শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

শাস্তি নয়, ক্ষতিপূরণেই পার পাবে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান!

তানভীর আহমেদ
প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৩৮ এএম

শেয়ার করুন:

শাস্তি নয়, ক্ষতিপূরণেই পার পাবে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান!

রাজধানীর উত্তরার জসীমউদ্দীন মোড়ে গার্ডার স্থানান্তরের সময় ক্রেন কাত হয়ে প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে ৫ জন নিহত হন গত ১৫ আগস্ট। ঘটনার দিনই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রথমিক তদন্তে দুর্ঘটনার পরপরই চুক্তি বাতিল করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গেঝুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডকে কালো তালিকাভুক্ত করার কথা বলা হয়। কিন্তু শেষমেশ সে পথে যাচ্ছে না সরকার। প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পর আবারো শুরু হয়েছে কাজ।

‘গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট’ প্রকল্পের (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) আওতায় প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি নির্মাণ করা হচ্ছে গাজীপুর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত। চীনের তিনটি এবং বাংলাদেশের একটি কোম্পানি এই প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে। উত্তরার যে এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই অংশের কাজ করছে ঠিকাদার কোম্পানি চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি)।


বিজ্ঞাপন


uttara
গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকারে থাকা পাঁচজন নিহত হয়।

গত ১৫ আগস্ট বিকেলে উত্তরা জসীম উদ্দীন রোডের মাথায় প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে বিআরটির একটি বক্সগার্ডার ট্রেইলারে তোলার সময় ভারসাম্য হারায় ক্রেইন। বিপুল ওজনের কংক্রিটের গার্ডারটি টঙ্গীমুখী সড়কে চলমান একটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে। ভারী ওই গার্ডারের চাপে মুহূর্তের মধ্যে চ্যাপ্টা হয়ে যায় গাড়িটি। তাতে গাড়ির ভেতরেই মৃত্যু হয় পাঁচজনের, দুজনকে উদ্ধার করে পাঠানো হয় হাসপাতালে। তারা সবাই এক পরিবারের সদস্য। দুর্ঘটনার দিনই সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। প্রাথমিক প্রতিবেদনে কমিটি বলেছে, দুর্ঘটনার পেছনে চীনা ঠিকাদার কোম্পানি সিজিজিসির ‘গাফিলতি’ পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঠিকাদারের চুক্তি বাতিল হলে প্রকল্প ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নতুন করে দরপত্র প্রক্রিয়ায় গেলে প্রকল্প পিছিয়ে যেতে পারে ৩-৪ বছর। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতিরও আশঙ্কা রয়েছে। তাই শাস্তি না দিয়ে ঠিকাদারের কাছে নিহতের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। আর এ ক্ষতিপূরণের টাকা নেওয়া হবে বীমার মাধ্যমে।

uttara


বিজ্ঞাপন


সূত্র মতে, বিআরটির নির্মাণ কাজ চলাকালে ঠিকাদারকে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করে দেওয়ার শর্ত ছিল। নির্মাণ চলাকালে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার শর্তটিও মানা যায়নি। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে, ১০৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঠিকাদারকে শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না। গার্ডার দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন গত ১ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় কমিটি।

তদন্ত কমিটির প্রধান, বিআরটি প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতার বলেছেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঠিকাদারের গাফিলতি ছিল। চীনা ঠিকাদার চায়না গেঝুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড শুরু থেকেই অর্থ সংকটে রয়েছে। সে কারণে কখনো ঠিকভাবে কাজ করেনি।
uttara
গার্ডার তুলতে গিয়ে হেলে পড়ে এই ক্রেনটি

এদিকে, ক্রেইন দুর্ঘটনায় গাফিলতির জন্য চীনা ঠিকাদারের শাস্তি হলে চীন তা ‘মেনে নেবে’ বলে সেই সময় জানিয়েছেন বাংলাদেশে সে দেশের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং গত ১৫ অগাস্ট উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন। এ সময় চীনের রাষ্ট্রদূত গার্ডার দুর্ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি থাকবে না বলে জানান।

গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট’ প্রকল্পের (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) আওতায় প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি নির্মাণ করা হচ্ছে গাজীপুর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত। চীনের তিনটি এবং বাংলাদেশের একটি কোম্পানি এই প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে। উত্তরার যে এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই অংশের কাজ করছে ঠিকাদার কোম্পানি চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি)।

uttara
দুর্ঘটনার প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর গার্ডারটি সরিয়ে লাশগুলো বের করে আনেন উদ্ধারকর্মীরা।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেছেন, এ ঘটনায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন। তদন্তের প্রতিবেদনে চীনা প্রতিষ্ঠানকে দোষী হিসাবে সাব্যস্ত করা হলেও শাস্তির ভার দিয়েছেন সরকারের উপর। কয়েকটি বিষয় নিয়ে সামনের দিকে এগুচ্ছে সরকার। তবে কাজের ক্ষেত্রে কোনো বাধা যেনো না হয় সে বিষয়েও বিবেচনা করা হচ্ছে।

টিএ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর