বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ধুলার রাজ্যে অসহায় রাজধানীবাসী

খলিলুর রহমান
প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:২৫ এএম

শেয়ার করুন:

ধুলার রাজ্যে অসহায় রাজধানীবাসী

বায়ু দূষণে একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েছেন রাজধানী ঢাকার বাসিন্দারা। বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ ধুলাবালি। ধুলার কারণে যেমন বাড়ছে জনভোগান্তি, তেমনি বাড়ছে রোগবালাই। বলতে গেলে সারা বছর ধরেই ধুলার রাজত্ব চলে রাজধানীতে। শুধু প্রধান সড়কই নয়, রাজধানীর অলিগলিও এখন ধুলায় আচ্ছাদিত। বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ করেও রক্ষা নেই।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বাংলামটরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশের ব্যবসায়ীরা বায়ু দূষণ তথা ধুলায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। যানবাহনের চাপে দিনের বেশিরভাগ সময় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এলাকা। একসঙ্গে অনেক গাড়ি চলাচলের কারণে ধুলা কুয়াশার মতো গাঢ় হয়ে যায়। দোকানের কাচ, মালামালসহ আসবাবপত্রে ধুলার স্তর জমে যায়। শিক্ষার্থী, পথচারীদের নাক বন্ধ করে চলাচল করতে হয়।


বিজ্ঞাপন


স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে নিজ উদ্যোগে পানি ছিটিয়ে সাময়িক ধুলা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু অসংখ্য গাড়ি চলাচল করায় কিছু সময়ের মধ্যেই আবার ধুলায় একাকার হয়ে যায়।

>> আরও পড়ুন: স্কুলপাড়ায় ধুলার রাজত্ব

কারওয়ান বাজার এলাকার ব্যবসায়ী ফারুক মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, এত ধুলা। ধুলার কারণে সর্দি হয়ে গেছে।

dm


বিজ্ঞাপন


মাসুক মিয়া নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, সবসময় আমাদের ধুলার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। ধুলার কারণে সুস্থভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করা মুশকিল হয়ে পড়ছে। দিনে কয়েকবার দোকানের সামনে পানি ছিটাই। কিন্তু ধুলা ঠেকানো যায় না।

ফার্মাগেট এলাকার রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী সিদ্দিক মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, ধুলার কারণে মানুষ এখন রেস্টুরেন্টে খাওয়া-ধাওয়া কম করে।

পশ্চিম তেজতুরী বাজারের বাসিন্দা মাসুদ রানা ঢাকা মেইলকে বলেন, ধুলার কারণে মানুষ শুধু অতিষ্ঠ নয়, অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী গর্ভবতী। ধুলার কারণে তার সর্দি-কাশি হয়ে গেছে। ডাক্তার বলেছে ধুলামুক্ত থাকতে। কিন্তু ধুলামুক্ত থাকা সম্ভব নয়। বাসার দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও লাভ হচ্ছে না। সকালে আসবাবপত্র মুছে রাখলে বিকালে আবার ধুলার স্তর জমে যায়। এভাবেই চলছে আমাদের জীবন।

মগবাজার এলাকার বাসিন্দা সোহেল মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, ঘরের খাবার-দাবার, জামাকাপড়, আসবাবপত্র—সবকিছু ধুলাবালুতে নষ্ট হচ্ছে। ধুলার কারণে ঘরের সবার সর্দি–কাশি লেগেই আছে।

আব্দুর রহিম নামের এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ঢাকা মেইলকে, আমাদের তো ধুলার মধ্যেই দায়িত্ব পালন করতে হয়। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার ধুলার পরিমাণ অনেক বেশি। কী যে কষ্ট হয়, বোঝানো যাবে না।

রাজধানীর গাবতলী, যাত্রাবাড়ীর সড়কে তো গাড়ির কারণে ভয়াবহ অবস্থা। ধুলাবালিতে বায়ু দূষণ চরম মাত্রায় থাকে।

মিরপুর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মিরপুরের প্রতিটি এলাকার গাছের পাতায় ধুলার পুরো স্তর দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, সড়কের পাশে বিক্রি হয় নানারকম খাবার। ধুলাবালিমাখা এই খাবারই খেতে হয় মানুষকে।

সুমাইয়া মাহিন নামের একজন নার্স ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার বাসা মিরপুর এলাকায়। আমি মগবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছি। প্রতিদিন মিরপুর থেকে মগবাজারে আসতে হয়। যখন বাসায় ফিরি জামাকাপড়, চুল ও ত্বকে ধুলার একটা প্রলেপ পড়ে যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত নাগরিকদের এসব দুর্ভোগ লাঘবে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

>> আরও পড়ুন: ধুলোবালির দাপটে বছিলাবাসীর জীবন অতিষ্ঠ

এদিকে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকার বায়ু দূষণ ক্রমাগতভাবে চরম উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছায় ৯টি প্রস্তাব দিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)। বায়ু দূষণ কমাতে নগর এলাকাসহ সারাদেশে অবকাঠামো, ভবন নির্মাণসহ যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যথাযথ মানদণ্ডে প্রকল্প ব্যবস্থাপনাসহ কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শনিবার (২৮ জানুয়ারি) আইপিডি আয়োজিত ‘রাজধানীর বিপর্যস্ত বায়ু: নগরায়নের বিদ্যমান প্রেক্ষিত ও করণীয়’ শীর্ষক পর্যালোচনা সভায় এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়।

আইপিডি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ঢাকার চেয়েও নারায়ণগঞ্জ এলাকার বায়ুমান বিপজ্জনক। পুরো জানুয়ারি মাসে গড়ে বায়ুমান সূচক (একিউআই) ৪০০ বা তার চেয়ে বেশি ছিল। ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকার বায়ু দূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কার্যকর ক্লিন এয়ার আইন করতে আমরা কেন ব্যর্থ হলাম, কারা এই আইন করতে দেয়নি- এই বিষয়গুলোর জবাব নীতিনির্ধারকদের দিতে হবে। বায়ু দূষণ রোধ করতে কার্যকর প্রকল্প, নির্মাণ ও নগর ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

কেআর/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর