মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

তানিয়া হত্যা: বাড়ির মালিককে ঘিরে যত সন্দেহ

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

তানিয়া হত্যা: বাড়ির মালিককে ঘিরে যত সন্দেহ
নিহত তানিয়া আক্তার। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় তানিয়া আক্তার (৩৫) নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন- বাড়িটির মালিক শাহীন এবং তানিয়ার সঙ্গে সাবলেট থাকা ইতি। ঘটনার দিনই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। যদিও এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল কেউ মুখ খুলছেন না। তানিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ব্যাগটি পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রাথমিকভাবে এটিকে পরিকল্পিত হত্যা বলেই মনে করা হচ্ছে। নিহত তানিয়ার সঙ্গে বাড়ির মালিক শাহীনের প্রেমের সম্পর্কের জেরে এই হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এজন্য বাড়ির মালিককে ঘিরে সন্দেহ ও তদন্ত চলছে।


বিজ্ঞাপন


সোমবার (২২ জানুয়ারি) রাতে থানা পুলিশ, ডিবি ও তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এর আগে রোববার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে হাজারীবাগের ১৭/ এ মিতালী রোডের একটি বাসা থেকে তানিয়া আক্তার নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। রাতে এ ঘটনায় বাদী হয়ে নিহতের ভাই তন্ময় হাসান নিদ একটি হত্যা মামলা করেন।

সন্দেহে বাড়ির মালিক শাহীন

তানিয়া হত্যায় বাড়ির মালিক শাহীনকে ঘিরেই মূল তদন্ত চলছে। তবে ইতিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের সংশ্লিষ্ট থাকার বিষয়ে নানা তথ্যও পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ঘটনার দিন বাড়ির মালিকের সঙ্গে তানিয়ার কথা হয়েছে, এর প্রমাণও মিলেছে। আর ইতি তানিয়ার পূর্ব পরিচিতও নন। তারপরও হঠাৎ করে কুমিল্লা থেকে তানিয়া এসে তার বাবার বাড়ি রেখে কেনই বা একটি বাসায় ওঠলেন বিষয়টি সন্দেহের জন্ম দিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে। 


বিজ্ঞাপন


ডিবি পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গেল জাতীয় নির্বাচনের আগে বাড়ির মালিক শাহীনের সঙ্গে তানিয়ার পরিচয় হয়। মূলত কোনো এক প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারের কাজ করতে গিয়ে তাদের পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে ধারণা করছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। কারণ ঘটনার দিন তানিয়ার সাথে শাহীনের ফোনে একাধিকবার কথাও হয়েছে। যা তার ফোনের রেকর্ডে পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন

বনশ্রীর সেই গৃহকর্মীর ভবন থেকে পড়ার প্রমাণ মিলেছে

তবে তানিয়ার ফোন ও ব্যাগের সন্ধান এখনো মেলেনি। ধারণা করা হচ্ছে, তানিয়ার ফোনটিতে শাহীনের সাথে কথোপকথনসহ নানা তথ্য রয়েছে। আর ব্যাগে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র বা আলামত ছিল। এসব বিষয়ে শাহীনকে রোববার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। যদিও শাহীন ও ইতিকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি ডিবির কেউ স্বীকার করছেন না।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, শাহীনের সেই ফ্ল্যাটে তানিয়াকে কোনো ভাড়া দিতে হবে না বলে তোলা হয়েছিল। সাথে ইতিকে কেন তোলা হয়েছিল, ঘটনার দিন তানিয়ার সাথে শাহীনের কী কথা হয়েছিল, তা জানার চেষ্টা করছেন তারা।

মামলায় যা উল্লেখ করা হয়

এ ঘটনার পর তানিয়ার ভাই বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। তিনি মামলায় উল্লেখ করেন, তার বোন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করতেন। গত ৫ জানুয়ারি ওই বাসায় ওঠেন। ১৯ জানুয়ারি তানিয়া তাদের বাসায় সন্ধ্যার দিকে যান এবং রাতের খাবার খেয়ে ইতির জন্য খাবার নিয়ে যান, যিনি তানিয়ার সাবলেট ছিলেন। এর পরদিন থেকে তানিয়াকে তারা ফোনে পাচ্ছিলেন না। পরে তারা বাড়ির মালিক শাহীনকে কল করে বোনের অবস্থা কী জানতে চান। তখন শাহীন ইতিকে নিয়ে সেই ফ্ল্যাটে যান এবং তানিয়ার রুমটি বাহির থেকে বন্ধ পান। পরে তারা বিষয়টি জানতে পেরে হাজারীবাগ থানাকে জানালে পুলিশ গিয়ে তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পায়, তানিয়ার গলাকাটা লাশ পড়ে আছে। পরে মরদেহটি উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।

আরও পড়ুন

চাঞ্চল্যকর বরুণ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী গ্রেফতার

Tania2

তবে পুলিশের ধারণা, তানিয়াকে ১৯ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে গলাকেটে হত্যা করা হতে পারে।

জানা গেছে, নিহত তানিয়ার বাবার নাম তোফাজ্জল হোসেন। তাদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। তানিয়ার স্বামীর নাম তৌসিফ আহমেদ। তিনি ঢাকায় আসার আগে কুমিল্লায় থাকতেন। মাঝে মাঝে বাবার বাড়িতে বেড়াতে যেতেন।

তানিয়ার ভাই তন্ময় হাসান নিদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা কাউকে সন্দেহ করছি না। পুরো বিষয়টি পুলিশের ওপর ভরসা করে আছি। আপুর ব্যবহৃত ফোন ও ব্যাগটি পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, যে তাকে হত্যা করেছে সেই নিয়ে গেছে। তবে ঘটনার দিন বাড়ির মালিক ও ইতিকে জিজ্ঞাসাবাদের নিয়ে গেছে পুলিশ।’

পুলিশ বলছে তদন্ত চলছে

তানিয়ার মৃত্যু ও আসামি আটক আছে কি না জানতে হাজারীবাগ থানার এসআই নিকলেশ চন্দ্র কর পলাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু বলতে চাননি।

আরও পড়ুন

ছেলেকে বাঁচাতে আগুনে ঝাঁপ দেন শারমিন

হাজারীবাগ থানার ওসি নুর মোহাম্মদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা এখনো কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করিনি। তবে বাড়ির মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করব। এ ঘটনায় অনেক ফুটেজ পাওয়া গেছে, যেগুলো বাড়িটির বাহিরের। ওই ফ্ল্যাটের কোনো সিসি ফুটেজ পাওয়া যায়নি। তদন্ত চলছে। এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা মালিক বা কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করিনি।’ 

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের ধানমন্ডি জোনের এডিসি এহসানুল ফেরদৌস ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের পাশাপাশি ডিবি তদন্ত করছে। তদন্তদাধীন থাকায় এ বিষয়ে এখন কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না।’

এমআইকে/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর