বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। কোনো ধরনের স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন দমিয়ে রাখা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
রোববার (২১ মে) বিকেলে ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়ায় নবনির্মিত স্থলবন্দরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফেনীর বিলোনিয়া রেলপথ পুনরায় চালু করার ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য অনেক আগেই রেল মন্ত্রণালয়কে ডিও লেটার দিয়েছেন। দেশে রেল বিভাগের কয়েকটি মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে। অচিরেই এটিও চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিলোনিয়া রেলপথ চালু হলে বঙ্গবন্ধু শিল্পপার্কের সঙ্গে ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক সম্প্রসারিত হবে।
এর আগে ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় নির্মিত বিলোনিয়া স্থলবন্দরের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, স্থলবন্দর চালু হলে শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য নয়, দুই দেশের সম্পর্কেরও উন্নয়ন হবে। দুই দেশের জনগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়বে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে ২০০১ সালের ১৪ জুন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। স্থলপথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দিতে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সঠিক দিক নির্দেশনায় ২৪টি স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এসব স্থলবন্দরের মধ্যে ইতোমধ্যেই ১৪টি স্থলবন্দরের উন্নয়ন সম্পন্ন করে অপারেশনাল কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এরমধ্যে ফেনীর পরশুরামের বিলোনিয়া স্থলবন্দরও একটি।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আলমগীরের সভাপতিত্বে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেনী-১ আসনের (ছাগলনাইয়া-ফুলগাজী-পরশুরাম) সংসদ সদস্য শিরীন আখতার ছাড়াও জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান, ফেনী-৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাকিবুল হাসান, পুলিশ সুপার জাকির হাসান, পরশুরাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার, পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী (সাজেল) প্রমুখ।
এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুগ্ম কমিশনার কাস্টমস এবং প্রকল্প পরিচালক ডিএম আতিকুর রহমান। এ সময় অন্যদের মধ্যে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ৪টি স্থলবন্দরের দায়িত্বে নিয়োজিত ম্যানেজার দেবাশীষ নন্দি, ফেনীর কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার মো. বাবুল ইকবাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের আওতায় ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় বিলোনিয়া স্থলবন্দরটি সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ৩৮ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা। মোট ১০ একর জমিতে ভূমি উন্নয়ন, সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ড, পার্কিং ইয়ার্ড, একটি ওয়্যারহাউজ, ট্রান্সশিপমেন্ট শেডসহ একটি অফিস ভবন ও একটি ডরমিটরি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় বন্দরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা স্থাপন, টয়লেট কমপ্লেক্স ও আমদানি-রফতানিকৃত পণ্যের সঠিক পরিমাপের লক্ষ্যে ১০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ডিজিটাল ওয়েব্রিজ স্কেলও নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থলবন্দরটি দিয়ে সব ধরনের পণ্য আমদানি-রফতানি করা যায়। তবে বর্তমানে প্রধানত গবাদিপশু ছাড়াও মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, বীজ, গম, পাথর (স্টোনস এনড বোল্ডারস), কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদাসহ বলক্লে, কোয়ার্টজ ইত্যাদি আমদানি করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি রফতানিযোগ্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, প্লাস্টিক পণ্য ছাড়াও শিশু খাদ্যজাতীয় পণ্য।
প্রতিনিধি/আইএইচ