রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

হানিফ ফ্লাইওভার পার হয়ে জ্যামে পড়লেই হানা দিচ্ছে ছিনতাইকারী!

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ০৯ জুলাই ২০২৪, ০৭:৩২ এএম

শেয়ার করুন:

হানিফ ফ্লাইওভার পার হয়ে জ্যামে পড়লেই হানা দিচ্ছে ছিনতাইকারী!

শনিবার রাত প্রায় সাড়ে নয়টা। যানজটে আটকে আছে বিভিন্ন যানবাহন। এর মাঝে চোখের সামনে ঘটে গেল অবাক করা ঘটনা। দুজন উঠতি বয়সী যুবক দাঁড়িয়ে থাকা একটি প্রাইভেটকারের পেছনের জানালায় হাত ঢুকিয়ে কী যেন একটা করার চেষ্টা করছেন। বুঝতে বাকি রইল না, তারা প্রাইভেটকারে থাকা যাত্রী এবং চালককে জিম্মি করে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

ঘটনার রাতে যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভার পার হয়ে সাইনবোর্ড এলাকা ধরে যাওয়ার পথে যানজটে পড়েন ফাহরিন রুবাইয়া শারলি। এ সময় তার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ছিনতাইয়ের বিষয়টি তুলে ধরে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেই নারী ওই সময় তার নিজস্ব প্রাইভেটকারে ছিলেন। ফলে তিনি সাহস করে নামতে পারেননি। সেই সঙ্গে যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভার পার হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ কুমিল্লা যাওয়ার সড়কে রাতের বেলা যানজটে কী ঘটে তা তিনি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন সেই ভিডিওতে।


বিজ্ঞাপন


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শারলি নামে সেই নারী যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশের সহযোগিতা পেতে তৎক্ষণাৎ জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল লাইনে কলও করেছিলেন। কিন্তু এলাকাটি যাত্রাবাড়ী থানার মধ্যে না পড়ায় তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। তবে বিষয়টি বন্দর থানা পুলিশকে জানানো হবে বলে জানিয়েছে যাত্রাবাড়ী থানার সংশ্লিষ্ট।

রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভার পার হয়ে সাইনবোর্ড সড়ক ধরে প্রতি রাতে যানজটকে পুঁজি করে কয়েকটি চক্র এই ছিনতাই করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত কয়েক মাস ধরে এটা চললেও বন্ধ করতে পারছেন না পুলিশ।

আরও পড়ুন

দাবার বোর্ড জব্দ করা নিয়ে দ্বন্দ্বে খুন হন কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটির ভাষ্য, তারা প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ জন করে শুধু এই সড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের আটক করছে। কিন্তু তারা জামিনে বের হয়ে এসে আবার একই কাজ করছে। চক্রটির সদস্যদের বেশিরভাগের বাড়ি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলাকা ও উত্তরায়। ফলে তাদের দ্রুত শনাক্ত করে ধরাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে পুলিশের পক্ষে।


বিজ্ঞাপন


ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের পুলিশের সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, এই সড়কে ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশের আটটি টিম কাজ করছে। দুই ভাগে ভাগ করে তারা দিনে ও রাতে কাজ করছে। কিন্তু এরপর বন্ধ করা যাচ্ছে না ছিনতাই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে এই মহাসড়কটিতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। কিন্তু সড়কের উন্নয়নমূলক কাজ করতে গিয়ে সেগুলো খুলে ফেলেছে সড়ক বিভাগ। ফলে এখন এই সড়কে রাত বা দিনের বেলায় যানজটে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও তা জানা সম্ভব হচ্ছে না পুলিশের পক্ষ থেকে। এছাড়াও যানজটের সময় বড় বড় লরিবাহী ট্রাকের আড়ালে লুকিয়ে থাকে ছিনতাইকারীরা। যানজট লাগলেই তারা দ্রুত দাঁড়িয়ে থাকা এবং জানালার গ্লাস খোলা অপেক্ষমাণ প্রাইভেটকারে হানা দেয়। মুহূর্তেই অস্ত্র ঠেকিয়ে সেই গাড়িতে থাকা ব্যক্তিদের মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে সটকে পড়ে। বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে বেপরোয়া হয়ে উঠছে চক্রটি। ফলে চক্রটি সদস্যদের ধরা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে পুলিশের পক্ষে। এরপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি প্রতি মাসে অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের গ্রেফতারও করছে। কিন্তু জেল থেকে বেরিয়ে একই কাজ করছে ছিনতাইকারীরা।

যাত্রাবাড়ী ডেমরা এলাকায় এই মহাসড়কটিতে ছিনতাই প্রতিরোধ করতে গিয়ে এখন মহাবিপাকে পড়েছে পুলিশ। সিসি ক্যামেরা না থাকা, ছিনতাইকারীরা দূর থেকে আসা এবং পুলিশের স্বল্প সদস্য নিয়ে ছিনতাই প্রতিরোধ কঠিন হয়ে যাচ্ছে তাদের পক্ষে। যদিও ডিএমপি পুলিশের পক্ষ থেকে শুধু ছিনতাই প্রতিরোধে আলাদা টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে তৈরিকৃত এই টিমের সদস্যরা শুধু ছিনতাই প্রতিরোধে কাজ করছে। ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে ছিনতাই অনেকটা কমে এসেছে। শুধু যাত্রাবাড়ীর এই এলাকাটি এখন ‘অরক্ষিত’ হয়ে উঠেছে। রাতের বেলা এই মহাসড়ক ধরে চলাচল করতে এখন অনেকে ভয় পান।

আরও পড়ুন

চলন্ত বাসে ৩ নারীর স্বর্ণালংকার ছিনতাই

কদমতলী এলাকার মনজুরুল ইসলাম জানান, গত তিন মাস থেকে এই অবস্থা চলছে। রাত হলে অসহায় হয়ে যায় এই সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনে থাকা যাত্রী ও চালকরা। কখন কার গাড়িতে এসে হানা দেয় বলা মুশকিল।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, গত কয়েক মাসে এই মহাসড়কটিতে যানজটকে পুঁজি করে শতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীদের কেউ তেমন অভিযোগ করতে চায় না। এরপরও পুলিশ নিজের তাগিদে অভিযান চালায় এবং ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করে। এরপরও বন্ধ করা যাচ্ছে না ছিনতাই।

এ চক্রের সঙ্গে কেরানীগঞ্জ এলাকা, উত্তরা ও বন্দর থানার ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা জড়িত বলে জানা গেছে। যারা শুধু রাতের বেলায় এই কাজ করে। পালিয়ে দিনের বেলা এলাকায় অবস্থান করে। বিভিন্ন পিকআপ এবং ট্রাকের হেলপাররা তাদের সহযোগিতা করে বলে অভিযোগ পুলিশের।

জানা গেছে, মহাসড়কটির সাইনবোর্ড এলাকা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। কিন্তু রাতে যানজটের সময় ট্রাকের মাঝে যে দুই-একটি প্রাইভেটকার আটকা পড়ে সেগুলোই মূলত ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। যা ওই সময় রাস্তার পাশ থেকে দেখা যায় না। শুধু পাশে যে গাড়িগুলো থাকে তারাই দেখতে পারে।

এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আবুল হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ জন ছিনতাইকারীকে ধরছি। কিন্তু তারা জামিনে বের হয়ে আবারও একই পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। এদের বেশিরভাগই আসে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, উত্তরা ও বন্দর থানা এলাকা থেকে। আমাদের টিমের সদস্যরা প্রতিনিয়ত টহল দেন। তাদের নির্মূলে কাজ চলছে। আগের থেকে অনেক ছিনতাই কমে এসেছে।’

আরও পড়ুন

পাগলা কুকুর আতঙ্কে গুলশানের পার্কে তালা!

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির বিষয়ে ওসি বলেন, ‘যে ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সেটির ভিডিও ধারণকারী নারী জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল লাইনে কল করেছিলেন। কিন্তু আমাদের এলাকা থেকে সেটি ৫০০ গজ সামনে। ফলে বিষয়টি বন্দর থানাকে অবগত করা হচ্ছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।’

ডিএমপির ডেমরা জোনের এডিসি মাসুদুর রহমান মনির ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘যারা ছিনতাইয়ের এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা বেশিরভাগই মাদকসেবী। অনেক সময় ইয়াং বয়সের অনেকে থাকে। যানজট হয়ে গেলে এই সড়কে বাসের হেলপার চালকরা এমন কাজ করে থাকে। আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি নির্মূল হয়ে গেছে তা বলব না। তবে আমরা এটির মাত্রা অনেকটা কমিয়ে নিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি এটি নির্মূলের।’

এমআইকে/জেবি/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর