রাজধানী ঢাকা যেন রিকশাতেই ‘ঢাকা’ পড়ে আছে। যে দিকে চোখ যায় শুধুই রিকশা আর রিকশা। কিছু সড়কে তিন চাকার এই যানটি নিষিদ্ধ করা হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। রাজধানীর সড়কে তীব্র যানজটের জন্য ধীরগতির এই রিকশাকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকায় দিন দিন রিকশার সংখ্যা শুধু বাড়ছেই। কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকার পরেও গ্রাম থেকে রাজধানীতে এসেই এলাকাভিত্তিক গ্যারেজের সূত্র ধরে রিকশার চালক বনে যাচ্ছে শত শত মানুষ।
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর রাস্তায় সর্বোচ্চ দুই লাখ ১৬ হাজার গাড়ি চলতে পারে। সেখানে ঢাকায় চলছে ১২ লাখেরও বেশি রিকশা। অর্থাৎ সব ধরনের যান্ত্রিক গাড়ির চেয়েও বেশি হারে রিকশা চলছে। রাজধানীর যানজটের জন্য এই রিকশাকে প্রধান কারণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ঢাকা মেইলকে জানান, ‘কয়েকটি রাস্তায় রিকশা চলাচল বন্ধ করলেই রাজধানী যানজটমুক্ত হবে না। রিকশা হচ্ছে ধীরগতির যান। বিশ্বের কোনো দেশে প্রধান সড়কে ধীরগতির যান বা রিকশা চলাচল করে না। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের কলকাতা শহরের প্রধান সড়কে রিকশা চলে না। এসব রিকশা যখন প্রধান সড়কে উঠে যায় তখন অন্যান্য গাড়িগুলোর গতি অনেক কমে যায়। একটা গাড়ি যে ফ্লোতে যাওয়ার কথা সে ফ্লোতে যেতে পারে না।’
রাজউকের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় রিকশার সংখ্যা পাঁচ লাখ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকায় এখন রিকশার সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার মোটরচালিত রিকশা ও ইজিবাইক।
যানজট কমাতে প্রধান প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কুড়িল, রামপুরা, সায়েদাবাদ, গাবতলী, আসাদগেট, আজিমপুর, সায়েন্সল্যাব ও শাহবাগের রাস্তায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে রিকশা। তবে প্রধান সড়কে রিকশা বন্ধের দাবি জানালেও যেসব সড়কে পাবলিক পরিবহন নেই সেগুলোতে রিকশা রাখার দাবি নগরবাসীর।
বিজ্ঞাপন
বনশ্রীর বাসিন্দা মাজেদুল নয়ন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমি এ ব্লকের ২ নম্বর রোডে থাকি। সেখান থেকে টিভি সেন্টার আসার জন্য একমাত্র ভরসা রিকশা। এই এলাকায় রিকশা তুলে দিলে যাতায়াতের কোনো মাধ্যম থাকবে না। তাই ভোগান্তিতে পড়তে হবে আমাদের।’
তবে প্রধান সড়কে রিকশা বন্ধ হোক জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রামপুরা ব্রিজ থেকে মালিবাগ যাবো, তখন গণপরিবহনে যেতে পারি। আর এ সড়কে রিকশা উঠিয়ে দিলে দ্রুত যাওয়া সম্ভব।’
সরেজমিনে দেখা যায়, রামপুরা টিভি সেন্টারের সামনে প্রায় শ’খানেক রিকশা দাঁড়িয়ে রয়েছে। ছোট সড়ক ছেড়ে রিকশা এখন মূল সড়কেও চলাচল করছে। এতে রামপুরা এলাকায় থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। মূল সড়কে রিকশার চলাচল নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক বিভাগের কোনো তৎপরতাও চোখে পড়েনি।
রামপুরা টিভি সেন্টারের সামনে দায়িত্বরত পুলিশের উপ-পরিদর্শক হাসনাত আলীর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের এখানে অনেকগুলো রাস্তা। আবার প্রধান সড়কে অনেক জায়গার বাস এখানে যাত্রী উঠানামা করায়। তাই বাসের দীর্ঘ সারি থাকে। এদিকে টেম্পো আছে। সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আর রিকশা ফাঁকা দেখলে ঢুকে যায়। তাদের কোনো শাস্তি দিতে পারছি না। আবার পরিমাণে এত বেশি হওয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণও করা যাচ্ছে না। প্রধান সড়কে রিকশার চলাচল বন্ধ করতে হলে আমাদের আরও লোকবল লাগবে।
এএম/জেবি