গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদলের পর রাজধানীর ট্রাফিকব্যবস্থা যেন নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। বিদায়ী স্বৈরাচারী সরকারের সহযোগী হিসেবে পুলিশ যে জনরোষের শিকার হয়, এর আঁচ লাগে ট্রাফিক পুলিশের গায়েও। বেশ কয়েক দিন পালিয়ে থাকার পর কাজে যোগ দিলেও সড়কে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে পারছে না ট্রাফিক পুলিশ। আর সেই সুযোগে রাজধানীজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এমনকি যে সড়কে এসব যানবাহন কোনো দিন প্রবেশের সাহস করেনি সেখানেও উৎপাত বেড়েছে এই রিকশার। এতে যেমন ঘটছে দুর্ঘটনা তেমনি সড়কে বাড়ছে বিশৃঙ্খলা। সম্প্রতি রাজধানীতে যানজটের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পেছনে অনেকে দায়ী করছেন এসব রিকশাকে।
ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইকচালক সংগ্রাম পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। ইজিবাইকের সংখ্যা দুই লক্ষাধিক। যা প্রতিদিন বাড়ছে। আগে এসব যানবাহন পাড়া-মহল্লার ভেতরে চলাচল করলেও এখন চলাচল করছে প্রধান সড়কে। এমনকি সড়কে বাস, মিনিবাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে দেখা গেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে।
আগে দিনের বেলায় প্রধান সড়কে ঢোকার সুযোগ পেত না ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এলেও গুনতে হতো মোটা অংকের জরিমানা। কিন্তু গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদরের পর যেন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে এসব বাহন। ইতোমধ্যে এসব রিকশার চালকরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনও করেছেন। এবার তাদের উৎপাত এতটাই বেড়ে গেছে যে, বিমানবন্দর সড়ক, উড়াল সড়কসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নির্বিঘ্নে চলাচল করছে। ট্রাফিক পুলিশও তাদের থামানোর সাহস করছে না।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল এলাকা পর্যন্ত পৌঁছে যায় একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। এ নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মূল সড়কে আসা এই বাহন সড়কে যেমন জটলা তৈরি করছে, একইভাবে ঘটাচ্ছে দুর্ঘটনাও। সাদ্দাম হোসেন নামে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার একজন বাসিন্দা ঢাকা মেইলকে বলেন, 'ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো খুবই ঝামেলা করছে৷ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পুরো রাস্তা জ্যাম থাকে।'
ওয়াহিদুল ইসলাম নামে শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা বলেন, 'একটার পর একটা অ্যাক্সিডেন্ট হচ্ছে৷ প্রতিদিন কেউ না কেউ আহত হচ্ছে। এভাবে তো চলতে পারে না।'
ওয়াহিদুল ইসলামের দাবির সত্যতা মিলেছে নগরীর শ্যামলী এলাকায়৷ সেখানকার সিনেমা হলের সামনে রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) ব্যাটারিচালিত রিকশায় দুর্ঘটনার শিকার হন মো. সোহেল৷ এতে পায়ে মারাত্মক আঘাত পাওয়ার পাশাপাশি হাতও কেটে যায় তার৷ ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে সোহেল বলেন, 'আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। একটা অটোরিকশা আরেকটাকে চাপ দিল, একটা এসে আমার গায়ে উঠে গেল। এটা এখন নিয়মিত হয়ে গেছে৷'
আরও পড়ুন
মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের জোর দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরাও। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ কাজী সাইফুল নেওয়াজের মতে, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশা কিছুদিন ধরে মহামারির মতো রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে গেছে।’
ঢাকা মেইলকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, 'এখনই পদক্ষেপ না নিলে পরে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হবে। এসব বাহন নিজেদের জন্যও যেমন ঝুঁকি, অন্যদের জন্যও ঝুঁকি।'
দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ করতে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ। একই সঙ্গে মূল সড়কে যেন ব্যাটারিচালিত রিকশা যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নাজমুল হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, 'ফ্লাইওভারসহ সব জায়গায় অটোরিকশা উঠে যাচ্ছে৷ আমরা চেষ্টা করছি কন্ট্রোল করার৷ পুলিশের একার পক্ষে এটা কন্ট্রোল করা সম্ভব না। জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে৷ এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাহন। এলাকার মধ্যে চলছে, সেটা একটা বিষয়৷ কিন্তু এখন সেটি মূল সড়কে যাচ্ছে৷ জনগণকে নিজের নিরাপত্তা বুঝতে হবে। তাহলেই এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।'
পুলিশ কঠোর হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'করা হচ্ছে, একটু স্লো। আমাদের অনেক কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছেন৷ আপাতত আমরা রাস্তাটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি৷ বাকিটাও হচ্ছে। তারা একসঙ্গে ২৫-৩০ জন চলে আসে, আমাদের কনস্টেবল থাকে একজন। তারা (ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা) মারমুখী ভূমিকায় চলে আসে। পারা যায় না।'
কারই/জেবি