শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পরিবহনের ময়লা সড়ক-লেকে

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৭:৫২ এএম

শেয়ার করুন:

পরিবহনের ময়লা সড়ক-লেকে
ছবি: ঢাকা মেইল

রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী নূরে জান্নাত ও শান্তা আক্তার। ক্লাস শেষে কলেজ বাস না পেয়ে নিজ গন্তব্য সাভারের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন পাবলিক বাসে। সঙ্গে যাত্রাপথ স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে কিছু মুখরোচক খাবারও নিয়েছিলেন। তবে মাঝপথে বাসে বসে খাবার খাওয়া শেষ হলে এর উচ্ছিষ্ট ফেলা নিয়ে বিপাকে পড়েন তারা।

তরুণ এই শিক্ষার্থীর মতে, পরিবহনে পানিসহ অন্যান্য খাবার ক্রয় করার যেহেতু সুযোগ থাকছে, সেহেতু এর সঠিক ব্যবস্থাপনাও থাকা প্রয়োজন। সঠিক স্থানে ময়লা ফেলার সুযোগ না থাকায় অনেকেই এসব ময়লা সরাসরি সড়কেই ফেলছেন।

নগরীর মোড়ে মোড়ে পরিবহনগুলোতে হকারদের আনাগোনা বিদ্যমান। বাদাম, আমড়া, কোলড্রিংসসহ বোতলজাত পানি বিক্রি করে থাকেন এসব হকাররা। যানজটময় এই শহরে ক্লান্তি নিয়ে জ্যামে বসে থাকা যাত্রীদের অনেকেই একটু স্বস্তি পেতে ক্রয় করেন এসব খাবার। আর খাওয়া শেষে পানির বোতল কিংবা খাবারের প্যাকেট জানালা দিয়ে সরাসরি ফেলেন সড়কে।

এদিকে, সরেজমিনে গুলশান-নতুন বাজার মোড়ে থাকা ঢাকার চাকা বাসের কাউন্টার ঘুরে দেখা যায়, লাইনে দাঁড়িয়ে যাত্রীরা টিকিট ক্রয় করছেন। সেই সঙ্গে কন্ট্রাকটার টিকিট চেক করে যাত্রী তুলছেন বাসে। ওই সময় টিকিটগুলো ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে সড়কেই।

moyla


বিজ্ঞাপন


একই চিত্র হাতিরঝিলে চলা চক্রাবার বাসগুলোতেও। এছাড়া জনপ্রিয় ঢাকা নগর পরিবহনের আদলে সদ্য চালু হওয়া মিরপুর-১২ নম্বর থেকে ঢাকেশ্বরীগামী মিরপুর সুপার লিংক, ঘাটারচর থেকে উত্তরাগামী প্রজাপতি ও পরিস্থান, গাবতলী থেকে গাজীপুরগামী বসুমতি পরিবহনের বাসেও চালু হয়েছে এমন ই-টিকেটিং পদ্ধতি। পাশাপাশি গাবতলী হয়ে ডেমরাগামী অছিম পরিবহন, রাজধানী পরিবহন ও নূরে মক্কায়ও প্রাথমিকভাবে চালু হয়েছে টিকিট পদ্ধতি। এই বাসগুলোতেও টিকিট চেক করে সড়কেই ফেলা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন সড়কে ময়লা-আবর্জনা জমছে, অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।

সচেতন মহলের ভাষ্য, এ বিষয়ে যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবহন সংশ্লিষ্টদেরও সচেতনতা প্রয়োজন। একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই পরিবহনের এসব ময়লা সড়কে পড়বে না। এ ক্ষেত্রে বাসসহ কাউন্টারগুলোয় একটি করে ময়লার ঝুড়ি রাখা যেতে পারে। এতে সড়কে কিংবা খোলা স্থানে আবর্জনা ফেলার প্রবণতা অনেকাংশেই কমে আসবে।

এ-তো গেল সড়কের কথা। এবার লেকগুলোতে আসা যাক, ২০১৬ সালের বিজয় দিবসে হাতিরঝিলে আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়াটার ট্যাক্সি চালু হয়। সে সময় চারটি ওয়াটার ট্যাক্সি নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও জনপ্রিয় হওয়ায় সময়ের ব্যবধানে এসবের সংখ্যাও বেড়েছে। নাগরিকরা স্বাচ্ছন্দ্য গ্রহণ করেছে জলযানটি। এফডিসি মোড়, পুলিশ প্লাজা, গুদারাঘাট ও রামপুরাসহ চারটি স্পট থেকে ছাড়ে এই ওয়াটার ট্যাক্সি। সড়কের যানজট এড়িয়ে সুবিধাজনক যাতায়াত হওয়ায় এর কদরও বেড়েছে। সেই সঙ্গে ঘুরতে আসাদের দর্শনার্থীরাও প্রায়সই এই সফরের আনন্দ নিয়ে থাকেন। তবে এ ক্ষেত্রেও অনেকেই যাত্রাপথে খাবারের ময়লা ফেলছেন লেকের পানিতে। এতে ঝিলের পানি দূষিত হওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশও।

পরিবারে ছোট সদস্য আইয়ানকে নিয়ে হাতিরঝিলে বেড়াতে এসেছেন কামরুল হাসান। ঢাকা মেইলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপাকালে তিনি বলেন, পরিবেশ সুন্দর রাখার দায়িত্ব আমাদের নাগরিকদেরই। কেউ কেউ খাবার খেয়ে উচ্ছিষ্ট পানিতে ফেলছেন। এমনকি পানির বোতলও ফেলছেন। কারণ, ময়লা ফেলার মতো ঝুঁড়ি নেই। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সতর্কবার্তাও নেই।

যদিও পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা মাথায় রেখে রাজধানীর হাতিরঝিলকে মাছের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তুলতে ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস বন্ধে ইতোমধ্যেই উচ্চ আদালত পরামর্শ দিয়েছে। তবে তা মানতে নারাজ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

গত বছরের ৩০ জুন হাতিরঝিল নিয়ে একটি রিটের শুনানি শেষে রায় প্রকাশ করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। ৫৫ পৃষ্ঠার ওই রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।

hatir jil

রায়ে হাতিরঝিল এবং বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সরাসরি অধীনে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠন করতে বলা হয়। সেই সঙ্গে এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে যৌথভাবে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার স্থায়ী পরামর্শক নিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য মাটির নিচে আন্তর্জাতিক মানের টয়লেট স্থাপনসহ নির্ধারিত দূরত্বে বিনামূল্যে জনসাধারণের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করার পরামর্শও দেওয়া হয় রায়ে।

এতে আরও বলা হয়, পায়ে চলার রাস্তা, বাইসাইকেল লেন এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক লেন তৈরি করতে হবে। এছাড়া লেক মাছের অভয়ারণ্য করার জন্য ক্ষতিকর সব ধরনের যান্ত্রিক যান বা ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পরামর্শও দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রকল্পটি বিজ্ঞানি স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে নামকরণ করার পরামর্শও এসেছে রায়ে।

এ ব্যাপারে যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল ঢাকা মেইলকে বলেন, বর্তমানে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে দেরিতে হলেও পরিবহনগুলোতে ই-টিকেটিং চালু করতে হচ্ছে। যাদিও আমরা দাবি জানিয়েছি পজ মেশিনের মাধ্যেমে ভাড়া আদায় করার বিষয়ে। যেখানে কাগজের কোনোপ্রকার ব্যবহার থাকবে না। যাত্রী নির্ধারিত স্টপেজ থেকে ওঠার সময় পজ মেমিন ব্যবহার করবেন, আবার নামার সময়ও ব্যবহার করবেন।

কেফায়েত শাকিল আরও বলেন, আমরা প্রায় সকলেই এটিএম কার্ড ব্যবহারে অভ্যস্ত। সব পরিবহনকে একটি কার্ডের আওতায় আনতে হবে, যা রিসার্স কারা যাবে। বর্তমানে মেট্রোরেল একই পদ্ধতিতে ভাড়া কাটার বিষয়টি বলছেন। এছাড়াও ব্যবহার করা এ কাগজ অন্য কাগজ থেকে আলাদা। যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

ডিএইচডি/আইএইচ/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর