রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

পুলিশ কর্মকর্তার মা-বাবা হত্যা তদন্তের কূলকিনারা হয়নি

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২৪, ০৯:৪৪ এএম

শেয়ার করুন:

পুলিশ কর্মকর্তার মা-বাবা হত্যা তদন্তের কূল-কিনারা হয়নি
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে এক পুলিশ কর্মকর্তার বাবা শফিকুর রহমান ও মা ফরিদা ইয়াসমিনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেছে। তবে এই দম্পতি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এখনো কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধারণা করছে, খুনিরা পূর্ব পরিচিত। পরিকল্পিতভাবে তাদের ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে খুনিরা নাটক সাজালেও সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আলোচিত এ ঘটনায় আশপাশের ফুটেজ মিললেও বাসার ভেতরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে খুনিরা কীভাবে এসেছে, কারা খুন করেছে এবং কীভাবে চলে গেছে সে ব্যাপারে কোনো ধরনের তথ্য পায়নি পুলিশ।


বিজ্ঞাপন


পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ ট্রিপল নাইনে কল পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। মরদেহ উদ্ধারের সময় নিচতলার পার্কিংয়ে শফিকুর রহমানের এবং দ্বিতীয় তলায় বেডের মশারির ভেতরে তার স্ত্রী ফরিদার মরদেহ পায়। এসময় শফিকুরের গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। অন্যদিকে তার স্ত্রীর মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিল ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন। যা সুরতহাল প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে।

পুলিশ ধারণা করছে, এই হত্যাকাণ্ডটি পূর্ব পরিচিতরাই ঘটিয়েছে৷ যাদের সাথে পূর্ব কোনো শত্রুতা ছিল। সেই জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। নিচতলা ও দোতলায় লাশ পাওয়া গেলেও চারতলা পর্যন্ত পায়ের রক্তাক্ত ছাপ দেখা গেছে। ফরিদা ওই সময় ঘুমিয়ে ছিলেন আর শফিকুর হয়ত ফজর নামাজ পড়ে বাসায় ফিরছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Khun2


বিজ্ঞাপন


তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেছেন, এ দম্পতির ফেনীতে জমিজমা রয়েছে। তা নিয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে কি না তা তারা মাথায় রেখে তদন্ত করছেন। যদিও এখনো কতজন আত্মীয়-স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তা বলছে না পুলিশ।

ওয়ারী বিভাগের ডিসি ইকবাল হোসাইন ঢাকা মেইলকে বলেন, এখনো আমরা এটা কূলকিনারা করতে পারিনি। তবে কাজ চলছে। খুনিরা নিহত দম্পতির পূর্ব পরিচিত বলে মনে হচ্ছে। এঘটনায় আমরা বাসার ভেতরের কোনো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাইনি।

আরও পড়ুন

মামলা থেকে রেহাই পেলেও যেসব প্রশ্নের উত্তর পায়নি গ্রামবাসী

পল্লবীজুড়ে কিশোর গ্যাংয়ের দাপট, গ্যাং লিডাররা পুলিশের সোর্স!

তানিয়া হত্যা: বাড়ির মালিককে ঘিরে যত সন্দেহ

যাত্রাবাড়ী থানার ওসি (অফিসার ইনচার্জ) আবুল হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা এ হত্যাকাণ্ডটি এখনো তদন্ত করছি। তবে বলার মতো কিছু পাইনি। তদন্তের স্বার্থে আমরা ওই ভবনের বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি৷ যখন যাকে মনে হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাসার বাইরে সিসি ফুটেজ পাওয়া গেলেও বাসার ভেতরে কোনো সিসি ক্যামেরা ছিল না।

পরিবার সূত্রে পুলিশ জানতে পেরেছে, হত্যার শিকার শফিকুর রহমান জনতা ব্যাংকের সাবেক গাড়িচালক। সম্প্রতি তিনি যাত্রাবাড়ীর কোনাপাড়া এলাকার পশ্চিম মোমেনবাগের আড়া বাড়ি বটতলায় একটি চারতলা বাড়ি তৈরি করে বসবাস করে আসছিলেন। সেই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় থাকতেন তিনি ও তার স্ত্রী। বাড়ির নিচতলার এক পাশ এবং তিন ও চার তলা ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতেন।

Khun3

তাদের একমাত্র ছেলে পুলিশের বিশেষ শাখার (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) উপপরিদর্শক (এসআই) আল আমিন ওরফে ইমন। তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে সেই বাসায় পরিবারের সাথেই থাকতেন। গত বুধবার আল আমিন তার দাদাবাড়ি ফেনী বেড়াতে যান। অন্যদিকেও তার স্ত্রীও বাবার বাড়িতে চলে যান। ফলে বাড়িতে কেউ ছিল না।

হত্যার শিকার শফিকুরের জামাতা আরিফুর রহমান ওরফে বাপ্পী গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছেন, ফেনীর দাগনভূঞার রামচন্দ্রপুরে জমিজমা নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জের ধরে এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তাছাড়া হত্যাকারীরা ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতেও প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে। কারণ আলমারির কাপড় চোপড় এলোমেলো ছিল। তারা এই ঘটনাটিকে ডাকাতি বলেও নাটক সাজিয়েছে। কিন্তু পারেনি। কারণ সেই বাসার কিছুই খোয়া যায়নি। ফলে সন্দেহটা পরিচিতজনদের প্রতি একটু বেশি পুলিশের।

এমআইকে/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর