শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

রমজানের আবহ বদলে দেয় জীবন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২ মার্চ ২০২৫, ০৬:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
রমজানে পরিবর্তন আসে মানুষের জীবনে। ছবি: সংগৃহীত

বছর ঘুরে ফিরে এসেছে মাহে রমজান। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবনেও রমজানকে কেন্দ্র করে নানা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এই যেমন রমজানকে ঘিরে এবছরও সরকারি, আধা সরকারি থেকে শুরু করে সব অফিস-আদালতের কর্মঘণ্টায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সময়সূচিতেও এসেছে পরিবর্তন।

অন্যদিকে ব্যক্তিজীবনে সাহরি ও ইফতারকে কেন্দ্র করে মানুষের খাদ্যাভাসেও এসেছে পরিবর্তন। কর্মজীবীরা চেষ্টা করেন হাতের কাজ দ্রুত শেষ করে ঘরে ফিরে পরিবারের সবার সঙ্গে ইফতার করতে। ফলে ঘরে ঘরে দুপুর গড়াতে বাড়ে রান্নার ব্যস্ততা। অন্যদিকে আসরের নামাজের পরপরই নানা ধরনের বাহারি ইফতারে ভরে উঠে রাজধানীসহ অন্যান্য জায়গার খাবারের দোকানগুলো। যদিও দুপুর পর্যন্ত বেশির ভাগ হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকে।


বিজ্ঞাপন


রহমত, বরকত এবং মাগফেরাতের মাস রমজানে মুসলমানদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায়ও অনেক পরিবর্তন আসে। দিনভর রোজা, সন্ধ্যায় ইফতার সেরে তারাবিতে অংশ নিতে রোজাদাররা ছুটে যান মসজিদে। শেষ রাতে আবারও সাহরি-ফজরের নামাজের প্রস্তুতি। সবমিলিয়ে জীবনের রুটিন পাল্টে যায় এই মাসে। বাইরে চলাফেরাতেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য লক্ষ্য করা যায়। রমজানের অপরাধের মাত্রাও কমে আসে।

আরও পড়ুন

ট্রেন যাত্রায় ‘সাহরি বাণিজ্য’, নিম্নবিত্তের সঙ্গী কলা-রুটি!

গতকাল শনিবার (১ মার্চ) সন্ধ্যার আকাশে পবিত্র মাহে রমজানের চাঁদ ওঠার পর থেকেই সবার মাঝে ভিন্ন আমেজ তৈরি হয়েছে। প্রথম তারাবিতে মসজিদগুলোতে লক্ষ্য করা গেছে মুসল্লিদের ভিড়। তারাবি ছাড়াও অন্য ওয়াক্তের নামাজেও ভিড় চোখে পড়েছে। এমনকি ফজরের নামাজের জামাতে সারা বছর মুসল্লির সংখ্যা অনেক কম হলেও রমজানে ফজরের জামাতে ভিড় লাগে মুসল্লিদের।

পরিবর্তন এসেছে অফিস-আদালতের কার্যক্রমে


বিজ্ঞাপন


রমজান মাসজুড়ে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অফিস চলবে সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। জোহরের নামাজের জন্য বেলা সোয়া একটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বিরতি।

Roza22
প্রথম তারাবিতে মসজিদে মুসল্লিদের ভিড়। ছবি: ঢাকা মেইল

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ব্যাংক, বিমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ডাক, রেলওয়ে, হাসপাতাল ও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা এবং অন্যান্য জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জনস্বার্থ বিবেচনা করে তাদের নিজস্ব আইন বা বিধি অনুযায়ী অফিস সময় নির্ধারণ করবে।

রমজানকে কেন্দ্র করে উচ্চ আদালতের বিচারকাজ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। সময়সূচি অনুযায়ী আপিল বিভাগের বিচারকাজ সকাল ৯টায় থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকাজ সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে বিকেল সোয়া ৩টা পর্যন্ত চলছে।

এদিকে রমজানে ব্যাংকের লেনদেন চলবে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। বর্তমানে লেনদেন চলে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ফলে রমজানে মাসে ব্যাংক লেনদেনের সময় কমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রমজানে ব্যাংকের অফিস সূচি হবে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ৪টা পর্যন্ত। এর আগে এই অফিসসূচি সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ছিল। সপ্তাহে রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নতুন এ সময়সূচিতে ব্যাংকে অফিস ও লেনদেন চলবে। রোজা শেষে ব্যাংকের অফিস ও লেনদেনের সময়সূচি আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।

আরও পড়ুন

রমজানে যেসব কাজে সতর্ক করলেন আজহারী

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, রমজানে অফিস সময়সূচিতে বেলা ১টা ১৫ মিনিট থেকে দেড়টা পর্যন্ত নামাজের বিরতি থাকবে। তবে এ সময়ে বিকল্প ব্যবস্থায় লেনদেন অব্যাহত রাখতে হবে।

কেমন পরিবর্তন এসেছে ব্যক্তি জীবনে

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আসাদুল্লাহিল গালিব ঢাকা মেইলকে বলেন, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় রমজানে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ও সময় ব্যবস্থাপনায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। নির্দিষ্ট কিছু সময়ে কিছু কাজ অবধারিত থাকায় দিনের অন্যান্য কাজে পরিবর্তন আনতে হয়। সাহরি শেষে ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাতে যাই। পরে বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে আসি। অন্য সময় বাচ্চাকে স্কুলে দেওয়ার পর পার্কে ব্যায়াম করলেও রমজানে সেটা হচ্ছে না।

অফিসের সময়সূচির কারণে দৈনন্দিন কাজে পরিবর্তনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অফিস টাইম এক ঘণ্টা এগিয়ে আসায় সকালের সময়টা বেশ ব্যস্ততার মধ্যে যায়। আবার পরিপূর্ণ ঘুমও হয় না। আবার ইফতারের আগে বাসায় ফেরার তাড়া থাকে। তাই ব্যাংক ছুটি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বের হওয়ার চেষ্টা করি যাতে বাসায় গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে পারি। অন্যান্য সময় এই তাড়া থাকে না।

Roza3
প্রথম রমজানে রাজধানীর অলি-গলিতে জমে উঠেছে ইফতার বাজার। ছবি: ঢাকা মেইল

রাতে তারাবির নামাজ নিয়মিত পড়া হয়। আবার রাতে উঠে সাহরি খেতে হয়। যে কারণের রাতের খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনতে হয়েছে। মোটকথা, রমজান মাসে সময় ব্যবস্থাপনা ও জীবনযাত্রা নিয়ে সচেতন থাকতে হয়।

ফেসবুকভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ডু সামথিং এক্সেপশনালের (ডিএসই) এডমিন ও উদ্যোক্তা জেবিন ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, রমজান তো আবেগের মাস, সংযম সবসময় করা উচিত। রোজার আগে থেকেই একটা প্রস্তুতি থাকে। বাসায় অসুস্থ বয়স্ক আম্মা আব্বা আছেন, পরিবারের অন্য সদস্যরা আছেন, তাই পুরা রোজা বাসাতেই কাটানোর ইচ্ছা। খুব জরুরি না হলে রোজায় কোনো দাওয়াত রাখি না।

আরও পড়ুন

বিদেশি ফলের বাজার চড়া, পাকা পেঁপেতে ‘আগুন’!

তিনি বলেন, বছরের অন্য সময় অনেক বিষয়ে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ভুল হলেও রমজানে বেসিক জিনিসগুলো ঠিক রাখার চেষ্টা করি। যেমন- নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত করা, কারও ক্ষতি না হয়, আমি যেন কারো মনে কষ্টের কারণ না হই সেসব বিষয়ে সতর্ক থাকার চেষ্টা করি।

ইংরেজি দৈনিকে কর্মরত সাংবাদিক জহির রায়হান ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রথমত সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস হচ্ছে। এটা একটা বড় পরিবর্তন। সকালেই কাজের জন্য বের হয়ে যাওয়া হয়। কর্মজীবী স্ত্রী অন্য সময়ের চেয়ে আগেভাগে বাসায় ফিরতে পারছে রমজানে। যে কারণে বাচ্চা তার মাকে বেশি সময় কাছে পাবে। যদিও আমার আগের মতো একই সময়ে বাসায় ফিরতে হবে। যে কারণে বাসায় ফেরা নিয়ে তেমন পরিবর্তন হবে না। তবে সব চেয়ে বড় পরিবর্তন হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার অভ্যাস তৈরি করার সুযোগ এই মাস। সেটা চেষ্টা করছি।

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর