সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ঢাকা

বিএনপির মুখে ‘মুখোশ’

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২২, ১১:২১ পিএম

শেয়ার করুন:

বিএনপির মুখে ‘মুখোশ’

বিখ্যাত হওয়া একটি উক্তির কথা মনে পড়ছে। ‘কোনো ভয়েস এত জোরে নয় যে, এটি আমার শোনার দাবি করতে পারে।’ এই মুহূর্তের পথচলায় তাই দেশে বিরোধী বলয় হতে কোনো অর্থবহ কণ্ঠ দ্বারা আমাকে ‘এই শোন’ বলার গোষ্ঠিগত উদ্যোগ নেই। যা দেখছি তা এক প্রকারের কৃত্রিম রাজনৈতিক তৎপরতা, আমাদের বিচলিত না হয়ে সামনের দিকেই ধাবিত হতে হবে। তবে চিন্তা করে যেতে হবে, ‘চিন্তা করতে পারার মধ্যেই উত্তর-প্রতিউত্তর তোমাকে শ্রেষ্ঠ করে আর সফলতাও এনে দেয়।’ তাই বাংলাদেশে যা হচ্ছে বা হতে থাকবে তা তৃতীয় চোখ ও অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে পরখ করে আমাদের গতিপথ নির্ধারণ করতে হবে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালে বইছে ধুলো হাওয়া, মিষ্টি হাওয়া নয়। যে ধুলো হাওয়া ঝড় হয়ে ফিরতে চায়। বিখ্যাত এক রাষ্ট্রনায়কের কথাগুলো আমার জীবনকে প্রভাবিত করে। যেমন, ‘আমি একটি তুলনামূলকভাবে সমান সমাজে বিশ্বাস করি, যা এমন প্রতিষ্ঠান দ্বারা সমর্থিত যা সম্পদ এবং দারিদ্রের চরম সীমাবদ্ধতা রাখে। আমি গণতন্ত্র, নাগরিক স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। এটি আমাকে একজন উদারপন্থী করে তোলে এবং আমি এতে গর্বিত।’


বিজ্ঞাপন


গর্বিত হওয়ার সবিশেষ যুক্তিও আছে। আমার ও আমাদের বোন শেখ হাসিনা এমনই এক উন্নত মানের শাসক, যার নেতৃত্ব অবলোকন করে এই বয়সেও শুধু শিখে যাচ্ছি। ওয়ারেন বেনিস যেমন বলেছিলেন- নেতৃত্ব হল দৃষ্টিকে বাস্তবে রূপান্তর করার ক্ষমতা। শেখ হাসিনা ফলত দেখতে জানেন। নেতৃত্বের মৌলিক গুণাবলির মধ্যে দূরদৃষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা তাঁর মধ্যে আছে বলেই টানা তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী হয়ে বাংলাদেশ কার্যত পথ হারাননি। কারণ, তিনি শুধু দেখতে জানেন না, বাস্তবায়নের প্রশ্নে তিনি এক ঐতিহাসিক পর্যায়ের অদম্য সত্তা।

>> আরও পড়ুন: বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাসের বিচার করতে হবে দ্রুত

থমাস একুইনাস বলেছিলেন, সত্যিকারের বন্ধুত্বের চেয়ে মূল্যবান হওয়ার মতো এই পৃথিবীতে আর কিছুই নেই। বন্ধুভাগ্য একজন শেখ হাসিনার কেমন, সেটা অবশ্য একবার ঝালিয়ে নিতে হবে। কারণ, তাঁর এখনো বাংলাদেশকে বহু কিছু দেওয়ার বাকি। ভালো সহকর্মী ও বন্ধু-ভাই-বোন পেলে বাংলাদেশ একটা অতি উন্নত জায়গায় চলে যাবে।

রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকারদের কেহ কেহ শেখ হাসিনাকে গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর দার্শনিক রাজা হিসাবে অভিহিত করেছেন। প্লেটো অন্যদিকে সর্বদা রাজনৈতিক মতবাদ রাখার প্রশ্নে নিকৃষ্ট শাসকদের একহাত নিতেন।


বিজ্ঞাপন


খুব স্পষ্ট করে বলছি, দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ক্ষমতার মসনদে বসতে চাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষাধারীদের এমন ব্যক্তিবর্গদেরকেই প্লেটো ঘৃণা করতেন। তিনি মনে করতেন, জনস্বার্থ উদ্ধারের কোনো পরিকল্পনা না থেকেও তাঁরা ক্ষমতা চেয়ে বসে। দেশের নামধারী রাজনৈতিক দল বিএনপি কে তাই কী বলা যায়? আমার প্রশ্ন এই দেশের বিশ কোটি মানুষের কাছে- আচ্ছা, তাঁরা কি মানুষের জন্য কি কি করবে তা গেল একযুগে স্পষ্ট করতে পেরেছে? যদি পেরে থাকে, সমাবেশ, মহাসমাবেশ সবকিছু করুক, আমরা বাঁধা দেওয়ার কে? এখনও পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বাঁধা দেয়নি, কিন্তু গভীর চিন্তা করতে পারলে আমার মনে হয়, রাজনৈতিক অপশক্তি হওয়ার সকল ধর্ম নিয়ে বাস করা বিএনপিকে বিনাশ করার সময় এসেছে। প্লেটোর রাজনৈতিক স্থিতিশিলতার মতবাদকে সম্মান করতে চাইলে বিএনপিকে ‘না’ বলতেই হবে।

>> আরও পড়ুন: সমাবেশের বার্তা পরিষ্কার, ধর্মঘটের বার্তা কী?

মতামত তাই রেখেই যেতে হবে। সত্যটা বলতে হবে। প্লেটোই যেমন বলেছিলেন- মতামত হল জ্ঞান ও অজ্ঞতার মধ্যকার মাধ্যম। কাজেই দুটো শ্রেণির জন্য আমার কিংবা আমাদেরকে মৌখিক ও লিখিত ধারাভাষ্য প্রতিদিনই প্রকাশ করে যেতে হবে। এভাবেই জনশ্রেণির মধ্যকার মূল্যবোধ তৈরি হবে, তাঁরা সচেতন নাগরিক হয়ে একদিন মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয়তা, সংবিধান ও শাসনরীতি সম্যক ধারণা পেয়ে ধনী শ্রেণির মতো করে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। অর্থাৎ চিন্তার জায়গায় ধনী!

অন্ধকারকে ভয় পায় এমন একটি শিশুকে আমরা সহজেই ক্ষমা করতে পারি; জীবনের আসল ট্র্যাজেডি হলো যখন মানুষ আলোকে ভয় পায়। এমন মতবাদও সেই প্লেটোর।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে শকুনেরা ফিরে আসে। তারা অপেক্ষায় থাকে কখন নিথর দেহ হয়ে অসাধারণ সত্তাগুলো পড়ে আছে! মানুষ সেই শকুনরুপি অন্ধকারকে ভয় পায়, তখন তাদেরকে প্রতিবাদ করত তাগিদ না দিয়ে ক্ষমাও করা যায়। কিন্তু, মানুষ ভয় পেয়ে গিয়েছিল যখন শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকতে জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর ৬০০-৭০০ কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিলেন। একইভাবে তার পারিবারিক উত্তরসূরিরা বাংলাদেশ বিরুদ্ধ শক্তিকে মিত্র করে জিয়ানীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। তারা ২১ আগস্টের মতো জঘন্য উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি খ্যাতনামা রাজনীতিকদেরকে জীবন থেকে সরিয়ে দেয়। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ থেকে শুরু করে লুটপাট করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দেওলিয়া করে। তাদেরকে দিনের আলোয় পুনরায় শাসকশ্রেণি হিসাবে দেখা গেলে সেই আলোকে ভয়-ই পাবে বাংলাদেশ।

>> আরও পড়ুন: বিএনপি লাশ পেলেই খুশি

বিএনপিই হলো সেই ভোট সংস্কৃতির প্রচলনকারী, বিখ্যাত উক্তিকে স্মরণ করতেই হচ্ছে। তা হলো- ‘জনগণ জানে যে নির্বাচন হয়েছে এটাই যথেষ্ট। যারা ভোট দেয় তারা কিছুই সিদ্ধান্ত নেয় না। যারা ভোট গণনা করবে তারাই সব সিদ্ধান্ত নেবে।’- এই উক্তির মতো করে তারা হ্যাঁ, না ভোট চালু করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছিল। সবাই তা ভুলে যায় কেন?

বিএনপি হালে একটি সুন্দর মাস্ক পরিধান করেছে। দেখতে ভালো দেখাচ্ছে! কিন্তু, বাংলাদেশের মানুষের জন্য বলছি- ‘মুখোশ পরিধান করে ডাকাতি করা যায়, রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায় না’-----। না, এমন উক্তি বিশেষজনের নয়, খায়রুজ্জামান লিটন বলছি...।

লেখক: সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

বিইউ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর