রাজধানীর বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় বিএনপি নেতা কামরুল আহসান সাধনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সেই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এখনো কাউকে আটক বা গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডটিকে পুলিশ ‘টার্গেটেড কিলিং’ বলছে।
এছাড়াও এর নেপথ্যে ইন্টারনেট ব্যবসার দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
এ ঘটনায় তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে থানা পুলিশ তেমন কোনো মুখ খুলছে না।
রোববার রাত ১০টার পরপরই এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। সেই সময় বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন নিহত সাধন ও আরও কয়েকজন বিএনপির নেতা। তারা আড্ডায় ছিলেন। হঠাৎ দুই যুবক পেছন দিক থেকে এসে সাধনকে গুলি করেন। ওই রাস্তায় অনেক লোকজনও ছিল। সবার সামনে এসে প্রকাশ্যে কামরুল আহসান সাধনকে গুলি করে দুই যুবকের একজন। ছোড়া গুলি সাধনের ঘাড়ে, কাঁধে, পিঠে, বুকের নিচে, পেটে লাগে। তিনি গুরুতর রক্তাক্ত জখম হন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে কিলাররা ফাঁকা গুলি করতে করতে এলাকা ত্যাগ করেন। তবে ভয়ে ওই সময় কেউ বাধা দিতে বা তাদেরকে আটক করারও সাহস পায়নি। সাধন গুলশান বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।
এ ঘটনার পর সাধনকে উদ্ধার করে প্রথমে মহাখালীর বক্ষব্যাধিতে পরে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার সোমবার বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। নিহতের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তবে মামলায় স্পষ্ট করে কারও নাম উল্লেখ ও আসামি কারা তাও উল্লেখ করা হয়নি।
বিজ্ঞাপন
বাড্ডা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম শুধু জানিয়েছেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। তবে এঘটনায় এখনো কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা যায়নি।
এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে ডিএমপিসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ছুটে গিয়েছিলেন। তারা এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেছেন। এলাকাবাসী তাদের জানিয়েছেন, দুই শুটারকে তারা চিনতে পারেননি। কারণ তারা এলাকার নন। তবে এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ইন্টারনেট ব্যবসার দ্বন্দ্ব থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। কারণ নিহত বিএনপি নেতা একজন ইন্টারনেট ব্যবসায়ী ছিলেন।
এই কারণ ছাড়াও সাধন সেই এলাকার বিএনপি নেতা থাকায় তার সঙ্গে দলের কোনো নেতার বিরোধ ছিল কি না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
তবে এই প্রথম নয়, চলতি বছরের শুরুতে গত ২০ মার্চ পুলিশ প্লাজার সামনে নাম সুমন মিয়া ওরফে টেলি সুমন (৩৩) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যার মতো ঘটনা ঘটে। সুমন বাসাবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা করতেন। তবে সেটিও ঘটে রাতের আঁধারে। সেই ঘটনায় পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে এলাকার ইন্টারনেট ব্যবসার দ্বন্দ্ব। ফলে একই মোটিভ ও সময়ের কারণে এই হত্যাকাণ্ডটিকেও পুলিশ একই কারণ মনে করছে।
এ ঘটনার পর গুলশান ও বাড্ডা এলাকার অলিগলিতে পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। এই হত্যাকাণ্ডে ডিএমপির গোয়েন্দা সদস্য, ডিবি, সিআইডি, পিবিআই ছাড়াও সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। তারা নিজ নিজ তথ্য সংগ্রহ করছেন।
মাঠে কাজ করা এমন একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য নাম প্রকাশ না করা শর্তে ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন, এটি ইন্টারনেট ব্যবসার দ্বন্দ্বে হয়েছে বলে তাদেরও ধারণা। এ ঘটনার পর সেই এলাকার ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের তালিকা ধরে তাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর চলছে। তাদের সঙ্গে নিহত সাধনের কোনো দ্বন্দ্ব বা বিরোধ ছিল কি না তা তারা খতিয়ে দেখছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কামরুল ইসলাম সাধনের বিয়ের বয়স প্রায় ২৫ বছর। তার কোনো সন্তান নেই। এমনকি স্ত্রীর সঙ্গেও তার সম্পর্ক ভালো। ফলে বিষয়টি পারিবারিক সমস্যা তাও মনে করছেন না তারা।
তারা আরও জানিয়েছেন, সাধনের সঙ্গে এলাকায় কারও কোনো প্রকার দ্বন্দ্ব নেই। তিনি নিরিবিলি ব্যবসা করেন। বিগত কয়েক বছর থেকে এই ব্যবসা চালান। তবে সম্প্রতি সরকার পতনের পর তার ব্যবসা সম্প্রসার করছিলেন। এ নিয়ে হয়তো প্রতিপক্ষদের সঙ্গে বিরোধ থাকতে পারে।
সোমবার বিকেলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেই রাস্তায় একটা চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। গতকাল রাতের ঘটনার পর এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
এ বিষয়ে ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা বিষয়টিকে টার্গেটডে কিলিংই মনে করছি। সাধন একজন ইন্টারনেট ব্যবসায়ী হওয়ায় তার সঙ্গে কারও এই ব্যবসা নিয়েও দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। যদিও এখনো তার সঙ্গে কারও বিরোধ বা দ্বন্দ্ব ছিল তা বিষয়টি জানা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় যারা কিলিংয়ে এসেছিল সেই দুই শুটার এলাকার নন এটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তবে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতারের পর জানা যাবে, আসলে এটি ইন্টারনেট ব্যবসার দ্বন্দ্ব নাকি অন্য কোনো কারণে সাধনকে হত্যা করা হয়েছে।
সোমবার দায়েরকৃত মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আমার স্বামী পেশায় একজন ইন্টারনেট ব্যবসায়ী এবং গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। রোববার সন্ধ্যার পর আমার স্বামী বাসা থেকে বের হয়ে বাড্ডার মধ্য বাড্ডা গুদারাঘাট এলাকার ৪ নং রোডের জাফর হাওলাদারের মুদীর দোকানের সামনে পাঁকা রাস্তার ওপরে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে ছিলেন। ওই সময় ১০টা ২ মিনিটে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাদের হাতে থাকা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এসময় তারা তার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি গুলি করেন। তাদের ছোড়া গুলি তার স্বামীর ঘাড়ে, কাঁধে, পিঠে, বুকের নিচে, পেটে লেগে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। এরপর স্বামী রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। পরে হত্যাকারীরা ফাঁকা গুলি করতে করতে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে থাকা কয়েক ব্যক্তি তারা প্রথমে তার স্বামীকে অটোরিকশা যোগে চিকিৎসার জন্য বক্ষব্যধি হাসপাতাল মহাখালীতে নিয়ে যান। সেখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে। পরে তার স্বামীকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার শারীরিক পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।
এমআইকে/ইএ

