সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বিএনপি নেতা সাধন হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কী পাওয়া গেল?

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২৫, ০৭:৪৯ পিএম

শেয়ার করুন:

Sadhon
প্রকাশ্যে গুলিতে খুন করা হয় সাধনকে। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বাড্ডা এলাকার গুদারাঘাটের পাশে বিএনপি নেতা কামরুল আহসান সাধনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত দুই যুবকের একজনের চেহারা শনাক্ত করা গেছে। তবে তার নাম ও পরিচয় বের করা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি এ ঘটনা কারা ঘটিয়েছে, কেন ঘটিয়েছে এ ব্যাপারটিও অন্ধকারেই রয়েছে। ফলে ক্লুলেস হত্যা ধরেই মামলাটির তদন্ত চলছে।

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে ‍পরিবার, এলাকাবাসী ও তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।


বিজ্ঞাপন


গত ২৬ মে মেরুল বাড্ডার গুদারাঘাটের চার নম্বর সড়কে রাত দশটার পর এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। এর প্রায় ২০ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি নেই।

তদন্তে যা পাচ্ছে ‍পুলিশ

জানা গেছে, শুরু থেকে এ হত্যাকাণ্ডটির নেপথ্যে ইন্টারনেট ব্যবসার দ্বন্দ্ব থাকতে পারে বলে ধারণা করে আসছিল পুলিশ। যদিও সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজনও কাউকে আটক বা গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

এছাড়াও এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পুলিশ বলে আসছিল আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডটি টার্গেটেড কিলিং। কারণ হত্যার ধরন সেই কথাই বলে। সাধনকে হত্যার আগে সেই এলাকা ভালো করেই রেকি করেছে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া যুবকরা। কারণ এত সহজে জনবহুল একটি রাস্তা দিয়ে কিলিং মিশন শেষ করে বের হওয়াটা সাধারণ ব্যাপার নয় বলে মনে করছে পুলিশ।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ ঘটনায় শুধু একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেছে। তাতে দুজন যুবকের মধ্যে একজনের চেহারা শনাক্ত করা গেছে। কিন্তু তার পরিচয় এখনো শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। কারণ সেই প্রযুক্তি এখনো বাংলাদেশে আসেনি।

তারা আরও জানিয়েছেন, সেই যুবক কোন গলি দিয়ে এসেছেন তা খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। তবে তারা কিলিং মিশন শেষ করে প্রগতি সরনির প্রধান সড়কের দিকে চলে গেছেন। কিন্তু এরপর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই কাজটির জন্য পুলিশ কয়েকশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই করেছে। কিন্তু মাত্র একটি সিসি ক্যামেরায় তাদের হেঁটে যাওয়া, কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া এবং পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ধরা পড়েছে। 

আরও পড়ুন

বাড্ডায় বিএনপি নেতার হত্যা ‘টার্গেটেড কিলিং’, নেপথ্যে যা জানা গেল

মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্বেই খুন হন ‘পেপার সানি’, নেপথ্যে রুবেল গ্রুপ

থানা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সাধনের সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল কি না এ নিয়ে পরিবারটি তেমন কিছু বলছে না। এমনকি তার সঙ্গে আগে কারও কোনো ঝামেলা ছিল কি না সে বিষয়েও তারা তথ্য দিতে পারেনি। পাশাপাশি তার সঙ্গে এলাকাবাসীরও কারও কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না।

পুলিশ ধারণা করছে, ঢাকার বাইরে থেকে কিলার গ্রুপের ভাড়াটে সদস্যরা এসে মিশন শেষ করে আবার চলে গেছে।  

Sadhon2
সাধনের হত্যার খবর শুনে ছুটে আসেন বিএনপি নেতারা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সেই ঘটনায় সিসি ফুটেজ দেখে আমরা দুজনকে শনাক্ত করেছিলাম। কিন্তু এখনো তাদের খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে ডিবিসহ পুলিশ কাজ করছে।’

সেদিন যা ঘটেছিল

পুলিশ, নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় গুলশান বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সাধন কয়েকজন বিএনপি নেতার সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ দুই যুবক পেছন দিক থেকে এসে সাধনকে গুলি করে। গুলি সাধনের ঘাড়ে, কাঁধে, পিঠে, বুকের নিচে ও পেটে লাগে। এতে তিনি গুরুতর রক্তাক্ত জখম হন। পরে কিলাররা ফাঁকা গুলি করতে করতে এলাকা ত্যাগ করে। তবে ভয়ে ওই সময় কেউ বাধা দিতে বা তাদের আটক করারও সাহস পায়নি।

আরও পড়ুন

আ.লীগের নতুন ছক, দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা!

চার্জশিটে মূল আসামিদের নাম নেই, নির্দোষ ব্যক্তিরা অভিযুক্ত!

এ ঘটনার পর সাধনকে উদ্ধার করে প্রথমে মহাখালীর বক্ষব্যাধিতে পরে  জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পর বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন তার স্ত্রী দিলরুবা আক্তার। তবে মামলায় স্পষ্ট করে কারও নাম বা আসামি কারা তাও উল্লেখ করা হয়নি।

জানা গেছে, এ ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে ডিএমপিসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ছুটে যান। তারা এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। এলাকাবাসী তাদের জানায়, দুই শ্যুটারকে তারা চিনতে পারেননি। কারণ তারা এলাকার নন। তবে এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ইন্টারনেট ব্যবসার দ্বন্দ্ব থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। কারণ নিহত বিএনপি নেতা একজন ইন্টারনেট ব্যবসায়ী ছিলেন।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, কামরুল ইসলাম সাধনের বিয়ের বয়স প্রায় ২৫ বছর। তার কোনো সন্তান নেই। এমনকি স্ত্রীর সঙ্গেও তার সম্পর্ক ভালো। ফলে বিষয়টি পারিবারিক সমস্যা বলেও মনে করছেন না তারা।

এমআইকে/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর