রাজধানীর ব্যস্ততম রাস্তার একটি মুগদা-মান্ডা সড়ক। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করতেন। এই এলাকায় বসবাসরত কয়েক লাখ মানুষ এই সড়কের সুবিধাভোগী। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কটির বেহাল অবস্থা। বর্তমানে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিকল্প পথে চলাচল করছেন এই এলাকার বাসিন্দারা।
মুগদা এলাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়কটি এখন অনেকটা পরিত্যক্ত। সন্ধ্যা হলেই ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সড়কটিতে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত আর খানাখন্দ। বৃষ্টি হলেই কোমর পানিতে ডুবে থাকে। বর্তমানে এটি যাতায়াতের উপযোগী নয়। সরকারি কোনো সংস্থা সড়কটি মেরামতে এগিয়ে আসছে না। এলাকাবাসী নিজেদের অর্থায়নে হলেও সড়কটি মেরামত দেখতে চায়।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিন দেখা যায়, মুগদা বিশ্বরোড থেকে মান্ডা ব্রিজে যাওয়ার সড়কটির অবস্থা ভয়াবহ। সড়কটি দিয়ে হাতেগোনা দুই একটি ইজিবাইক চলাচল করলেও বেশির ভাগ যানবাহন চলাচলের জন্য বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করছে। অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থা হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই সড়কের পাশের দোকানিরা। ক্রেতা না থাকায় তারা অলস সময় পার করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী এবং গাড়ির ড্রাইভারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মুগদা-মান্ডার এই সড়কটির অবস্থা নাজুক। রাস্তাটিতে বড় বড় গর্ত এবং খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। যার কারণে সব সময় পানি জমে থাকে। এতে সড়কটিতে গাড়ি এবং সাধারণ মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এই এলাকায় হাজার হাজার বাসিন্দা। জনপ্রতিনিধিরা রাস্তাটি মেরামত না করায় এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় তাদের নিজ অর্থে মেরামতের চেষ্টাও করেছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এক বছরের বেশি সময় ধরে শুনছি এই সড়কটি বড় করা হবে। এজন্য সড়কের দুই পাশের বাড়িঘর ও দোকানপাটও উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর জন্য পূর্বে কোনো নোটিশও দেওয়া হয়নি। তারপরও সড়কের কোনো কাজ করা হয়নি। উচ্ছেদ অভিযানের পর থেকে সড়কের অবস্থা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে যাতায়াতের জন্য এটি একেবারেই অনুপযুক্ত। প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এই এলাকার কয়েক লাখ মানুষকে। সড়কটি দীর্ঘদিন এই অবস্থায় ফেলে রাখায় ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয়রা। কোনো টালবাহানা না করে দ্রুত সড়কের কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
অটোরিকশা ড্রাইভার মুন্নাফ ঢাকা মেইলকে বলেন, এ রাস্তা দিয়ে আগে প্রচুর গাড়ি এবং মানুষ চলাচল করত। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মানুষের কোলাহল একই রকম থাকত। কিন্তু এখন রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়াতে গাড়ি চলতে পারে না। এজন্য মান্ডার দিকে যারা বসবাস করে তারা বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করে। রাস্তার যে অবস্থা গাড়ি চালাতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়। বৃষ্টি এলে তো সমস্যা আরও বেড়ে যায়। মাঝেমধ্যে গাড়ি উল্টে যায়। এসব কারণে বিপাকে পড়তে হয় জনসাধারণকে।

সিএনজি চালক তাইজুল ইসলাম খোকন ঢাকা মেইলকে বলেন, এক বছর ধরে এই রাস্তটির অবস্থা খুবই ভয়াবহ। সারা বছর ধরে রাস্তার মধ্যে পানি জমে থাকে। এতে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। এমন ঝুঁকি নিয়ে সব সময় চলাচল করতে হচ্ছে। বৃষ্টি হলে হাঁটু পানি জমে থাকে কয়েক দিন। কোনো গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা, রিকশাও যেতে পারে না। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছে। রাস্তার নাজুক পরিস্থিতি থাকার কারণে চরম দুর্ভোগ নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে এই এলাকার বাসিন্দাদের। আমরা চাই রাস্তাটি দ্রুত মেরামত করা হোক।
এই এলাকার ব্যবসায়ী আইফুজ্জামান সাগর ঢাকা মেইলকে বলেন, মুগদা এলাকায় সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক হচ্ছে এটি। কিন্তু এখন সন্ধ্যা নামলেই ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়। এই সড়কটিতে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দে ভরা। ভাঙাচোড়া রাস্তা থেকে পানি কখনো শুকিয়ে দেখে না। এই এলাকার মানুষদের সব সময় ভোগান্তি নিয়ে এই রাস্তায় চলাচল করতে হচ্ছে। এর প্রভাব আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের ওপর পড়েছে। আমাকে মাসে ১৬ হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসা নেই, লোকজন নেই। রাস্তার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় মাঝেমধ্যে আমার চোখের সামনে দুর্ঘটনা ঘটছে। বছরের পর বছর রাস্তাটি খারাপ হলেও কারো নজরে পড়ে না। আমরা উদ্যোগ নিয়ে মাঝে মধ্যে মেরামত করার চেষ্টা করি। মেরামতের জন্য আমি একবার ১৬ হাজার টাকা খরচও করেছি। আমি চাই রাস্তার সমস্যাটি দ্রুত সমাধান করা হোক।

স্থানীয় বাসিন্দা খ. ম. আল আমিন ঢাকা মেইলকে জানান, বছরখানেক ধরে রাস্তার অবস্থা খুবই ভয়াবহ। কিন্তু রাস্তার এই সমস্যা ধীরে ধীরে প্রকট হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা কখনোই সমস্যার সমাধান করতে আসেনি। প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে হাজার হাজার লোকজন যাতায়াত করছে। সব সময় পানি জমে থাকে, বৃষ্টি হলে রাস্তার অবস্থা খুবই ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তখন কোনো গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা, রিকশাও যেতে পারে না। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। রাস্তার দুই পাশে যে বাড়িঘরগুলো ভাঙা হয়েছে। এজন্য রাস্তার সমস্যা আরও বেড়েছে। কিন্তু সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই এলাকার এমপি এবং কাউন্সিলরকে কখনো রাস্তা মেরামতের কাজে এগিয়ে আসতে দেখিনি। আমরা চাই, রাস্তাটি দ্রুত মেরামত করা হোক।
শুধু মুগদা-মান্ডার রাস্তাই নয়, আশপাশের বিভিন্ন রাস্তাও এখন ভাঙ্গাচোড়া। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়কটিরও একই অবস্থা। সামান্য বৃষ্টি হলেই ডুবে থাকে। গর্তের মধ্যে পানি জমে থাকে। চলাচল করার জন্য রাস্তায় ইটের খোয়া দেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিতে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দে ভরা। হাসপাতাল রোগী আসা-যাওয়া করার জন্য সব সময় এ রাস্তাটি ব্যস্ত থাকে। রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় রোগী ও তার স্বজনদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে সব সময়। এলাকাবাসীকে দীর্ঘ দিন ধরে এই অবস্থা মোকাবেলা করে আসছে। এই সড়কটির দ্রুত মেরামত চায় এলাকাবাসী।

এদিকে বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জরুরি পরিচালন কেন্দ্রে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান প্রকৌশল বিভাগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরে জানিয়েছেন, আগামী ১৫ দিনের ডিএসসিসিভুক্ত এলাকার সড়কের খানাখন্দ মেরামত করা হবে।
মিজানুর রহমান বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে সড়কে ছোট ছোট খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে, যেগুলো সবার আগে গুরুত্ব দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। এই কাজটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এরপর বড় বড় রাস্তার মেরামতের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
সড়ক সংস্কারে বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, চলতি বছরে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে সড়কগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নাগরিক সেবার আওতায় রাস্তা খননের জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে অনুমতি দেওয়া হয়, তবে অনেক সময় ওই সংস্থাগুলো নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারে না, যার ফলে কিছু বিলম্ব হয়। এছাড়া দেশের পরিস্থিতির কারণে কিছু কাজ শুরু হতে দেরি হয়েছে।
এমই/জেবি

