রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কূটনৈতিক পাড়ায় ময়লার ভাগাড়!

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
প্রকাশিত: ০৭ অক্টোবর ২০২২, ০৭:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

কূটনৈতিক পাড়ায় ময়লার ভাগাড়!

রাজধানীর প্রগতি সরণির নতুন বাজার এলাকায় প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে ঢাকাস্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের দূতাবাস। আশপাশে রয়েছে আরও অনেক দেশের দূতাবাস ও মিশন। এলাকাটি কূটনৈতিক পাড়া হিসেবে পরিচিত। ঢাকার অভিজাত এই এলাকার নির্ধারিত সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনের (এসটিএস) সংস্কার কাজের জন্য খোলা রাস্তায় এনে রাখা হচ্ছে আশপাশের এলাকার ময়লা। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আবর্জনার স্তূপ ও দুর্গন্ধে ওই এলাকায় চলাচল কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ সাময়িক এই সমস্যার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। শিগগির নির্ধারিত এসটিএস সংস্কার হয়ে গেলে এই সমস্যা থাকবে না বলে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

অভিজাত এলাকা গুলশান নতুন বাজারের পাশেই ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। এর পাশে খালি মাঠ, যা লোহার প্রাচীর দিয়ে বেষ্টিত। গত কয়েক দিন ধরে মাঠটির পাশের সংযোগ সড়ক বাঁশ দিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। সেখানে ফেলা হচ্ছে ময়লা। শহরের গৃহস্থালি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, ক্লিনিক, শিল্প-কারখানা, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ইত্যাদিতে প্রতিদিন যে বর্জ্য উৎপন্ন হয়, এসব ময়লা পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সংগ্রহ করে ভ্যানে করে বাইপাস সড়কে এনে ফেলছেন।


বিজ্ঞাপন


dust1

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি দিয়ে বিদেশি নাগরিকদের পাশাপাশি পথচারী এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত যাতায়াত করে থাকে। ফলে প্রতিদিন অনেককেই ময়লার ভাগাড় পেরিয়ে কাজে যেতে হয়। সারাদিন ময়লা সংগ্রহের পর ল্যান্ডফিলে পাঠানোর সময় তৈরি হয় বিদঘুটে পরিস্থিতির। দুর্গন্ধে ভারী হয়ে উঠে চারপাশের বাতাস।

আরও পড়ুন: পরিবহনের ময়লা সড়ক-লেকে

ইব্রাহিম নামে এক পথচারী ঢাকা মেইলকে বলেন, সংযোগ সড়ক বন্ধ করে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের পাশের রাস্তার প্রবেশমুখে ময়লার স্তূপ দেখে অবাক হয়েছি। সারাদিনের ময়লা সংগ্রহের পর এখানে পাহাড় সমান ময়লা হয়। নাড়াচাড়া করার সময় আশপাশে অনেক দূর পর্যন্ত দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।


বিজ্ঞাপন


সম্মান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জিয়াউল আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, এই জায়গাটিতে কখনোই এমন ময়লা ফেলতে দেখিনি। প্রায় ৫-৬ বছর নিয়মিত যাতায়াত করছি। একদিকে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে এ কারণে বিদেশিদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

dust2

শুক্রবার (৭ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে নিয়ে আসছেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিশাল ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে স্থানটি। সিটি করপোরেশ থেকে নিয়োজিত কর্মীরা মেশিনের সাহায্যে ময়লার স্তূপ করছেন। দুপুরের পর থেকেই শুরু হয় অপসারণ প্রক্রিয়া। নির্ধারিত ট্রাকে করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আমিন বাজার ল্যান্ডফিলে নেওয়া হয় এসব ময়লা।

আরও পড়ুন: ঝুলন্ত তার যেন নগরজুড়ে জঞ্জাল

মুন্না নামে এক পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। বলেন, আমরা দুপুর পর্যন্ত ময়লা সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। পরে সিটি করপোরেশের গাড়িতে আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে নেওয়া হয় ফেলার জন্য।

এ সময় দেখা যায়, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের অনেকে স্ব স্ব কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ ময়লা থেকে রিসাইকেল করা যায় এমন বস্তু আলাদা করছেন। অনেকে নতুন ময়লা নিয়ে আসছেন। অন্যদিকে এই ময়লা অপসারণ প্রক্রিয়ার আড়ালে একটি চক্র স্থানটিকে নিরাপদ মাদক সেবনের উপযুক্ত স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে। অদূরে মাঠে গোল হয়ে মাদক সেবন করছে।

dust3

পরিচ্ছন্নতা কর্মী মো. জলিল মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার আলোকেই বেশ কিছুদিন থেকে এখানে ময়লার ফেলা হচ্ছে। আরও কিছুদিন ফেলা হবে। আগামী ১৫-২০ দিন এখানেই ময়লা ফেলতে হবে।’ তিনি জানান, আগে যেখানে তারা ময়লা ফেলতেন সেই জায়গাটি সংস্কার চলছে। এজন্য সাময়িকভাবে এখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: রাজউক অনুমোদিত আবাসিক প্রকল্প মাত্র ৩৬টি!

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ১৮ নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিল মো. জাকির হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, নতুন বাজার সংলগ্ন সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনের (এসটিএস) উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় অস্থায়ীভাবে এখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনটির নিচের অংশ ক্ষয় হয়ে গিয়েছিল। ফলে কাজ করতে গিয়ে অসুবিধা হতো।’

কাউন্সিলর বলেন, ‘সড়কে ময়লা ফেলার কারণে নাগরিকদের সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে সেটা বুঝি। এর জন্য আমরা দুঃখিত। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যেই সমাধান হয়ে যাবে।’

ডিএইচডি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর