্তী অন্য কোনোও নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। ২০২২ সালের জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে বহিষ্কৃত হন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) দুইবারের নির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। আর গত বছর অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিশ্চিত বিজয়ের পরিবেশ থাকলেও দলের সিদ্ধান্তের কারণে অংশ নেননি সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ভোটে অংশ নিয়ে বহিষ্কার হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের তৈমুর আলম খন্দকার।

বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারের অধীনে ভোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত এখন বহাল আছে। যে কারণে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার অভিযোগে তৃনমূলের অনেককে বহিষ্কারও হতে হয়েছে। ফলে আসছে নির্বাচনেও এমন হার্ডলাইনে থাকলে আগ্রহী নেতা ও কর্মীদের মনোবলে চিড় ধরতে পারে এমন আশঙ্কাও আছে।

কেউ আবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ায় আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন্দল বিরাজ করছে বলে মনে করছেন। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগের এখন দুই গ্রুপ-তিন গ্রুপ। দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক রাখেনি। বিরোধ এড়াতে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এই সুযোগে দলের শক্তিশালী প্রার্থী ভোটে গেলে বিজয়ী হতে পারবেন— এমন প্রত্যাশার কথা বলছেন।

তারা বলছেন, সরকারি দলের একাধিক প্রার্থী থাকবে এবারের নির্বাচনে। তাই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দল থেকে কি বার্তা দেওয়া হয় সেই অপেক্ষায় আছেন আগ্রহীরা। 

বিএনপির খুলনা অঞ্চলের একজন জেলা পর্যায়ের নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনে অংশ না নিলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ধরে রাখা কঠিন। এ নির্বাচন নির্ভর করে স্থানীয় ভিতের ওপর। বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে কর্মীরা সরব হবে। নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকবে না, এটা একটা সুযোগ হতে পারে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির একজন আগ্রহী নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘তৃণমূল হলো দলের প্রাণ। এখানে টিকে থাকতে হলে আমাদেরও দলের বাইরে পদ-পদবি থাকা জরুরি। দল এসব চিন্তা করলে অন্তত নেতাকর্মীরা চাঙ্গা থাকবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। কিন্তু এখন তো নির্বাচন নেই। এক জায়গার সিদ্ধান্তে সবকিছু হয়। মাঠের কর্মীদের মনোভাবও আমরা বোঝার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কি হয় সে জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে।’

বিইউ/

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর