শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

রাজউক অনুমোদিত আবাসিক প্রকল্প মাত্র ৩৬টি!

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

রাজউক অনুমোদিত আবাসিক প্রকল্প মাত্র ৩৬টি!

আলতাফ হোসেন। ছিলেন সরকারি চাকুরে। তবে সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। জীবনের অর্জিত অর্থ আর রিটায়ারমেন্ট গ্রাচ্যুইটির টাকায় নিয়েছেন একটি আবাসিক কোম্পানি থেকে সাড়ে পাঁচ কাঠার প্লট। যদিও নির্ধারিত সময়ে প্লট বুঝে পাওয়ার কথা থাকলেও গত দুই বছরেও তা হয়নি।

এতে আবাসিক কোম্পানির কাছে ধরনা দিয়েও খুব একটা সাড়া না পেয়ে বাধ্য হয়ে রাজউকের দ্বারস্থ হন। পরে নগর পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন- রাজউক কর্তৃক সেই কোম্পানিটির অনুমোদনই নেই!


বিজ্ঞাপন


আলতাফ বলেন- চাকরিকালীন সরকারি কোয়ার্টারে ছিলাম। ইচ্ছে ছিল নিজ বাসায় উঠব কোয়ার্টার থেকে। একদিকে নেই চাকরি, অন্যদিকে উঠেছি ভাড়া বাসায়। এতে খরচও বেড়েছে। ছেলে-মেয়েরা এখনও পড়াশোনা করছে। কবে প্লট বুঝে পাব- তাও জানি না।

নামে-বেনামে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক প্রকল্পের জমি আর প্লট বিক্রির কয়েক হাজার সাইনবোর্ড চোখে পড়বে। কোম্পানিগুলোর চটকদার বিজ্ঞাপনের প্রায় প্রতিটিতেই লেখা থাকে ‘রাজউক অনুমোদিত’। এছাড়াও সস্তায় রেডি প্লট, এখনই বাড়ি করার উপযোগী, এককালীন টাকায় কিনলে বড় ছাড়, সহজ কিস্তির সুবিধা, আগে কিনলে আগে পাবেন- এমন নানা সুযোগ-সুবিধার কথা। তবে ভূমি উন্নয়ন ব্যবসায়ীর দ্বারা এভাবে সাধারণ মানুষের কাছে প্লট বিক্রির নামে প্রতারণার অভিযোগও কম নেই।

Special News


বিজ্ঞাপন


এ কারণে ইতোমধ্যেই এমন প্রতারণা থেকে জনসাধারণকে বাঁচাতে সম্প্রতি অনুমোদিত বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের তালিকা প্রকাশ করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সেই তালিকা অনুযায়ী, রাজধানীতে অনুমোদিত আবাসিক প্রকল্প মাত্র ৩৬টি। এরমধ্যে বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা, ২০০৪ অনুযায়ী অনুমোদিত প্রকল্প ১০টি। আর এই আইন হওয়ার আগে ২৬টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর বাইরের সব আবাসিক প্রকল্পই অবৈধ।

এমন প্রতারণা থেকে বাঁচতে রাজউক বলছে- গ্রাহকদের প্লট কেনা বা বুকিং দেওয়ার আগেই দেখতে হবে- কোম্পানির কাছে বৈধ অনুমোদনপত্রের লে-আউট প্ল্যান বা নকশা আছে কি না। এছাড়াও মেলার স্টলেই প্রকৃত নকশা রাখার নিয়ম আছে। সেই সঙ্গে প্লট কেনা বা বুকিং দেওয়ার আগে সতর্কতার সঙ্গে নিশ্চিত হতে হবে যে- প্রকল্পটি রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাব) এলাকায় বা বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে পড়েছে কি না।

আবার যে এলাকায় প্রকল্পটি অবস্থিত, সেখানে আদৌ তাদের জমি আছে কি না তাও নিশ্চিত হতে হবে। প্রয়োজনে ক্রেতাকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে খোঁজ-খবর নিতে হবে। এছাড়া রাজউকের ওয়েবসাইটে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর তালিকা পাবেন ক্রেতারা।

এ বিষয়ে রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ মাহফুজা আক্তার ঢাকা মেইলকে বলেন, বেসরকারি আবাসিক ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা, ২০০৪ (সংশোধিত, ২০১৫) প্রণয়নের আগ পর্যন্ত আমরা কোনো কোম্পানির অনুমোদন দেইনি। তবে ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০টি আবাসিক প্রকল্পকে বিধিমালার আওতায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ২৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

প্রতারণা থেকে বাঁচতে জমি কেনার আগে রাজউকে যাচাই করার আহ্বান জানিয়ে এই নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, কেউ যদি আবাসিক প্রকল্পে প্লট-ফ্ল্যাট কিনতে চায়, তবে যেন অনুমোদনহীন আবাসিক প্রকল্প থেকে না কেনেন। আবার অনুমোদিত আবাসিক প্রকল্পে প্লট বা ফ্ল্যাট কিনতে হলেও আগে রাজউকে যোগাযোগ করা উচিৎ। সে ক্ষেত্রে জমি বা প্লট নিষ্কণ্টক কি-না বা তিনি কোনো আইনি সহযোগিতা পেতে পারেন কি-না সে বিষয়েও খোঁজ নেওয়া উচিত। আর অনুমোদিত আবাসিক প্রকল্পের যে অংশে কোম্পানির জমি কেনা থাকে না, সে জায়গা আমরা নকশার লে-আউটে দেখিয়ে দেই।

রাজউক অনুমোদিত আবাসিক প্রকল্পগুলো হলো:

১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত রাজউক কর্তৃক অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো- মিরপুরের মুক্তি আবাসিক প্রকল্প, পাইকপাড়া ক্যাপ হাসন হাউজিং প্রকল্প,   বাগবাড়ী শীশ মহল ল্যান্ড প্রজেক্ট, পল্লবী আবাসিক প্রকল্প (১ম পর্ব), পল্লবী আবাসিক প্রকল্প ২য় পর্ব (গোড়ান চটবাড়ী), মল্লিকা আবাসিক প্রকল্প,   মোহাম্মদপুরে প্রবাল হাউজিং লিমিটেড প্রকল্প, বায়তুল আমান কোঅপারেটিভ হাউজিং প্রকল্প, জনতা হাউজিং কোঅপারেটিভ সোসাইটি প্রকল্প, আরামবাগ কোঅপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি (মিরপুর ল্যান্ড প্রজেক্ট), মোহাম্মদপুর হাউজিং পিসিকালচার অ্যান্ড ফার্মিং কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, কল্যাণপুর ল্যান্ড প্রজেক্ট, মোহাম্মদপুরে সুনিবিড় গৃহ নির্মাণ সমবায় সমিতি প্রকল্প, আব্দুর রফিক হাউজিং, আদর্শ ছায়ানীর গৃহ নির্মাণ সমবায় সমিতি লিমিটেড,  ধানমন্ডিতে শিকদার রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, রায়ের বাজার প্রকল্প, তেজগাঁওয়ের মেট্রোপলিটন খৃষ্টিয়ান কোঅপারেটিভ হাউজিং প্রকল্প, বনশ্রী নিউ টাউন (বনশ্রী ও আফতাব নগর) আবাসিক প্রকল্প, মহানগর প্রকল্প, নিকেতন আবাসিক প্রকল্প, মতিঝিলের কে. এম দাস লেন আবাসিক প্রকল্প, পোস্তগোলা আবাসিক প্রকল্প, বারিধারার বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পের (১ম পর্ব), পোস্তগোলা রিভারভিউ ল্যান্ড প্রজেক্ট ও বাসাবো আবাসিক প্রকল্প।

Special Newsএছাড়া বেসরকারি আবাসিক ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা, ২০০৪ এর আওতায় ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত অনুমোদন প্রাপ্ত আবাসিক প্রকল্পগুলো হলো- গোড়ান চটবাড়ী (পল্লবী ২য় পর্ব) আবাসিক প্রকল্পের ৩৩৫.৪১ একর এবং দুই পর্যায়ে ডিসি অফিস থেকে সাফকবলা দলিলমূলে প্রত্যয়নকৃত ২৮১.৯৯ একর জহুরুল ইসলাম সিটি (বনশ্রী নিউ টাউন) আবাসিক প্রকল্পের (সংশোধিত ও সম্প্রসারিত এলাকা) ১০৮২.৪১ একর এবং দুই পর্যায়ে ডিসি অফিস থেকে সাফকবলা দলিলমূলে প্রত্যয়নকৃত ১০০৯.২৩ একর, ইউনাইটেড সিটি আবাসিক প্রকল্প (১ম পর্ব), গ্রীন মডেল টাউন আবাসিক প্রকল্প (প্রথম পর্ব), বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্প (এ থেকে এল ব্লক পর্যন্ত) প্রথম পর্ব (সংশোধিত ও সম্প্রসারিত) ও দ্বিতীয় পর্ব (এম. এন. পি এবং আই এক্সটেনশন ব্লক), জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্প, স্বর্ণালী আবাসন প্রকল্প (১ম পর্ব সংশোধিত ও বর্ধিত), সানভ্যালী আবাসিক প্রকল্প (১ম পর্ব), আশালয় আবাসিক প্রকল্প (১ম পর্ব) এবং ঢাকা ভিলেজ আবাসিক প্রকল্প।

ডিএইচডি/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর