- ৫৫ আসনের বিপরীতে আবেদন ৩৮৯টি
- আইনের টাইপিং ভুলে থমকে আছে প্রক্রিয়া
- ভৌগলিক অবস্থান, আয়তন ও জনশুমারি গুরুত্ব পাবে
- সংশোধিত আইন পেলে তিন মাসেই শেষ হবে কাজ
ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার লক্ষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সীমানা পুনর্নির্ধারণের উদ্যোগ নিলেও আইন সংশোধনের জটিলতায় আটকে আছে এই প্রক্রিয়া। এর মধ্যেই সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নির্বাচনে কমিশনে (ইসি) জমা পড়েছে রেকর্ডসংখ্যক আবেদন। সংশোধিত আইন হাতে পেলে তিন মাসের মধ্যে ভৌগলিক অবস্থান, আয়তন ও জনশুমারিকে গুরুত্ব দিয়ে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শেষ করতে চায় সাংবিধানিক এ সংস্থাটি।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশের ৫৫টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে কমিশনের কাছে এখন পর্যন্ত ৩৮৯টি আবেদন জমা পড়েছে। এসব আবেদনের বেশির ভাগই ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে সীমানা পুনর্নির্ধারণ প্রক্রিয়া এখনো শুরু করা সম্ভব হয়নি। কারণ, বিদ্যমান সীমানা নির্ধারণ আইন সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। ইতোমধ্যে সংশোধনের জন্য প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সংশোধিত আইন হাতে পাওয়ার পরই এ সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সীমানা নির্ধারণের আইনটি আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করেছি। একটি ছাপার ভুলের জন্য আমাদের হুবহু ঠিক রেখে নির্বাচন করতে হবে। এই ছাপার ভুলটা সংশোধনের জন্য আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তবে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত আমরা পাইনি, পেলে সীমানা নির্ধারণের কাজটি শেষ করতে পারব। এক্ষেত্রে তিন মাস লাগবে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শেষ করতে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ ঢাকা মেইলকে জানান, সীমানা নির্ধারণ আইনটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হয়েছে। সংশোধিত আইন হাতে এলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কার্যক্রম শুরু করে তা সম্পন্ন করা হবে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, এখন পর্যন্ত ৫৫টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে প্রায় ৩৮৯টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে প্রতিটি আসনের বিপরীতে একাধিক আবেদনও পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন
কোন অঞ্চলের আসনের সবচেয়ে বেশি আবেদন এসেছে-এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত সচিব জানান, এখনো চূড়ান্ত তালিকা করা হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে যেসব অঞ্চলের নাম মনে পড়ছে তার মধ্যে রয়েছে ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, বরগুনা, সাতক্ষীরা ও ফরিদপুর। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেই সীমানা পরিবর্তনের জন্য আবেদন এসেছে বলে জানান তিনি।
সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, দেশের জনসাধারণের শহরমুখী প্রবণতা রয়েছে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে করলে শহরের দিকে আসন সংখ্যা বাড়বে, অন্য এলাকায় কমে যাবে। সেটা সঠিক রিপ্রেজেন্টেশন হবে না বলে কমিশন মনে করে।
সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১- পর্যালোচনার বিষয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, বর্তমানে যে আইনটি রয়েছে, এর দুটো বিষয় সমস্যা সৃষ্টি করছে। মূলত জনসংখ্যাকে গুরুত্ব দিয়ে এ সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি করা হয়। আমরা করতে চাচ্ছি-ভৌগলিক আয়তন, অবস্থান, সর্বশেষ জনশুমারি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণ করার।'
নির্বাচন কমিশনার বলেন, একটি উপধারায় করণিক (টাইপিং মিসটেক) ভুল রয়েছে। ফলে নির্বাচন কমিশন কিছুই করতে পারবে না। আসলে সেটা হওয়ার কথা নয়। আমরা সমস্যাটি তুলে ধরে সংশোধনের প্রস্তাব পাঠিয়েছি।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন ব্যাপক সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে। এই সময়ে প্রায় ১৩০টি আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়, যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সীমানা পুনর্নির্ধারণের উদাহরণ। এই পরিবর্তনগুলো মূলত সর্বশেষ জনশুমারির তথ্য এবং প্রশাসনিক ইউনিটের অখণ্ডতা বিবেচনায় করে করা হয়েছিল।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৫০টি আসনের সীমানায় ছোটখাটো পরিবর্তন করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশন ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৫টির সীমানায় পরিবর্তন করা হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ২০২৩ সালের ১ জুন ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১০টির সীমানায় পরিবর্তন এনেছিল। এই পরিবর্তনগুলো মূলত সর্বশেষ জনশুমারির তথ্য এবং প্রশাসনিক ইউনিটের অখণ্ডতা বিবেচনায় করে করা হয়েছিল।
এদিকে বর্তমানে নির্বাচন কমিশন সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেছে। এই প্রস্তাবে ভৌগোলিক অবস্থান, সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা এবং ভোটার সংখ্যার সামঞ্জস্য রাখার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এমএইচএইচ/জেবি