বুধবার, ৮ মে, ২০২৪, ঢাকা

নতুন বছরে সাধারণ মানুষের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
প্রকাশিত: ০২ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

নতুন বছরে সাধারণ মানুষের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ

ঋতু ‘শীত’ অতি বস্ত্র পরিধানের প্রেক্ষাপট দাবি করে। গরম পোশাকের বেশভূষা আমাদের পরিপাটি করে পরিচিতও করায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেও এখন গোছালো রাজনৈতিক পরিক্রমায় ভেসে গিয়ে অপশক্তি মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। রাজনৈতিক শক্তি তাদের বলা যায় না। যাবে না। বিএনপি, কৌশল হিসাবে তারা তাদের পুরোনো মিত্র জামায়াতে ইসলামীকেই রেখেছে।

গেল বছরে কথিত জাতীয়তাবাদী শক্তির আয়োজনে করা বিভাগীয় সমাবেশগুলোয় স্বাধীনতাবিরুদ্ধ শক্তির প্রত্যক্ষ উপস্থিতি ছিল। কোনোমতে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের দ্বারাই সমাবেশগুলো একরকম পার পেয়ে গেছে। বিএনপি ফলত বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ধারায় রাজনীতি করছে না। তারা ফাঁক খুঁজছে। একরকম ওঁৎ পেতে আছে। যা আগেও বলেছি।


বিজ্ঞাপন


এদিকে ৩০ ডিসেম্বরের ঢাকায় গণমিছিলের নামে জামায়াত পুলিশের ওপর আক্রমণ করে বলতে চেয়েছে, আমরা বাংলাদেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতেই থাকব। তাদের লক্ষ্য পরিষ্কার। বিরাজনীতিকরণের একটা উদ্যোগ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সড়কটিকে গতিহীন ও অমসৃণ করার অহেতুক উদ্যোগকে তাই শুধু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নয়, পুরো দেশবাসীকে সজাগ থেকে মোকাবিলা করতে হবে। নতুন বছরে সাধারণ মানুষের চ্যালেঞ্জ হোক, হায়েনামুক্ত এক বাংলাদেশ।

>> আরও পড়ুন: থিওরিটিক্যালি ও প্র্যাকটিক্যালি বিএনপি ‘আদর্শহীন’

কেন সাধারণ মানুষের কথা বললাম? কারণ হলো, গেল ১৪ বছরে বাংলাদেশ জীবনযাত্রায় কত কত ঝড় সামনে এলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়েই গিয়েছে। বাংলাদেশ পরিভ্রমণে যে কেউ বের হলে প্রথমত দর্শন ও দ্বিতীয়ত মানবচিন্তা উঁকি দিয়ে সাক্ষ্য রেখে তাঁকে বলাবে যে, বঙ্গবন্ধু তনয়া কাজ করেছে রে! এই কাজের কথাগুলো ছড়িয়ে দিতে বরং আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলো কর্মীরা খানিকটা ব্যর্থ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজ নিজ এলাকার মাত্র শীর্ষ দশটি বিশেষ কাজের কথা তুলে ধরার মানসে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি কর্মীকে যেতে হবে। তখনই তো দেশের মানুষের বিবেক কে প্রশ্ন করে বলা যায় যে, তোমরাই বলো- আর কী কী করার বাকী আছে? থাকলে বলো, আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করতে থাকি।

জনস্বার্থ সংরক্ষণের মধ্যদিয়েই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এই স্বার্থ রক্ষার মিশন যাদের পছন্দ হয় না, তারা তো জনশ্রেণির সেই ছোট্ট অংশ, যারা বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া, মুক্তি কিংবা সমৃদ্ধিকে ধারণ করে না। গবেষণা করেই বলছি, একটি এলাকার রাজনৈতিক সমাবেশে ঘরের প্রত্যেকে অংশ নেয় না। তাই আওয়ামী লীগের একটি সভায় জনউপস্থিতি যদি ৫ লক্ষ হয়, আমরা ধরে নিই, ওই অঞ্চলের ৩৫ লক্ষ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভালবাসে। কিন্তু ওই রাজনৈতিক অপশক্তির অবস্থা এমন, তারা সংখ্যায় কম বলে প্রত্যেকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বোঝাতে চাইছে, তাদেরও লোক আছে। আদৌতে বাস্তবতা এমন নয়। জামায়াত-শিবিরের নিজ দলের প্রতি আনুগত্য থাকায় তারা একটা কমিটমেন্ট নিয়ে মির্জা ফখরুলদের সভায় যাওয়া আসায় রয়েছে। বিএনপির মতো বুর্জোয়া দলের কার্যত কোনো কর্মী নেই। সারাদেশে একজনও নেই।


বিজ্ঞাপন


>> আরও পড়ুন: বিএনপির মুখে ‘মুখোশ’

বিএনপি উপলক্ষ তাড়িত হয়ে অপরাজনীতি করার অনুশীলনে ব্যস্ত। যেমন, তাদের পরবর্তী কর্মসূচীর তারিখ ১১ জানুয়ারি। যে তারিখটি গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারাবাহিকতা রুখতে পারার দিবস... ২০০৭ সালে এক এগারো সরকার প্রতিষ্ঠার দিন হিসাবেই ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়া এই তারিখে কর্মসূচী দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো, অগণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার কায়েমে এক প্রকারের তাগিদ রাখা। কিন্তু তাদের মনে রাখতে হবে, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী তার পেশাগত জায়গায় বাংলাদেশের সম্মান বহির্বিশ্বে ধরে রাখার পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রত্যাশাও করে।

বাংলাদেশের মানুষকে এখন তাই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। তাঁদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে রাজনৈতিক অপশক্তি মোকাবিলায় রাজনৈতিক ময়দানেও চলে আসতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, মেধাবী উদ্যোক্তা দাঁড় করানো, মূলধন ও পুঁজিগঠনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, কারিগরি ও প্রায়োগিক শিক্ষায় জোরদার ভূমিকা, উন্নত প্রযুক্তি নিশ্চিতকরণ, যোগাযোগ খাতের শ্রেষ্ঠ ব্যবস্থা করা, প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার, বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বিপ্লব, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি করা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর প্রতুলতা নিশ্চিত করেই এগোচ্ছে। অথচ, রাজনৈতিক অপশক্তির পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরণের প্রোপাগান্ডা চালিয়ে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ভালো অবস্থায় নেই। যা বিভ্রান্তিকর, বিব্রতকর বটে এবং অতি অবশ্যই হাস্যকরও।

একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, আমরা কমবেশি সারাবিশ্বই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে চিনি। সদ্য বড়দিন বা ক্রিসমাসে তাঁর প্রিয় মানুষ তাঁকে একটি দামী গাড়ি কিনে দিলে স্প্যানিশ এক রাজনীতিক এটিকে অর্থনৈতিক মন্দার দিনে বিলাসিতা বলে রায় দিয়েছেন। এতে করে বোঝা যায়, সারাবিশ্ব কতটা খারাপ আছে! হ্যাঁ, বৈশ্বিক মন্দা রয়েছে, যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে, পড়বে। ২০২৩ সাল অর্থনৈতিকভাবে আরও মন্দার দিকে যাবে। যার দায় আওয়ামী লীগের নয়। প্রকৃতি, মানচিত্রভিত্তিক দেশগুলোর যুদ্ধ করার সংস্কৃতি সারা পৃথিবীকে অশান্ত করে তুলতে পারে।

>> আরও পড়ুন: সবদিক বিবেচনা করে আওয়ামী লীগকে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে

কিন্তু, শেখ হাসিনা এমনই এক রাষ্ট্রনায়ক, আগেভাগেই চিন্তা করে রাখেন। দিবানিশি তাঁর মনেপ্রাণে বাংলার মানুষ। তাদের জন্য কিছু করতে পারলেই তাঁর চোখ বেয়ে জল নেমে আসে। সেই জলের বিস্তৃতি পুরো বাংলাদেশজুড়ে। যিনি একদিন তাঁর পরিবারের প্রায় সব্বাইকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ২২তম জাতীয় সম্মেলনেও প্রতিটি জীব তাঁকেই প্রত্যাশা করেছে। তাই তাঁর আবার দুর্বলতা কোথায়? তিনি শ্রেষ্ঠ, তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নারী।

শেখ হাসিনা, পৌষ পেরিয়ে মাঘের শীতার্ত ক্ষণকেও আলিঙ্গন করে গ্রামীণ মেঠোপথের মানুষগুলোর শুকনো ঠোঁটকে হাসি ঝরানোর অনুপ্রেরণা দিয়ে বলবেন, এবার সবজির ফলন কেমন? বলবেন, চলো- কাজ করি, কচি পাতায় ভর করে আবারও মিষ্টি বাতাসের সান্নিধ্য নিয়ে ঋতুরাজ বসন্ত কে স্বাগত বলি। আর ওরা? প্রকৃতির নেতিবাচক শক্তির তাঁবুতে আশ্রয় নিয়ে রাজনীতির জলবসন্ত রোগে আক্রান্ত হবে। ওরা সংখ্যায় কম। আসন্ন গ্রীষ্মে ওদের রাজনৈতিক সুস্থতায় আমরা কেবল বলতে পারি, তোমরা জনস্বার্থ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে রাজনীতির পথে থাকো। বাঁকা রাস্তায় নয়। রাষ্ট্র মেরামতের কথিত ২৭টি দফার মধ্যেও বাংলাদেশ নির্ভার থাকার আয়োজন নেই। নতুন করে চিন্তা করো। নতুবা, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ওই শেখ হাসিনার জন্য রাস্তায় নেমে আসবে। নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে ওরাই তখন বলবে, ‘অপশক্তি নিপাত যাক, শেখ হাসিনা থেকে যাক।’

লেখক: সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

বিইউ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর