রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আয়নাবাজি-২

জমি প্রতারণায় বেল্লালের নজির মেলা ভার, নিঃস্ব বহু মানুষ

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০২৫, ১০:৩১ পিএম

শেয়ার করুন:

bellal
জমি নিয়ে বহুমাত্রিক প্রতারণায় বেল্লাল। ছবি: সংগৃহীত

বহুমাত্রিক প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বিল্লাল হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে হলেও প্রতারণার ডালপালা বিস্তৃত দেশজুড়ে। মিথ্যা মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে তার জুড়ি মেলানো ভার। নিজের ব্যাপারে গুম হওয়ার ভুয়া অভিযোগ পর্যন্ত দায়ের করেছেন গুম কমিশনে। একটা সময় আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় নানা অপকর্ম করলেও গত বছরের ৫ আগস্টের পর নিজেকে সমন্বয়ক দাবি করতে শুরু করেন। চেষ্টা করেছেন বিএনপির ঘনিষ্ঠ হওয়ার।

বহুরূপী এই ব্যক্তির প্রতারণার শিকার সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিশেষ করে জমিজমাসংক্রান্ত তার প্রতারণার ডজন ডজন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এসব প্রতারণার মাধ্যমে দেশের নানা জায়গায় গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ। তার অন্যায়-অপকর্ম ও ভয়ংকর প্রতারণা নিয়ে ঢাকা মেইলের দুই পর্বের অনুসন্ধানের শেষ পর্ব থাকছে আজ।  


বিজ্ঞাপন


বেল্লালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব প্রবাসী জসিম

চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকার প্রবাসী জসিম উদ্দিন। হজে গিয়ে প্রতারক বেল্লালের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। বেল্লাল তাকে জমি কেনাবেচার ব্যবসার স্বপ্ন দেখান। সেই কথায় বিশ্বাস করে জসিম তাকে নিজের দুটি ফ্ল্যাট, গাড়ি ও জমানো টাকাসহ প্রায় ৫ কোটি টাকা দেন। জসিমের টাকায় লেক্সাস ডেভেলপার কোম্পানি নামে একটি কোম্পানি করা হয়। সেখানে জসিম চেয়ারম্যান ও বেল্লাল হন এমডি। জসিমের টাকায় বেল্লাল সামান্য দামে জমি কিনে বেশি দাম দেখিয়ে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেন বাড়তি কয়েক কোটি টাকা। যা পরে তিনি মামলা করলে সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে আসে।

আরও পড়ুন

মিথ্যা মামলা ও গুম নাটক, বেল্লালের আরও যত ভয়ংকর কারসাজি

এখানেই শেষ নয়, জসিমকে চট্টগ্রাম থেকে অপহরণ করে ঢাকার ডিবি অফিসে নিয়ে তার গড়া প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদ থেকে তাকে সরিয়ে সেখানে বসানো হয় গোপালগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র লিয়াকত আলীকে। পরে জসিমকে হয়রানির জন্য তিনি, তার স্ত্রী, ভাই ও চাচাতো ভাইয়ের নামে দেওয়া হয় প্রায় এক ডজন মামলা। সেই মামলাগুলো অবশ্য পরে পুলিশি তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়।


বিজ্ঞাপন


Bellal-2
বেল্লালের প্রতারণায় অতিষ্ঠ কলাপাড়াবাসী। ছবি: সংগৃহীত

মাস-দুয়েক আগে জসিম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে গতর খেটে টাকা জমিয়ে ঢাকায় কিনেছিলাম দুটি ফ্ল্যাট ও জমি। বেল্লালের কথা বিশ্বাস করে সব শেষ হয়ে গেছে। উল্টো টাকা চাইতে গিয়ে স্ত্রী-ভাইসহ আমার নামে একাধিক অপহরণ, হুমকি ও হত্যা মামলা করে দিনের পর দিন হয়রানি করেন। এখনো করছেন। এক পর্যায়ে তার ভয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হই। গত ৫ আগস্টের পর আবারও দুটি মামলা করেছেন।’ তবে সেই দুটি মামলায় (মিরপুর ও গোপালগঞ্জ) এখন জসিম জেলে বলে জানিয়েছেন তার ভাই শফিউল আলম।

জাল দলিলে জমি বিক্রি, অর্থ আত্মসাৎ

ভুক্তভোগী জসিম ২০২০ সালে আদালতে বেল্লালের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করলে সেই মামলার তদন্ত করে সিআইডি। সংস্থাটির তদন্তে উঠে আসে- বেল্লাল পটুয়াখালীর কলাপাড়ার গঙ্গামতি ও চরচাপালিস মৌজায় যে জমি কিনেছেন, তা বেশি দাম দেখিয়েছিলেন। জসিমকে ছাড়াও বেল্লাল বিভিন্ন ব্যক্তিকে জমি দেওয়ার নাম করে ১৮টি জাল দলিল তৈরি করেছেন। যার মধ্যে অবিকল নকল দলিল ১০টি। আর ২৮টি দলিলে তিনি জসিমের কাছ থেকে তিন কোটি ২৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বাকি ১৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা কীভাবে কোথায় ব্যয় করেছেন তার কোনো জবাব দিতে পারেননি। এছাড়া জসিমের কাছ থেকে নেওয়া সব টাকা বেল্লাল তার স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা করে রেখেছেন। তিনি জসিমের কোম্পানিতে এক টাকাও বিনিয়োগ করেননি।

আরও পড়ুন

গাড়িচালকের ছেলে যেভাবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী 

সরকারি পাউবি ও একোয়ারকৃত জমিকে দেখানো হয়েছে কেনা!

বেল্লাল কুয়াকাটায় জমি না কিনেও সাগর তীরে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ও সরকারি একোয়ারকৃত জমিকে কেনা জমি হিসেবে দেখিয়েছেন। যা সিআইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে সিআইডির সেই তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ছামিউম বাছির চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আসলে বেল্লাল হোসেন যেসব জমির দলিল শো করেছিলেন সেগুলো রেজিস্ট্রে অফিস থেকে নকল হিসেবে তোলা হয়েছিল। সেগুলো দেখিয়ে তিনি বিভিন্নজনের কাছে জমি বিক্রি করতেন।’

Bellal-3
তার জমি প্রতারণার ফাঁদে নিঃস্ব অনেকেই। ছবি: সংগৃহীত

জমি কিনে তারা বিপাকে

বড় শখ করে বেল্লালের কথায় কুয়াকাটায় জমি কিনেছিলেন সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সাজ্জাদ হোসেন, সিটি হাসপাতালের এমডি প্রফেসর শহীদুল বারী ও আমিন জুয়েলার্সের মালিক কাজী সিরাজুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন। তাদের জমি দেওয়ার নামে বেল্লাল হাতিয়েছেন ৫ কোটি টাকা। কিন্তু গত ১২ বছরেও তারা কেউ জমি পাননি। উল্টো জমি চাইতে গিয়ে প্রত্যেকে আট থেকে নয়টি করে মামলার শিকার হয়েছেন। যদিও প্রত্যেকটি মামলা তদন্তকারী সংস্থাগুলোর তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বেল্লালের করা মামলাগুলোতে তারা এক যুগ ধরে ভুগছেন। বেল্লাল আদালতে জবানবন্দি দিয়ে বলেছেন আর কোনোদিন মামলা করবেন না। কিন্তু সেই অঙ্গীকারের কথা ভুলে এখনো প্রতারণা ও মামলা করেই যাচ্ছেন।

গত প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ঢাকা মেইল। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। 

খোঁজ জানা গেছে, শুধু তাদের কাছেই প্রায় ৫ কোটির মতো টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বেল্লাল। তাদের কাছে যেসব জমি দেওয়ার কথা ছিল পরে দেখা গেছে, সেই জমিগুলোর বেশির ভাগই কুয়াকাটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ও হিন্দু পরিবারের।

সাবেক মেজর সাজ্জাদের স্ত্রী বলেন, ‘সে আমাদের কাছে হিন্দুর জমি জাল দলিলে বিক্রি করেছে। জমি কিনতে গিয়ে স্বামী-স্ত্রী মামলা খেয়েছি। সে আমাদের দিনের পর দিন হয়রানি করেছে, এখনো করছে।’

আরও পড়ুন

চার্জশিটে মূল আসামিদের নাম নেই, নির্দোষ ব্যক্তিরা অভিযুক্ত!

আরেক ভুক্তভোগী আমিন জুয়েলার্স ও সিটি হাসপাতালের মালিক কাজী সিরাজও বেশ অসুস্থ। ফলে তিনি বিষয়টি নিয়ে তেমন কথা বলতে পারেননি। তবে তার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা তারই হাসপাতালের এমডি প্রফেসর শহীদুল বারী বলেন, ‘আমরা সবাই তার হয়রানিতে দিশেহারা। বিগত সময়ে সে আওয়ামী লীগের পরিচয় ও সেই দলের লোকদের দিয়ে হয়রানি করেছে। এখন সেজেছে সমন্বয়ক। আবারও হয়রানি শুরু করেছে।’

তিনি জানান, শুধু কুয়াকাটায় নয়, ঢাকায়ও জমি কিনে দেওয়ার নামে বেল্লাল তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কুয়াকাটার জমিগুলো গত অক্টোবরে বুঝিয়ে দেওয়া কথা থাকলেও এখনো দেননি। উল্টো গুমের মামলা দিয়েছেন বেল্লাল।

বেল্লাল কেন প্রফেসর শহীদুল বারীদের জমি বুঝে দিচ্ছেন না জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, জমি বুঝিয়ে দিয়েছেন এবং প্রমাণ হিসেবে এই প্রতিবেদকের হোয়াটসআপে কিছু পুরনো ছবি পাঠান। সেই ছবির সূত্র ধরে আবারো যাচাই চলে। এতে দেখা যায়, তার পাঠানো ছবিগুলোর সবই পুরনো এবং একটি গ্রাফিক্স কারসাজিতে তৈরি করা। যা বেল্লালের এক সময়ের কর্মী কালাম ঢাকা মেইলকে নিশ্চিত করেন।

Bellal-4
উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করতেন ভুক্তভোগীদের। ছবি: সংগৃহীত

কুয়াকাটার কালাম ঢাকা মেইলকে বলেন, যে ছবিগুলো পাঠিয়েছে তার কোনোটারই সত্যতা নেই। মেজর সাজ্জাদ ও শহীদুল বারীর নামে যে সাইনবোর্ড দেখানো হয়েছে তার কোনো অস্বিস্ত নেই সেই এলাকায়।

বায়নার টাকা নিয়ে আরেক বিপদে কলাপাড়াবাসী

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেল্লাল কলাপাড়া এলাকার গঙ্গামতি ও চরচাপলিস মৌজায় জমি কেনার নামে সামান্য টাকায় বায়না করেই জমির দলিল বুঝে নিতেন। পরে সেই জমি আর কিনতেন না। এমনকি দলিলও ফেরত দিতেন না জমির মালিককে। মালিকরা জমি ফেরত চাইতে গেলে তাদের নামে দেওয়া হতো মিথ্যা মামলা। করা হতো অকথ্য নির্যাতন। আশপাশে থাকা সেই মালিকের জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর জমিও দখলে নিতেন বেল্লাল। আর এসব করতেন সেই এলাকার আওয়ামী লীগের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে। ভুক্তভোগীদের বিষয়ে বিচার করে দিলে চেয়ারম্যানরাও তার রোষানলে পড়তেন।

তেমনি একজন দুলাস্বার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাস্টার। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমি বিচারে সত্য রায় কেন দিলাম এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকার লোকজন দিয়ে আমাকে হয়রানি, হামলা, বাড়ি ভাঙচুর ও সর্বশেষ আমার নামে মিরপুরে হত্যা মামলা করেছে।’

আরও পড়ুন

কনস্টেবল হত্যায় দুই লাখে খুনিদের ভাড়া, অংশ নেন স্ত্রীও

তিনি জানান, তার ভাইও বেল্লালের কাছে জমি বিক্রির জন্য বায়নার টাকা নিয়েছিলেন। সেই ভাইকেও মিথ্যা মামলা দিয়েছে বেল্লাল।

বেল্লালের হাতিয়ার ছিল মামলা। কাছে কাছে জমি বিক্রি করতে গিয়ে মামলার শিকার হয়েছেন এমন আটজনের সন্ধ্যান পেয়েছে ঢাকা মেইল।  তারা প্রত্যেকে গরিব ও কৃষক। অনেকে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু সেই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন বেল্লাল। অথচ তারা জানেনই না। পরে জেনেছেন মামলার কথা।

কুয়াকাটার কলাপাড়া উপজেলার ধুলাস্বার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাস্টার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বেল্লাল মূলত জমি কিনতো এক শতাংশ, দখল করতো ৫০ শতাংশ। এভাবে কিছু ব্যক্তির কাছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় জমি বায়না করতো। পরে তার জমিসহ আশপাশের জমিগুলো সে তার বলে বিক্রি করতো। যার অধিকাংশ গ্রাহক ঢাকার। তারাও জমি কিনে প্রতারিত হয়েছেন। কেউ জমি বুঝে পাননি।’

কলাপাড়াবাসী তার জ্বালায় অতিষ্ঠ

কলাপাড়ার ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, বেল্লাল একজন প্রতারক। জমি কেনার নাম করে প্রথমে তিনি টাকা বায়না করেন। পরে জমি কিনেনও না, এমনকি কিনবেন না সেটাও বলেন না। কেউ জমির কেনার জন্য চাপ দিলে তাকে নানাভাবে হয়রানি, নির্যাতন করেন বেল্লাল। এ কাজে তিনি সেই এলাকার ও জেলার আওয়ামী লীগের নেতাদের ব্যবহার করতেন।  

Bellal-5
সবখানে আওয়ামী লীগের দাপট দেখাতেন বেল্লাল। ছবি: সংগৃহীত

তেমনি একজন ভু্ক্তভোগী ফিরোজ হাওলাদার। তিনি জানান, ২০১৭ সালের দিকে সেলিম পেদা নামে এক লোকের মাধ্যমে শাহ আলম বিশ্বাস ও তাকে মাসিক কর্মচারী হিসেবে বেল্লালের দখলবাজির প্রজেক্টে ‍যুক্ত করেন। তখন তাদের মধ্যে চুক্তি হয় মাসিক বেতন ২০ হাজার টাকা ও তার একটি ঘর অফিস বাবদ ভাড়া দেবে ৫ হাজার টাকা। তিনি এর কোনোটাই পাননি বলে জানান।  

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। প্রতারণার বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

প্রতারণার টাকায় বেল্লালের যত সম্পদ

অনুসন্ধানে প্রতারণার টাকায় বেল্লালের করা অর্থ ও সম্পদের খোঁজ মিলেছে। এই কাজে তিনি তার স্ত্রীকেও ব্যবহার করতেন। তার প্রতারণার টাকায় করা বেশির ভাগ সম্পদই তার স্ত্রী ও শ্যালিকার নামে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেল্লাল এক সময় মধুমতী মডেল টাউন নামের একটি প্রকল্পে মাত্র ১৮ হাজার টাকায় চাকরি করতেন। পরে তা বেড়ে ২৫ হাজার টাকা হয়েছিল।

বেল্লালের রাজধানীর কাঁঠালবাগান ২৩২/১ ফ্রি স্কুল স্ট্রিট রোডের সিকদার প্যারাডাইস গার্ডেনের ১ নম্বর বিল্ডিংয়ে ৯৬০ বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ফ্ল্যাট নং টু-বি এবং ফোর-বি। এছাড়া মগবাজারের ৮নং শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়কের গুলফেশা প্লাজার ১৩ তলায় ফ্ল্যাট-ডি (১ হাজার ৪২৮ বর্গফুটের) বেল্লালের। পাশাপাশি মিরপুর-১০ এর পার্বত্য সেনপাড়ার আমতলী বাজারে থাকা এংকর চান প্লাজার (বাড়ি নং-৩৫৩) নবম তলায় ( লিফটের আট বামপাশে) এইট-এ-তে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। অন্যদিকে একই এলাকার এংকর ফিরোজা গার্ডেনের নবম তলায় (বাড়ি নং-৩৫২, রোড নং-০১)  ফ্ল্যাট এইট-ডি-তে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সব মিলে তার আটটি ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে।

আরও পড়ুন

মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্বেই খুন হন ‘পেপার সানি’, নেপথ্যে রুবেল গ্রুপ

ঢাকা ছাড়াও কুষ্টিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে দোকান ও ফ্লোর কিনেছেন বেল্লাল। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি তার স্ত্রী ও শ্যালিকার নামে এসব সম্পদ কিনছেন। কুষ্টিয়ার থানাপাড়া এলাকার ২২/১ তিতুমীর সড়কে থাকা বিআর গার্ডেনের ছয় তলা বিশিষ্ট ভবনে ১১টি ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। ভবনটির প্রথম তলায় ১বি (উত্তরের অংশে), দ্বিতীয় তলায় (২এ ও ২বি), তৃতীয় তলায় (৩এ ও ৩বি), চতুর্থ তলায় (৪এ ও ৪বি), পঞ্চম তলায় (৫এ ও ৫বি) এবং ষষ্ঠ তলায় (৬এ ও ৬ বি) তার ফ্ল্যাট রয়েছে।

আরও জানা গেছে, ভবনটি কুষ্টিয়া সদরের মজমপুর মৌজায় পড়েছে। জমিটির খতিয়ান নং-১৪৮০, দাগ নং-৪১৯, হোল্ডিং নং-২২/১।  এসব সম্পত্তি ছাড়াও বেল্লাল গত দুই যুগে চট্টগ্রামের মিরসরাই পৌরসভার সুফিয়া রোডে মা জননী হাসপাতাল, ফেনীর সোনাগাজীতে সৌখিনা হ্যাচারী, মিরসরাই পৌরসভায় ১০ কাঠা জমি (বাজারের মধ্যে) কিনেছেন। এছাড়াও চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বাজারের পূর্বপাশে তার অনেক সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। তবে চতুর বেল্লাল তার কুষ্টিয়ায় ১১টি ফ্ল্যাট ছাড়াও স্ত্রী, শাশুড়ি, ভাই, বোনদের নামে বহু জমি কিনেছেন। ঢাকার মিরপুরে লেক্সাস হোম সিটি নামে একটি বহুতল বাড়ি করছেন তিনি। পাশাপাশি গুলিস্তানে তার মালিকানাধীন দোকান (লেক্সাস টেলিকম) রয়েছে। কুয়াকাটায় তার প্রায় ১৫ একর সম্পত্তি রয়েছে। আর এসবের সবটাই করেছেন প্রতারণার টাকায়। 

ভুয়া লোককে মালিক দেখিয়ে হিন্দুদের জমি আত্মসাৎ

কলাপাড়ার স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ১৯৭১ এর পরে সেই এলাকার হিন্দু পরিবারগুলোর অনেকে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। সেসব হিন্দুর পড়ে থাকা জমি ভুয়া মালিক দেখিয়ে আত্মসাৎ ও বিক্রি করেছেন বেল্লাল।

Bellal6
প্রতারণার টাকায় স্ত্রীর নামে গড়েছেন বিপুল পরিমাণ সম্পদ। ছবি: সংগৃহীত

বেল্লালের হামলা ও মামলার শিকার ভুক্তভোগী ফিরোজ হাওলাদার বলেন, ‘হিন্দুর জমি উনি একজনরে দাঁড় করাইয়া কিনছে। সেই জমি দখলের প্রেসার দিতো। ওই জমিতে তো টাকা দেতে হয় নাই। এ কাজে তাকে সহায়তা করতো মামুন নামে বেল্লালের এক শ্যালক ও আজিজ নামে এক আত্মীয়। মামুনের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। তাদের মাধ্যমেই বেল্লাল জমি ক্রয়-বিক্রয় করতো।’

ঢাকার ভুক্তভোগী অবসরপ্রাপ্ত মেজর সাজ্জাদের পরিবার জানিয়েছে, তাদের কাছে ভুয়া ব্যক্তিকে মালিক সাজিয়ে ৮০ শতাংশ জমি বিক্রি করা হয়েছে। পরে সাজ্জাদ ঠিকানা যাচাই করে দেখতে পান সেই নামে বরিশালে এক ব্যক্তি রয়েছে। কিন্তু কখনো কোনো জমি বিক্রির জন্য পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আসেননি।

কলাপাড়া দুলাশ্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাস্টার বলেন, ‘বেল্লাল ভুয়া ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে হিন্দুদের জমি দখল করেছে। বিভিন্ন ব্যক্তির জমির বায়না নামে জমি দখল করেছে। এসব বিষয়ে পুরো এলাকার লোকজন জানে।’

আরও পড়ুন

মোহাম্মদপুরবাসীর আতঙ্ক ‘কব্জি আনোয়ার’

এবিষয়ে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সেই ব্যক্তি যদি সরকারি খাস এবং সনাতন পরিবারের জমি ভুয়া দলিলে দখল করে, অবশ্যই আমরা এ বিষয়টি জেলা ভূমি অফিসের কাছে জানতে চাইব।’

এ বিষয়ে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেন বেল্লাল হোসেন। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমি কখনো কারো জমি দখল করিনি। কারও কাছে বায়না করে জমি দখল করিনি। এসব মিথ্যা ও ভুয়া কথা। আর হিন্দুদের জমি দখল করার তো প্রশ্নই উঠে না।’

এমআইকে/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর