ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এতদিন অবাধে যাতায়াত করা গেলেও হঠাৎ করেই কর্তৃপক্ষ তাতে লাগাম টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বহিরাগত যানবাহন যেন ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের সাতটি পয়েন্টে বসানো হয়েছে ব্যারিয়ার। এতে একদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যানজটমুক্ত হয়েছে, অন্যদিকে আশপাশের এলাকায় বেড়েই চলেছে যানজট। ফলে ঢাবি কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে খুশি শিক্ষার্থীরা, কিন্তু ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের নীলক্ষেত ও শাহবাগ পয়েন্টে ব্যারিয়ার দেওয়া হয়েছে। প্রক্টরিয়াল টিম এবং শিক্ষার্থীরা মিলে নিয়ন্ত্রণ করছেন যানবাহন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী কিংবা অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কোনো যানবাহনই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
গত শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি পয়েন্টে ব্যারিয়ার উদ্বোধন করা হয়। এরপর থেকে একেবারেই সীমিত হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। এর প্রভাব পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায়। শাহবাগ মোড়, নীলক্ষেতসহ আশেপাশের পুরো এলাকায় লেগে থাকছে অস্বাভাবিক যানজট। এই যানজটের ধাক্কা গিয়ে লাগছে বুয়েট এলাকায়ও।
ঢাবি এলাকায় ঢুকতে না পেরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রিকশা আরোহী ক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এটা কি ক্যান্টনমেন্ট? আমরা এরকম নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখি ক্যান্টনম্যান্টে। এটা তো একটা উন্মুক্ত এলাকা ছিল। আমরা এতকাল এদিক দিয়ে যাতায়াত করে এসেছি। এখন এটাকে ক্যান্টনমেন্টের মতো চারদিক থেকে বন্ধ করে দেওয়া হলো কেন? এতে আমাদের ভোগান্তি বেড়েছে।’
বিজ্ঞাপন

আহমেদ ফয়সাল নামে আরেক মোটরসাইকেল আরোহী বলেন, ‘এগুলো বাড়াবাড়ি, আমরা তো আর যেখানে পড়াশোনা হয় সেখানে গিয়ে হর্ন বাজাচ্ছি না। এই রাস্তা বাদ দিয়ে অন্য কোথায় আমরা গাড়ি চালাবো?’
যানজটের ফলে পলাশী, নীলক্ষেত, শাহাবাগসহ আশপাশের এলাকার রিকশাওয়ালারা হাঁকছেন চড়া দাম। ৩০- ৪০ টাকার ভাড়া হয়ে যাচ্ছে ১০০-৮০ কিংবা ১২০। এই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ঢাবি ক্যাম্পাসে অবস্থানরতদেও।
এদিকে ক্যাম্পাস থেকে নীলক্ষেত কিংবা শাহবাগগামী কোনো রিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। হাঁটতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তবে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো আক্ষেপ নেই। ক্যাম্পাস বহিরাগতমুক্ত হয়েছে এতেই তারা ব্যাপক খুশি।
আরও পড়ুন
মাইনুদ্দিন গাউস নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। ইতঃপূর্বে কেউই বহিরাগতমুক্ত ক্যাম্পাস করতে পারেনি। বাহিরের মানুষ কিছুটা বিরক্ত হলেও বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষার পরিবেশ তৈরিতে আমরা প্রশাসনের সাথে আছি।’
আরেক শিক্ষার্থী সালমান শাহেদ বলেন, ‘আমরা এমন ক্যাম্পাসই চেয়েছিলাম। শিক্ষার পরিবেশের জন্য এমন ক্যাম্পাসই দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের ক্যাম্পাস ঢাকা শহরের একটি ব্যস্ততম এরিয়ায় অবস্থিত হওয়াতে বেশ সমস্যার পড়তে হচ্ছে জনসাধারণকে। তবে আশা করি কিছুদিনের মধ্যে এ ব্যাপারে অভ্যস্থ হয়ে উঠবে নগরবাসী।’
এদিকে নতুন করে প্রক্টরিয়াল টিমে আরো ১০ জন সদস্য নেওয়া হয়েছে শুধু এই কাজটিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য। প্রক্টোরিয়াল টিমের সদস্য আবু সাঈদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বহিরাগতদের কাছে এটাতো ভার্সিটি না, এটা পার্কের মতো। এখানে প্রেম করতে আসেন অনেকে। কদিন আগে মাছ বিক্রেতাও এসেছিলেন কয়েকজন। ক্যাম্পাসকে এমন আমরা হতে দিতে পারি না। তাই আমরা প্রক্টর স্যারের নির্দেশে ক্যাম্পাসকে বহিরাগতমুক্ত রাখতে বদ্ধপরিকর।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রক্টোরিয়াল টিমের আরেক সদস্য ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পয়েন্টগুলো যে বন্ধ এটা অনেকেই জানতেন না। এক সপ্তাহ যদি এভাবে কন্টিনিউ করা হয়, মানুষ নিজ থেকেই আর এদিকে আসবেন না।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা আগে। বহিরাগতদের বিনোদনের জন্য আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয় উন্মুক্ত রাখতে বাধ্য না। সামনে থেকে তো যারা পায়ে হেঁটেও আসবে তাদের আমরা চেকিং করব।’
প্রক্টর জানান, ঢাবি ক্যাম্পাস এলাকায় নিবন্ধিত রিকশা চলাচলের ব্যবস্থা হচ্ছে। এতে ক্যাম্পাসের ছাত্র-ছাত্রীসহ অন্যদের দুর্ভোগ কমে যাবে। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বহিরাগত নিয়ন্ত্রণের। রিকশার যে সংকট সেটি মাথায় রেখে আমরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নিবন্ধিত রিকশার ব্যবস্থা করব। সারাদিন এসব রিকশা কেবল ক্যাম্পাসেই চলবে। এটি হলে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও সহজ হবে।
বহিরাগতদের ভোগান্তি প্রশ্নে প্রক্টর বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে পাশ কাটিয়ে কারো চিত্তবিনোদনের জন্য ক্যাম্পাসকে উন্মুক্ত রাখতে পারি না। এখানে এতদিন মানুষ আসা-যাওয়া করতো ফ্রি অফ কস্টে। এখন সেটায় ব্যঘাত ঘটায় বিরূপ মন্তব্য তো করবেই। কারো সুবিধার জন্য আমার বিশ্ববিদ্যালয় উন্মুক্ত রাখতে বাধ্য না।
আরএ/এএস/জেবি

