বাধাহীনভাবে রাজধানীর কোনো ফুটপাত ধরে হাঁটা এক ধরনের কল্পনা। নানা কারণে ফুটপাতে বাধাহীনভাবে হাঁটা যায় না। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ফুটপাতে অবৈধভাবে নির্মাণসামগ্রী রাখা, দখল করে ব্যবসা, ফুটপাত দিয়ে মোটরসাইকেল চালানো, গাড়ি পার্কিং। এরসঙ্গে আছে বিভিন্ন স্থানে ফুটপাত দখল করে নার্সারি ব্যবসা।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় অন্তত শতাধিক স্থানে ফুটপাত দখল করে নার্সারি ব্যবসার চিত্র দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অন্তত ৮টি স্থান সরেজমিন ঘুরে দেখেন প্রতিবেদক। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল সংলগ্ন এলাকা, শাহবাগ, ধানমন্ডি, খিলগাঁও, বাসাবো, মুগদা, ফকিরাপুল, আরামবাগ এলাকায় ফুটপাত দখলে রেখে ব্যবসা পরিচালনা করতে দেখা গেছে। এছাড়া মতিঝিল, শাহজাহানপুর, মালিবাগ, পল্টন, শান্তিনগর, সার্কুলার রোড, গ্রিন রোড, এলিফ্যান্ট রোড, সেগুনবাগিচা, ওয়ারী, যাত্রাবাড়ীসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে এমন দখলদারিত্ব।

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কলাবাগান, মোহাম্মদপুরের রিং রোড, সাতমসজিদ, মিরপুর এলাকার একাধিক স্থানে ফুটপাতে নার্সারির ব্যবসা করতে দেখা গেছে। এছাড়া বনানী, কড়াইল, বাড্ডা, মেরুল, রামপুরা, উলন, বাগিচার টেক, নাছিরের টেক, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, বেগুনবাড়ি, কুনিপাড়া এলাকায়ও একই চিত্র দেখা গেছে।
>>আরও পড়ুন: খালি নির্ধারিত বোর্ড, পোস্টারের ছড়াছড়ি দেয়ালে
বিজ্ঞাপন
ফুটপাত দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভাড়া নিয়েই ব্যবসা করছেন তারা। এলাকাভেদে দৈনিক দিতে হয় ৫শ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। কোথাও কোথাও সপ্তাহিক চুক্তিতেও ফুটপাত দখলে নিয়ে ব্যবসা করছেন তারা। নিয়মিত লাইনম্যান এসে নিয়ে যাচ্ছে চাঁদা। ব্যবসা করার ক্ষেত্রে শর্ত জুড়ে দেওয়া হচ্ছে- নিজ নিরাপত্তায় রাখতে হবে এসব গাছ। হারালে বা সিটি করপোরেশনের অভিযানে ক্ষতি নিজেদেরই পোষাতে হবে।

ঢাকা টিসার্স ট্রেনিং কলেজের (মিরপুর রোড) দেয়াল ঘেঁষে নার্সারির ব্যবসা করছেন তিন জন। নাম প্রকাশ না করার তারা শর্তে বলেন, আগের মতো ব্যবসা করে শান্তি নাই। একই জায়গা তিন গ্রুপ ভাড়া দেয়। কলেজ গ্রুপ (ঢাকা কলেজ, টিসার্স ট্রেনিং কলেজ), হ্যাকার গ্রুপ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দলকে দিতে হয় টাকা। পুলিশের হপ্তাহ তো আছেই।
আরও পড়ুন: উচ্ছেদের জায়গায় সুসজ্জিত বাস কাউন্টার!
নিউমার্কেট এলাকায় পথচারী আকরার ঢাকা মেইলকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ফুটপাত দখল করে নার্সারির ব্যবসা চলছে। সিটি করপোরেশনকেও দেখিনা এসব উচ্ছেদ করতে। সবুজায়ন বলে কেউ কেউ সিম্পেথি দেখাতে চায়, অথচ পথচারীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে।

কলাবাগানের বাসিন্দা লায়লা ঢাকা মেইলকে বলেন, ফুটপাত দখলে থাকে বলেই অনেকেই কাছের দূরত্বেও হেঁটে না গিয়ে রিকশায় যাতায়াত করেন। ফুটপাতে থাকা নার্সারিগুলো যেন লাইসেন্স পেয়ে বসেছে। সারা বছর দখলে থাকায় পথচারীদের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।
যা বলেছে দুই সিটি
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বলছে, ফুটপাতে সব ধরনের দখলদারিত্ব সরাতে তৎপর তারা। ফুটপাত দখল করে যারাই জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছেন তারা। অনেক ক্ষেত্রেই জেল-পরিমানাও করা হচ্ছে। যদিও তারা বলছেন, অভিযান পরিচালনার খবর শুনলেই ব্যবসায়ীরা দোকান রেখে সটকে পড়েন। অভিযানে মালামাল সরিয়ে নির্বিঘ্ন যাতায়ত নিশ্চিত করা হলেও পরক্ষণেই আবার দখলে যাচ্ছে।
ফুটপাত দখল করে জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করায় নার্সারি সরাতে অভিযানে নেমেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল সংলগ্ন এলাকার এক নার্সারি ব্যবসায়ীকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছে সংস্থাটি।

চলমান অভিযান প্রসঙ্গে ডিএসসিসি অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীন বলেন, কার্জন হল সংলগ্ন এলাকার ফুটপাতে যাতে নার্সারি বসিয়ে জনগণের চলাফেরায় বিঘ্ন সৃষ্টি না করা হয় সেজন্য তাদেরকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। তারা সতর্কবার্তায় গুরুত্ব দেননি। তাই আমরা অভিযান পরিচালনায় অনেকটা বাধ্য হয়েছি।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন ঢাকা মেইলকে বলেন, নাগরিকদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে এমন সবকিছু অপসারণে তৎপর সিটি করপোরেশন। বিশেষ করে জনভোগান্তি সৃষ্টি করে এমন দিকগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
>> আরও পড়ুন: ধুলার রাজ্যে অসহায় রাজধানীবাসী
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, হকার ম্যানেজমেন্ট করতে গেলে শুধু উচ্ছেদই নয়, আরও অনেক বিষয়ের ম্যানেজমেন্ট প্রয়োজন। সিটি করপোরেশন যদি মনে করে, কোনো রাস্তা নাগরিকদের নিরবিচ্ছিন্ন হাঁটার পথ করে দেব, যে রাস্তা হকার ধারণ করার মতো অবস্থানে নেই তা রেড জোন করে দিলাম, তা হবে না। এর আগে পরিকল্পনা নিতে হবে। হকার সংখ্যা নির্ধারণের পর দেখা যাবে সিটি করপোরেশনের পক্ষে এত সংখ্যক হকার বসানোর সক্ষমতা নেই। এলাকাভিত্তিক হকার ব্যবস্থাপনা কমিটি করতে হবে। শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। তারপই নিয়মিত তদারকি করতে হবে। হঠাৎ হঠাৎ অভিযান চালিয়ে কাজে আসবে না।
ডিএইচডি/জেএম

