বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

উচ্ছেদের জায়গায় সুসজ্জিত বাস কাউন্টার!

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ৩০ আগস্ট ২০২২, ০৭:০৬ পিএম

শেয়ার করুন:

উচ্ছেদের জায়গায় সুসজ্জিত বাস কাউন্টার!

২০২০ সালের ডিসেম্বরে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল রাজধানীর গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের নকশা বহির্ভূত অংশ। পরে কয়েক দফায় আবারও অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনাও ভেঙে ফেলা হয়। সবশেষ গত মার্চের ৮ তারিখও বুলডোজার আর হাতুড়ি দিয়ে একে একে ভেঙে ফেলা হয়েছিল অসংখ্য নকশা বহির্ভূত দোকান।

সে যাই হোক, ওই অভিযান এখন অতীত! পাঁচ মাস পর বর্তমান সময়ে এসে পাল্টেছে উচ্ছেদ করা সেই জায়গাগুলোর চিত্র। অসংখ্য দোকানের পাশাপাশি রীতিমতো সুসজ্জিত বাসের কাউন্টারও গড়ে উঠেছে এই মার্কেটে।


বিজ্ঞাপন


যদিও মার্চের সেই অভিযানে মার্কেটের ভেতরের পাশাপাশি দেয়াল ঘেঁষে গড়ে ওঠা নকশা বহির্ভূত দোকানও ভেঙে ফেলা হয়েছিল। তবে বর্তমান চিত্র প্রায় উচ্ছেদের আগের মতোই।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের ঠিক দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে দেয়াল ঘেঁষে কিছুটা উঁচুতে তৈরি করা হয়েছে পরিবহনের কাউন্টার। যেখানে গত মার্চে উচ্ছেদের আগে হাজী বিরিয়ানি নামের একটি দোকান চালু করা হয়েছিল। ভেতরে-বাইরে টাইলস দিয়ে পুরো টিপটপ বিরিয়ানির দোকানটি শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই উচ্ছেদ করা হয়। বর্তমানে সেই জায়গাতেই ওই পরিবহন কাউন্টারটি চালু করা হয়েছে।

Specal News

‘ইমাদ পরিবহন’ নামে ওই সুসজ্জিত বাস কাউন্টারটির সামনের অংশসহ পাশে বড় আকারের ডিজিটাল সাইনবোর্ডও লাগানো হয়েছে কাউন্টারটিতে। বিশেষ করে রাতে অনেক দূর থেকেও চোখে পড়বে সাইনবোর্ডটি। আর ভেতরে বেশ কয়েকটি চেয়ার নিয়ে দুই-তিনজনকে দায়িত্বেও থাকতে দেখা যায়। যারা প্রত্যেকে ল্যাপটপে টিকিট বিক্রি করছেন।


বিজ্ঞাপন


সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, রাজধানীর ব্যস্ততম এই এলাকা থেকে ঢাকার অভ্যন্তরীণ রুটের পাশাপাশি দেশের অনেক জেলার বাস চলাচল করে। বিশেষ করে বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড থেকে একাধিক রুটে বিআরসিটি, টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, ইমাদ পরিবহনের গাড়ি চলাচল করে। এগুলো গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, পিরোজপুর, খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরাও যায়। এরমধ্যে গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর একাধিক রুটে এসব যানবাহন চলাচল করছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে যাত্রীদেরও চাপও। আর এই সুযোগে তাই নতুন করে বাস নামানোর পাশাপাশি সুসজ্জিত কাউন্টারও তৈরি করছেন মালিকরা।

এদিক, উচ্ছেদ করা জায়গায় পাকাপোক্ত করে কীভাবে এমন কাউন্টার বসানো হলো তা নিয়ে প্রশ্নও তুলছেন স্থানীয়রা। এমনকি দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে হাঁটা দূরত্বের এই মার্কেটটিতে আবারও কীভাবে নকশা বহির্ভূত দোকান বসানো হয়েছে তা নিয়েও ক্ষোভ আছে মার্কেটের বৈধ ব্যবসায়ীদের মনে।

Specal News

যদিও ইমাদ পরিবহনের সংশ্লিষ্টদের দাবি- মার্কেট মালিকদের কাছে থেকে পজিশন ভাড়া নিয়ে কাউন্টারটি করা হয়েছে। এ বিষয়ে কাউন্টারে থাকা টিকিট বিক্রয় প্রতিনিধি মশিউর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘যতটুকু জানি এটা মালিকদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তবে পজিশনের কত ভাড়া সেটা আমার জানা নেই।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কেটের এক ব্যবসায়ী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘একবার উচ্ছেদ করে এরপর ফলোআপ না করায় এমন অবস্থার তৈরি হয়। অথচ, এখান থেকে সিটি করপোরেশনের হাঁটাপথের দূরত্ব পাঁচ মিনিট।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিনকে একাধিকবার টেলিফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে সম্পত্তি বিভাগের অপর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, বিভাগের প্রধান নির্দেশ দিলে কালকেই উচ্ছেদ করা সম্ভব। আমাদের নিজেদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব না। একবার নির্দেশনা পেয়ে আমরা এই জায়গা উচ্ছেদ করেছি। আবারও দখল হয়েছে শুনছি, এখন আবার যদি নির্দেশনা আসে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Specal News

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন মার্কেটে নকশা বহির্ভূত ৭৫৩টি দোকান রয়েছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে ২০২০ সালে সেখানে অভিযান চালায় ডিএসসিসি। পরে কয়েক দফায় মার্কেটের ওপরে ও আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা অবৈধ স্থাপনা ও দোকান উচ্ছেদ কারা হয়। তবে ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই উচ্ছেদ ঠেকাতে চারজন আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধনসহ নানা তদবিরও চালান দোকান মালিকরা।

তাদের দাবি ছিল- হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকার পরেও করপোরেশন তাদের দোকান ভেঙে দিচ্ছে। কিন্তু নিজেদের অবস্থানে অটল থেকে প্রথম দিনের অভিযানে মার্কেটের বেশকিছু অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয় নগর কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে আবারও চলতি বছরের ৮ মার্চ উচ্ছেদ করা জায়গায় নকশা বহির্ভূত দোকান বসানোর কারণে ফের অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন। ওই উচ্ছেদ অভিযানে মার্কেটের নিচতলার ৫ নম্বর গেটে অবৈধভাবে নির্মিত দোকান এবং নিচতলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরের অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

কারণ, ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি ও পণ্যের জন্য পরিচিত সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটের সিঁড়ি, হাঁটা-চলার পথ, টয়লেটসহ বিভিন্ন জায়গা দখল করে এসব দোকান গড়ে উঠেছিল। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমেও ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

বিইউ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর