মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

যানজট ও প্রাণ সংশয় নিয়ে নিত্য পথচলা

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

যানজট ও প্রাণ সংশয় নিয়ে নিত্য পথচলা
ভোগান্তি নিয়ে পথ চলতে হয় নগরবাসীকে। ছবি: ঢাকা মেইল

রাজধানীর মগবাজার ওয়ারলেসের বাসিন্দা ওয়াহিদুল ইসলাম অভি। ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করেন কারওয়ানবাজারে অবস্থিত একটি আইটি ফার্মে। মগবাজার থেকে কারওয়ানবাজার রুটে একাধিক বাস থাকলেও বেশির ভাগ সময় অফিসে যান পায়ে হেঁটে। সময় বাঁচাতে কখনো কখনো রিকশায়।

ঢাকা মেইলকে অভি বলেন, মগবাজার থেকে কারওয়ানবাজার স্বল্প দূরত্বের পথ। এছাড়া এই রুটে অন্তত তিনটি বাস রয়েছে। কিন্তু মূল সমস্যা যানজট। অফিস আওয়ারে এই অল্প পথ পাড়ি দিতে আধা ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় লেগে যায়। মগবাজার ও বাংলামোটর প্রতিটা সিগন্যালে কখনো কখনো ১০ থেকে ১৫ মিনিট করে বসে থাকতে হয়৷ ফলে সময় বাঁচাতে রেললাইনের পাশের সড়ক দিয়ে কারওয়ানবাজার রেলক্রসিং হয়ে হেঁটে যাওয়াটাই ভালো মনে হয়৷ কখনো অলসতা কাজ করলে ওই পথে রিকশায় চলে যাই।


বিজ্ঞাপন


এই সড়কে চলাচল করা বেশির ভাগ যাত্রীর কাছেই মগবাজার ও বাংলামোটর সিগন্যাল এক স্থায়ী বিভীষিকার নাম। একটানে সিগন্যালগুলো পার হতে পারা যেন বিরাট ভাগ্যের বিষয়। এর সাথে নতুন করে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে আউটার সার্কুলার রোড ও ইস্কাটন সড়কে স্থাপিত ম্যানহোল। প্রতিটা ম্যানহোল যেন একেকটা মৃত্যু দুয়ার।

আরও পড়ুন

রাজধানীতে লাখো মানুষের চলাচলের সড়কটি এখন অকেজো!

এই সড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে বেশ কয়েক বছর আগেই রাজধানীর প্রথম ফ্লাইওভারগুলোর একটি স্থাপন করা হয়েছে। তবে এতে এই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের ভোগান্তি কমেনি। উপকার হয়েছে সড়কে যানজটের অন্যতম কারণ গাড়ি মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। যে কারণে একাত্তরের আগে এই এলাকার নাম ছিল ‘পাকমোটর’, যা স্বাধীনতার পর ‘বাংলামোটর’ হয়েছে।

Mogbazar2


বিজ্ঞাপন


সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলামোটর থেকে ইস্কাটন মোড় পর্যন্ত উভয় সড়কের পাশে রয়েছে অটো মোবাইলস ব্যবসার প্রতিষ্ঠান। যাদের বেশির ভাগের গাড়ি মূল সড়কের উপর রেখেই ঠিকঠাক করা হয়। বিশেষ করে বাংলামোটর থেকে মগবাজারগামী একমুখী সড়কে। যেগুলো মূল সড়কের প্রায় এক তৃতীয়াংশ জায়গা দখল করে রাখে। এই সড়কে চলাচলকারী বেশিভাগ গণপরিবহন ইস্কাটন এলাকায় এসে ফ্লাইওভারে উঠে যায়। তবে বিপত্তি দেখা যায় গ্লোব-জনকণ্ঠ ভবনের সামনে থেকে। ফ্লাইওভারের পিলারের জন্য স্থানটি সংকীর্ণ থাকায় এখানে রিকশা ও প্রাইভেটকারের জ্যাম তৈরি হয়। এই সড়কে আরেকটি বড় সমস্যা রিকশার উল্টোপথে চলা। বাংলামোটরমুখী সড়কে দীর্ঘ জ্যাম থাকায় প্রায় সব রিকশাই উল্টো পথে চলে। যা সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

এই সড়কের নিয়মিত যাত্রী আরিফ ইসলাম বলেন, বাংলামোটরের সিগন্যাল পার হওয়া বিরাট কষ্টকর বিষয়। এই সিগন্যাল অনেক সময় বিরতি দিয়ে ছাড়ে। এদিকের রাস্তাতেও গাড়ি ঠিক করা হয়। আবার উল্টোপথেও বিপত্তি। একে তো রাস্তার একটা অংশজুড়ে গাড়ি ঠিক করা হয়। আর রিকশাগুলো বুলেট গতিতে উল্টো পথে চলে। যা যাত্রীদের জন্য বিপজ্জনক।

আরও পড়ুন

ঢাবিতে যান নিয়ন্ত্রণে খুশি শিক্ষার্থীরা, ক্ষুব্ধ নগরবাসী

এ বিষয়ে রাস্তায় গাড়ির কাজ করতে থাকা অটোমোবাইলস দোকানের একাধিক কর্মচারীর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা বলেন, এসব বিষয়ে তো আমরা জানি না। বহু বছর যাবত এভাবেই কাজ করা হয়। আমরা এসে এভাবে পেয়েছি, এখনো তাই করছি।

ম্যানহোল যেন মৃত্যুকূপ

এদিকে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর একে একে নিখোঁজ হতে থাকে মৌচাক-বাংলামোটর সড়ক ও আশেপাশের অলিগলির ম্যানহোল। পরবর্তী সময়ে অল্প কিছুসংখ্যক পুনরায় লাগানো হলেও তা আবারও চুরি হয়ে যেতে দেখা গেছে। এতে সড়কে চলাচল করা সাধারণ মানুষের জন্য ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।

Mogbazar3

মগবাজার বাটার গলির কনভেনশন সেন্টার অংশের গলিতে মোট চারটির মধ্যে তিনটিই চুরি হয়েছে। পরবর্তী সময় দুটি লাগানো হলেও তা পুনরায় চুরি হয়েছে। ফলে ম্যানহোলে বাঁশ দিয়ে পথচারীদের সতর্ক করার ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয়রা।

মূল সড়কের ম্যালহোলের ঢাকানাগুলোরও একই অবস্থা। মগবাজার কনভেনশন সেন্টারের সামনের হকার আজিজুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, সরকার পড়ার পরপরই আশেপাশের সব কয়টা ঢাকনা চুরি হয়েছে। পরে লাগানো হলে আবারও চুরি হয়েছে। এখন বাঁশ-কাঠ বা কোথাও ঢালাই করা হয়েছে৷

আরও পড়ুন

মেট্রোরেলের ২ লাখ কার্ড নিয়ে গেছেন যাত্রীরা, টিকিট সংকটে ভোগান্তি 

বাটার গলির দোকানি নাজমা খাতুন বলেন, আমি রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত দোকান চালু রাখি। রাতে ঢাকনা ছিল৷ কয়েক দিন আগে রাস্তা করেছে, তাই শক্তভাবেই ঢালাইয়ের নিচে ছিল। সকাল বেলা দেখি ঢাকনা নেই৷ মনে হয় শাবল ধরনের কিছু দিয়ে ঢালাই ভেঙে ঢাকনা নিয়ে গেছে। আগে এমন হলে কাউন্সিলরের অফিসে জানালে ঠিক করে দিত। এখন তো কাউন্সিলরই নাই। কাকে জানাবো তাও জানি না। তাই বাঁশ দিয়ে রেখেছি৷ কিন্তু রিকশা ও চলাচলে সমস্যা হয়। ওইদিক এক বয়স্ক লোক প্রায় পড়েই গিয়েছিলেন।

এমএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর