- আগস্টের পর হঠাৎ সমন্বয়ক বেল্লাল!
- গুম পরিবারের কাছ থেকেও অর্থ আদায়
- আ.লীগ আমলে দাপট দেখিয়ে এখন সমন্বয়ক!
- তার অপহরণ মামলাগুলোর সত্যতা মেলেনি
- যাদের সঙ্গে বিরোধ তারাই মামলার আসামি
তিনি কখনো নিজেকে আবাসন ব্যবসায়ী আবার কখনো গুমের শিকার ব্যক্তি বলে দাবি করেন। কিন্তু বিগত সময়ে যাদের সঙ্গে তার বিরোধ হতো তাদের নামেই দিতেন অপহরণ মামলা। সরকারি ও হিন্দুদের জমি জাল দলিলে বিক্রি করে হাতিয়েছেন অর্ধশত কোটি টাকা। যার খপ্পরে পড়ে প্রবাসী থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমনকি স্বনামধন্য একটি হাসপাতালের এমডি, সংসদ সদস্য পর্যন্ত সর্বশান্ত হয়েছেন। তার জাল দলিলে বিক্রি করা জমির ক্রেতারা জমি বুঝে চাইলে তাদের নামে এসেছে হত্যা, অপহরণ ও গুম মামলার খড়গ। প্রতারণা যেন তার পেশা এবং মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করা যেন তার নেশা। আদতে তিনি একজন প্রতারক।
বিজ্ঞাপন
এমনই এক প্রতারকের খোঁজ পেয়েছে ঢাকা মেইল। যার প্রতারণা করোনা টেস্টের নামে জালিয়াতির অন্যতম হোতা ও বর্তমানে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে বন্দী সাহেদকেও হার মানিয়েছে। বিল্লাল হোসেন নামের সেই প্রতারকের প্রতারণা, মিথ্যা মামলা দিয়ে ব্যবসা, ভুক্তভোগীদের নির্যাতন ও হয়রানি, আদালতের পর্যবেক্ষণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনে কী কী তথ্য মিলেছে তা উঠে এসেছে আমাদের অনুসন্ধানে। আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
গত ৩১ জানুয়ারি ঢাকার মিরপুর থানায় একটি গুমের মামলা হয়। মামলাটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কারণ একজন আওয়ামী লীগপন্থী লোক কীভাবে এই মামলা করেন। আর এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র্যাবের সাবেক ডিজি ছাড়াও যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের বেশির ভাগের বাড়ি ঢাকার বাইরে। কেউ ছিলেন এই বাদীর প্রতারণার মামলার তদন্তকারী, দেখভালকারী ও কেউ কেউ ছিলেন তার ভুয়া মামলার আসামি। যাদের বাদীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। তারা গত এক যুগে তার হাতে বিভিন্নভাবে হয়রানি, অপদস্ত ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য বলছে। মামলাটি দায়েরের পর সেই বাদীর ব্যাপারে অনুসন্ধানে নামে ঢাকা মেইল। এতে উঠে এসেছে, ৫ আগস্টের আগে ও পরে তার প্রতারণার নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। যা জেনে অনেকে অবাক হবেন।
কে এই বেল্লাল হোসেন!
বিজ্ঞাপন
বেল্লালের বাড়ি চট্টগ্রামের চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মিঠানালায়। এই বেল্লাল এক সময় মধুমতি মডেল টাউন নামের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ছিলেন। প্রায় ১৪ বছর আগে জমি কেনাবেচার ব্যবসা শুরু করেন। এক সময় থানার দালাল হিসেবে কাজ করতেন বিল্লাল। এই কাজের ফাঁকে সম্পদশালী লোকজনকে টার্গেট করে প্রতারণা করতেন। পরে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন মোটা অংকের টাকা।
বেল্লাল আওয়ামী লীগের শাসনামলের পুরোটা সময় লোকজনকে নিয়ে দুর্দান্ত দাপটের সঙ্গে চলেছেন। প্রতারণার ব্যবসা চালিয়ে গেছেন। পড়াশোনা ডিগ্রি পাস হলেও দাবি করেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া।
অনুসন্ধানে মিলল যত প্রতারণা
ঢাকা মেইলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, বিগত সময়ে বেল্লালের সঙ্গে যাদের জমিজমা ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ছিল তাদের তিনি মিথ্যা অপহরণ মামলা দিয়ে হয়রানি করতেন। এসব মামলা তদন্ত করে পুলিশ ও ডিবির তদন্তে অপহরণের কোনো সত্যতা মেলেনি বলে একাধিক সংস্থা রিপোর্টও দিয়েছে। গুমের শিকার হয়েছিলেন দাবি করে বেল্লাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৯ জনকে আসামি করে যে মামলাটি করেছেন তাতে তার মামলাগুলোর তদন্তকারী, দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরাও আসামি। পাশাপাশি আসামি করা হয়েছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকেও। যাদের নুন আনতে পান্থা ফুরায়। গত ৩১ জানুয়ারি মিরপুরের মডেল থানায় বেল্লাল নামের সেই বক্তি মামলা করার পর জাতীয় গুম কমিশন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও অভিযোগ দেন। তবে বেল্লালের ব্যাপারে নানা অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত আর এগোয়নি।
জানা গেছে, মিরপুরের মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের বেশির ভাগই বিভিন্ন সময়ে তার মিথ্যা মামলা, নির্যাতন ও হামলার শিকার। এমন কয়েকজন আছেন যারা তার একাধিক মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে গত এক যুগ ধরে ভুগছেন। তবু তাদের মুক্তি মিলছে না। বেল্লালের কাছ থেকে জমি কিনে তা বুঝে পেতে গেলে আটটি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন ঢাকার ধানমন্ডিতে থাকা সিটি হাসপাতালের এমডি প্রফেসর শহীদুল বারী। তার সঙ্গে আরও যারা জমি কিনেছিলেন তাদেরও এই মামলার আসামি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রফেসর শহীদুল বারী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বেল্লাল বিগত সময়ে আমাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে ব্যাপক ভুগিয়েছে। এখন আবারও মামলা করেছে। আমরা তার বিচার চাই। প্রশাসন যেন বিষয়টি যথাযথ তদন্ত করে প্রকৃত সত্যতা উদঘাটন করে।’
ভুক্তভোগী মেজর সাজ্জাদের স্ত্রী ফারহানা বলেন, ‘আমরা তার সঙ্গে আর পারছি না। তাকে জমির টাকাও পরিশোধ করেছি। কিন্তু জমি পাচ্ছি না। বিগত সময়ে মামলার শিকার হয়ে এখন আবার মামলা করল সে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।’
এই মামলায় এমন ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়েছে যারা দিন আনে দিন খান। তেমনি একজন পটুয়াখালীর কলাপাড়ার তার সাবেক কর্মচারী কাঞ্চন গাজী, ফিরোজ হাওলাদার, কালাম ও আজাদ। এছাড়াও আরও অনেকে। কাঞ্চন গাজী বলেন, ‘আমি বেল্লালকে পটুয়াখালী থেকে মিরপুরে গুম করতে গেলাম কী করে! আমার তো একবেলা নদীতে মাছ না ধরলে সংসার চলে না।’
ফিরোজ হাওলাদার বলেন, ‘আমি বেল্লালের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। কিন্তু সাত বছরে কোনো বেতন দেয়নি। টাকা চাইতে গেলে নির্যাতন করেছে। এখন মিথ্যা মামলা দিলো।’
এই মামলায় একজন সাবেক চেয়ারম্যানকেও আসামি করা হয়েছে। যিনি বিভিন্ন সময়ে বেল্লালের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের গ্রাম্য বিচার করেছেন। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার দুলাস্বার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাস্টার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বেল্লাল বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তার কথিত প্রজেক্টের জমি কেনার জন্য জমির বায়না করতেন। কিন্তু জমি কিনতেন না। উল্টো মালিকের জমি দখল করতেন। এ বিষয়গুলো যখন আমার কাছে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ নিয়ে এলো তখন বিচার করে তাদের পক্ষে রায় দিতাম। এটাই আমার অপরাধ। এখন শুনছি সে আমার নামে মামলা করেছে।’
তদন্ত সংস্থাগুলোকে বিভ্রাটে ফেলেছেন বিল্লাল
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেল্লাল শুধু ঢাকার মিরপুর থানায় মামলা করেননি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং জাতীয় কমিশনেও অভিযোগ করেছেন। তার এমন অভিযোগ পেয়ে জাতীয় গুম কমিশন থেকে ঢাকা সিটি হাসপাতালের এমডি চিকিৎসক প্রফেসর শহীদুল বারীসহ অন্যদের ডাকা হয়েছিল। তারা সেখানে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরেছেন। ফলে ভুল ভেঙেছে সংস্থাটির। এ বিষয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট করেছেন তারা। তবে তাকে যে গুম করা হয়েছিল এর কোনো সত্যতা মেলেনি।
তদন্তকারীরাও বেল্লালের মামলার আসামি!
জানা গেছে, এ মামলায় বেল্লাল যাদের আসামি করেছেন তাদের বেশির ভাগের সঙ্গে তার কোনো না কোনো সময় বিরোধ ছিল। এমনও ব্যক্তিকে আসামি করেছেন যারা তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এমন দুজন ব্যক্তি হলেন- সিআইডির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার সাহা ও ডিবির সাইবার বিভাগের সাবেক ডিসি মীর মোদদাছছের হোসেন। মীর মোদদাছছের বলেন, ‘বেল্লাল তো একজন টাউট। আমরা তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলার রিপোর্ট দিয়েছিলাম।’
মজার বিষয় হলো, এই কর্মকর্তাকে মিরপুরে মামলা করার পর বেল্লাল নিজেই কল করে বলেন, স্যার! আমি তো আপনাকে একটা মামলায় সাক্ষী করতে গিয়ে ভুলে আসামি করে ফেলেছি।
মিরপুরের মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে কুয়াকাটার জেলে, কৃষক, বেল্লালের কাছে জমির ক্রেতা ঢাকার সিটি হাসপাতালের এমডির স্ত্রী, আমিন জুয়েলার্সের মালিকের স্ত্রী, বেল্লালের প্রতারণার শিকার প্রবাসী জসিমের স্ত্রী, তার ভাই, বেল্লালের বিভিন্ন সময়ের কর্মচারী, তার কাছে জমি বিক্রেতা ও সালিশ করে দেওয়া চেয়ারম্যানও রয়েছেন৷ এদের মধ্যে জসিম, শহীদুল বারী, মেজর সাজ্জাদ, সিরাজুলের বিরুদ্ধে এর আগেও তিনটি অপহরণ মামলা করেন। যার প্রত্যেকটি তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
ডিবি পুলিশ যা জানালো
মিরপুরের মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিরপুর বিভাগ। দেখভালের দায়িত থাকা মিরপুরের ডিবি এডিসি মিজানুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টির তদন্ত করছি। এখনো চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়নি।’
জাতীয় গুম কমিশনে দায়েরকৃত অভিযোগটি তদন্ত করেন ইন্সপেক্টর আউয়াল। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কোনো সত্যতা পাইনি। ফলে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেছি।’
গুম পরিবারের কাছ থেকেও অর্থ আদায়
বেল্লাল গুম পরিবার নামে একটি সংগঠন খুলে বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করেন। সেসব অনুষ্ঠানের খরচ বাবদ গুমের শিকার পরিবারগুলোর কাছ থেকে অর্থ নেন।
জানা গেছে, গুম পরিবারের নামে সংবাদ সম্মেলন ও অনুষ্ঠান করার নামে গুমের শিকার পরিবারগুলোর কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ৩০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন বেল্লাল।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, বেল্লাল তাদের কাছে অনুষ্ঠান, ব্যানার তৈরি, সাংবাদিক খরচার নাম করে বিভিন্ন সময়ে টাকা নিয়েছেন। স্বজনদের ফিরে পাওয়ার আশায় তারাও তাকে সরল বিশ্বাসে টাকা দিয়েছেন।
গুমের শিকার হবিগঞ্জের বকুল খানের ভাই আজমল খান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সে আমার কাছে বিভিন্ন সময়ে ব্যানার লিফলেট তৈরি ও সাংবাদিক খরচের নাম করে পাঁচশ থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। কিন্তু সে আসলে এসব তৈরি করেনি।’
গুমের শিকার পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আবুল বাশার বলেন, ‘আমরা তাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ২০০ থেকে ৫০০ টাকা দিয়েছি।’
ঢাকার মোহাম্মদপুরের রিফাত আহম্মেদ হৃদয়ের স্ত্রী তাহমিনা আকতার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খরচ বাবদ আমরা তাকে ২০০ বা তারও বেশি করে টাকা দিয়েছি।’
গুম পরিবার নামে সংগঠন খুলে প্রতারণা
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর গুমের শিকার পরিবারগুলোর সদস্যরা প্রথমে রাজধানীর কচুক্ষেত এবং পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ছুটে যান। তখন সেখানে যান প্রতারক বেল্লাল ও তার সহকর্মী বাবুল। সেখানে তাদের নাম, এনআইডি, বাড়ির ঠিকানা, গুমের শিকার স্বজনদের নাম নিয়ে একটি সংগঠন খুলে বসেন বেল্লাল। ‘গুম পরিবার’ নামে সেই সংগঠনটির একাই সমন্বয়ক আর কোনো ব্যক্তিকে কোনো পদে রাখেননি। এ নিয়ে সন্দেহ জাগে সংগঠনটির কথিত সদস্যদের কয়েকজনের।
জানা গেছে, যে কয়টি পরিবারকে নিয়ে বেল্লাল ‘গুম পরিবার’ নামে সংগঠন করেছেন তাদের প্রত্যেকের কাছে তিনি দাবি করেছেন- এক সময় তাকে গুম করা হয়েছিল। তাদের কাছে এটাও দাবি করেছেন, তার এই সংগঠনটির সদস্য ৭০ জন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র ২৪ জনের তালিকা ধরে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যান। সেগুলোকে সংগঠনের সদস্য হিসেবে দেখান।
এছাড়াও তিনি গুমের শিকার পরিবারগুলোকে সম্প্রতি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করার জন্য প্রলুব্ধ করছেন। তাদের কাছে দাবি করছেন, সরকার ও বিদেশি সংস্থাগুলো তাদের টাকা দেবেন। পরিবারগুলোকে সরকারি চাকরি নিয়ে দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছেন। এতে অনেকে রাজি হয়েছেন। কেউ কেউ আবার চটেছেন।
আওয়ামী লীগের দোসর বেল্লাল এখন কথিত সমন্বয়ক!
বেল্লাল আওয়ামী লীগের আমলে সাবেক মোশাররফ হোসেন, গোপালগঞ্জের সাবেক মেয়র লিয়াকত আলী, ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, ডিবির হারুন অর রশীদের ছবি তুলে তা ফেসবুকে স্টাটাস দিয়েছেন। তবে সেগুলো সম্প্রতি ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলেছেন তিনি। তবে ঢাকা মেইলের কাছে তার সেই স্ট্যাটাসগুলোর স্ক্রিনশর্ট রয়েছে।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে যে বিল্লাল আওয়ামী লীগের পরিচয়ে চলেছেন, নেতাদের ব্যবহার করে ও প্রশাসনকে দিয়ে নানা কাজ হাসিল করেছেন, গোপালগঞ্জের পৌর মেয়রকে তার ব্যবসায়িক পার্টনার বানিয়েছিলেন, সেই বিল্লাল এখন জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক বনে গেছেন। তার হঠাৎ সমন্বয়ক বনে যাওয়ার খবরে কলাপাড়া এলাকার লোকজন অবাক হয়েছেন। তারা বলছেন, বিল্লাল তো আওয়ামী লীগ করে। সেই কথা সকলে জানে। এরপরও সে সমন্বয়ক হয় কী করে!
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা বেল্লাল নিজেই তার দায়েরকৃত একটি মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন। ২০১৬ সালে চিকিৎসক বারীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে একটি মামলা করেন। সেই মামলার এজাহারের মাঝে বেল্লাল নিজের পরিচয় হিসেবে লেক্সাস কোম্পানির চেয়ারম্যানের পাশাপাশি তিনি বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সদস্য বলে উল্লেখ করেন। সেই মামলার কপিটি ঢাকা মেইলের হাতে এসেছে।
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ার কয়েকটি গ্রামের ভুক্তভোগী ও গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, এলাকায় গিয়ে বিল্লাল আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে নানা জায়গায় যেতেন। দখলেও তাদের সহযোগিতা নিতেন। তিনি এলাকায় জমি দখলকালে বলতেন, গোপালগঞ্জের মেয়র আমার সঙ্গে আছে, কিসের ভয়। কথায় কথায় আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতার সঙ্গে তার পরিচয় ও সখ্যতার কথা বলতেন। এলাকাবাসী নিশ্চিত করেছেন বিল্লাল আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন বলে পরিচয় দিতেন। নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে জুলুম নির্যাতন ও হয়রানি করতেন।
বিভিন্ন সময় তার মিথ্যা মামলার শিকার ভুক্তভোগীরা বলছেন, বেল্লাল গত দেড় যুগে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে মিথ্যা মামলা করেছেন। সংগঠনটির নেতাকর্মীদের দিয়ে ভুক্তভোগীদের ঘর পুড়িয়ে দেওয়া, হামলা, নির্যাতন, এমনকি মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। হঠাৎ করে বেল্লাল নিজেকে বিএনপি দাবি করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সাথে ছবি তুলছেন। এসব ছবি তাদের নজরে এসেছে। তারা বলছেন, বেল্লাল একজন বড় প্রতারক। সে জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক হয় কী করে! বেল্লালের এমন প্রতারণার বিষয়টি নজরে নিয়ে তাকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবিও জানিয়েছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বেল্লাল যা বললেন
অভিযোগের বিষয়ে বেল্লালের সঙ্গে ঢাকা মেইলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, আমি বিগত সময়ে গুমের শিকার হয়েছিলাম। কিন্তু সেই সময়ে মামলা করেও কোনো বিচার পাইনি।
আপনি যাদের আসামি করেছেন তারা তো বিভিন্ন সময়ে আপনার কাছে জমি কিনেছিলেন, কেউ জমির মালিক ও কেউ আপনার কর্মচারী, তাহলে তাদের মামলার আসামি করলেন কেন? এমন প্রশ্নে তার জবাব- তারাই তো আমাকে গুম করেছিল।
বিগত সময়ে যারা গুমের শিকার হয়েছিলেন তাদের বেশির ভাগ পরিবার স্বজনরা নিখোঁজ হয়েছেন দাবি করে থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। কিন্তু বেল্লাল সেই সময়ে আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে দিব্যি মামলা করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি সন্তোষজনক কোনো জবাব দিতে পারেননি।
এমআইকে/জেবি

