এবারের ঈদে লম্বা ছুটির কারণে ঢাকায় ফেরার পথে জীবিকার টানে এখনো মানুষের চাপ বাড়েনি। বেসরকারি চাকরিজীবী কিংবা একান্ত প্রয়োজনে যাদের ফিরতে হচ্ছে তারা বাস, ট্রেন ও লঞ্চে করে ঢাকায় আসছেন। দক্ষিণাঞ্চল থেকে নৌপথে আসা মানুষজন ঈদের দুদিন পরও স্বস্তি নিয়ে ফিরছেন। লম্বা ছুটির প্রভাবে এখনো বরিশালসহ বিভিন্ন রুটের বিলাসবহুল লঞ্চগুলো অনেকটা ফাঁকা।
মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে সদরঘাটে নোঙর করা লঞ্চগুলোতে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
যদিও ঘাটের বাইরে বের হয়ে অন্যান্য সময়ের মতো গণপরিবহন সংকট, বাড়তি ভাড়ার চাপে পকেট ফাঁকা হচ্ছে যাত্রীদের। বিশেষ করে সিএনজি, ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ ভাড়া হাঁকাচ্ছেন। এতে করে ঈদযাত্রার খরচা মিটিয়ে ঢাকায় ফেরা মানুষদের বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে।
ঢাকা-বরিশাল রুটের মানামী লঞ্চের সুপারভাইজার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এখনো ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরা মানুষের চাপ শুরু হয়নি। বুধবার থেকে যাত্রী বাড়বে। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার অনেক বেশি চাপ হবে।’
এবারের ঈদে গত ৫ জুন থেকে টানা ১০ দিনের ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। ১৪ তারিখ শেষ হচ্ছে ছুটি। ১৫ জুন থেকে অফিস করবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
আরও পড়ুন
ঈদে সাধারণত বেসরকারি চাকরিজীবীরাও ছুটি অনেক কম পান। ঈদের তিন দিনের বাইরে অনেকে ছুটিও পেতেন না। তবে এবার বেশিরভাগ চাকরিজীবী পাঁচ দিনের ছুটি ভোগ করার সুযোগ পেয়েছেন। পাঁচ দিন যারা পেয়েছেন তাদের ছুটি শেষ হয়েছে সোমবার (৯ জুন)। আজ মঙ্গলবার থেকে তারা অফিস করছেন।

এদিকে মঙ্গলবার সকালে সদরঘাটে যাত্রীদের সঙ্গে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের মধ্যে ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডার ঘটনাও দেখা গেছে।
সদরঘাট থেকে মিরপুর-১০ নম্বর যাওয়ার জন্য সিএনজির জন্য এক নম্বর ঘাটের বাইরে অপেক্ষায় থাকা বেসরকারি চাকরিজীবী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, অন্তত দশটা সিএনজি অটোরিকশার ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বললাম। এক হাজার টাকার নিচে কেউ ভাড়া চাইল না। এটা যেন মগের মুল্লুক। স্বাভাবিক সময় তো সর্বোচ্চ ৪০০ টাকায় যাওয়া যায়।'
দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া দিয়ে যাবেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সঙ্গে স্ত্রী, ছোট বাচ্চা আছে। বাড়ি থেকে বাবা-মা খাবারসহ বাড়তি কিছু জিনিসপত্রও দিয়েছেন। এসব নিয়ে বাসে যাওয়া তো কঠিন। একটু কমে সিএনজি পেলে সেটাই যাবো। এছাড়া উপায় নেই।'
ঘাটের সামনে দেখা গেছে অনেক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক যাত্রীদের ডাকছেন। কিন্তু কাছে যেতেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভাড়ার কথা শুনে মন খারাপ করে ফিরে আসতে দেখা গেছে অনেককে।
এদিকে প্রাইভেটকারেও সদরঘাট থেকে যাত্রীদের গন্তব্যে যাওয়ার সুযোগ আছে। অনেকে গাড়ি নিয়ে যাত্রী ডাকছেন। বিশেষ করে রাইডশেয়ারিং করা গাড়ি চালকরা অ্যাপস বন্ধ রেখে 'খ্যাপে' যাত্রী টানছেন। তবে অ্যাপের চেয়ে এসব চালক যাত্রীদের কাছে ভাড়া চাইছেন। ফলে খুব একটা সাড়া পাচ্ছেন না তারা।
সদরঘাট থেকে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানে যেতে একজনকে প্রাইভেটকার চালকের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। চালক এই যাত্রীর কাছে ভাড়া চান ১২শ টাকা। ভাড়া শুনে চটে যান যাত্রী। উল্টো চালককে বলেন, 'অ্যাপসে ভাড়া দেখালো ৬৯০টাকা। আপনি চাইতেছেন ১২শ টাকা। এত লোভ ভালো না। বসে থাকেন দেখেন কার টাকা আছে মে যাইবে!'
সিএনজি-প্রাইভেটকারের যখন এমন অবস্থা তখন বসে নেই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা। পারলে গন্তব্যে যেতে সিএনজিওয়ালদের মতো ভাড়া চাইছেন তারাও।

বরিশাল থেকে স্বস্তিতে ঢাকায় ফিরে সদরঘাট থেকে যাত্রাবাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাটারি রিকশার চালকের সঙ্গে দরদাম করতে দেখা যায় এক দম্পতিকে। স্বাভাবিক সময় এইটুকু দূরত্বে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। কিন্তু সাতসকালে এই দম্পতির কাছে ভাড়া চাওয়া হয় ২৫০ টাকা।
আরও পড়ুন
এত ভাড়া চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে রিকশাচালক বলেন, 'বেশি দূরের ক্ষ্যাপ নিতে ভোর রাতে ঘাটে আসছি। ঘাটের লোকজনরে ১০-২০ টাকা খাওয়ানো লাগে। একটু বেশি ভাড়া না পাইলে কেমনে চলমু?'
অবশ্য সাতসকালে ঘাটের বাইরে ট্রাফিক পুলিশকে খুব একটা সক্রিয় দেখা যায়নি। যে কারণে ঘাটের সামনের সবদিকের সড়কে তীব্র যানজট দেখা গেছে। স্বস্তিতে লঞ্চে আসা মানুষদের অস্বস্তিতে ফেলেছে যানজট।
সদরঘাট থেকে যানজটের কারণে কমপক্ষে আধঘন্টা সময় লেগেছে ঢাকায় ফেরা মানুষের।
বিইউ/জেবি