শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

সংসদ নির্বাচন

৭৪ শতাংশ প্রার্থীই খুইয়েছেন জামানত, ‘পকেট ভারী’ ইসির!

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

৭৪ শতাংশ প্রার্থীই খুইয়েছেন জামানত, ‘পকেট ভারী’ ইসির!
  • জামানত টিকেনি ২০টির বেশি দলের কোনো প্রার্থীর
  • জাপারই জামানত টিকেনি ২৩৬ জনের
  • জামানত থেকে ইসির আয় প্রায় ৩ কোটি
  • কিংস পার্টির সক্রিয়তা ও কম প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা

বিএনপিসহ একাধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশ না নিলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের ছিল ছড়াছড়ি। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১ হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থী ভোটে লড়লেও বেশিরভাগের জামানতই রক্ষা হয়নি। ২৭টি দল ও স্বতন্ত্র মিলে মোট এক হাজার ৪৫৪ জন প্রার্থী জামানত টেকেনি। যা মোটের হিসেবে ৭৩ দশমিক ৮৪ বা প্রায় ৭৪ শতাংশ। আর ১২ ফেব্রুয়ারি নওগাঁ-২ আসনের ভোটে জামানত হারিয়েছেন আরও দুজন। জামানত হারানোর ক্ষেত্রে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। দলটির মোট প্রার্থীর মাত্র ২৭ জনের জামানত রক্ষা হয়েছে, হারিয়েছেন ২৩৬ জন।


বিজ্ঞাপন


অন্যদিকে, ভোটে অংশ নেওয়া ২০টির বেশি দলের কোনো প্রার্থীর টিকেনি জামানত। অবশ্য এ কারণে পকেট ভারী হয়েছে নির্বাচন কমিশনের। কারণ নিয়ম অনুযায়ী জামানত হারানো প্রার্থীদের থেকে ৩ কোটির মতো টাকা রয়ে যাওয়ার কথা ইসির ফান্ডে।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীকে ২৫ হাজার টাকা জামানত দিতে হয়। যাদের জামানত খোয়া যায়নি তারা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ তুলে নিতে পারবেন।

ইসির হিসেবে বাজেয়াপ্ত হওয়া প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ দুই কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোটের আগে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মত করে প্রার্থী দেয়। সেক্ষেত্রে জনপ্রিয় কিনা তা বিবেচনা করা হয় না। অন্যদিকে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হওয়ার কারণেও বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর জামানত হারানোর ঘটনা ঘটছে।

তারা বলছেন, ভোটের আগে হঠাৎ করে কিংস পার্টিখ্যাত একাধিক দল নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল সংখ্যক প্রার্থী দিয়েছে। যাদের শীর্ষ নেতাদেরও চেনা-জানা নেই, নেই জনপ্রিয়তাও।

মাঠ পর্যায় থেকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখায় রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠানো এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এক হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থী। ২৭টি দল ও স্বতন্ত্র মিলে মোট জামানত হারিয়েছেন এক হাজার ৪৫৪ জন প্রার্থী। অর্থাৎ ৭৩ দশমিক ৮৪ বা প্রায় ৭৪ শতাংশ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।

EC2

জামানত হারাল কতটি দল?

তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ জানুয়ারি দেশের ২৯৯টি আসনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ২৮টি রাজনৈতিক দল থেকে এবং স্বতন্ত্র হিসেবে মোট ১ হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের মধ্য থেকে ২০টি রাজনৈতিক দলের সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তারা নির্বাচনে নিজ আসনে প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগ ভোট পাননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান জানিয়েছেন, নির্বাচন শেষে নিজ আসনের মোট ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগ ভোট না পাওয়া প্রার্থীদের তালিকা করে তাদের জামানতের টাকা অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেলের অফিসের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা হয়। আর বাকি প্রার্থীরা ইসিতে আবেদন করে জামানতের টাকা তুলে নেন।

দলভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেতে একটু সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৬৩ প্রার্থীর মধ্যে ২৩৬ জন জামানত হারিয়েছেন, যা শতাংশের হিসেবে ৯০ ভাগ। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হওয়া ৭ আসনেও জামানত টিকেনি জাপার প্রার্থীদের।

আসনগুলো হলো— নীলফামারী-৩, রংপুর-১, বগুড়া-৩, পিরোজপুর-৩, ঢাকা-১৮, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও চট্টগ্রাম-৮। ৫ হাজারের কম ভোট পান ১৯৫ জন, ১ হাজারের কম ভোট পান ৮৮ জন। বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনেও জাপার ১৭৮ প্রার্থীর মধ্যে ১৪৫ প্রার্থীই জামানত হারিয়েছিলেন।

এবারের সংসদ নির্বাচনে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৩৫টি আসনে প্রার্থী দিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তৃণমূল বিএনপি। কিন্তু কোনো প্রার্থীর জামানত টিকেনি।

ভোটের আগে আদালতের নির্দেশে নিবন্ধন পাওয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম)। ৫৩ আসনে প্রার্থী দিয়েও কোনো আসনেই জিততে পারেননি দলটির প্রার্থীরা।

vote

কোন নির্বাচনে কত প্রার্থী জামানত হারান

২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি ইসি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় এবং ১৪৭ আসনে ভোটগ্রহণ হয়। ওই নির্বাচনে মোট ৩৯০ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৬৩ জন জামানত হারান।

২০০৮ সালের নির্বাচনে এক হাজার ৫৫৭ প্রার্থীর মধ্যে ৯৪১ জন জামানত হারান। আর ২০০১ সালের নির্বাচনে এক হাজার ৯৩৯ জন প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারান এক হাজার ২৫৯ জন।

১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে অংশ নেন দুই হাজার ৫৭৪ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে জামানত হারান এক হাজার ৭৬০ জন।

অন্যদিকে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে দুই হাজার ৭৮৭ জন প্রার্থীর মধ্যে এক হাজার ৯৩৪ জন জামানত হারান।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা মেইলকে বলেন, এবার নির্বাচন সেই অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি। স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণও ছিল না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। 

কিংস পার্টির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা জামানত হারিয়েছেন, তাদের বেশিরভাগ তথাকথিত কিংস পার্টির প্রার্থী। এরা মাঠের রাজনীতিতে ছিলেন না কখনো, জনপ্রিয়তাও নেই। ভোটের আগে এরা হাজির হয়েছে। আর জাতীয় পার্টি অন্যবারের মতো এবার সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল না। যে কারণে আরও খারাপ করেছে।

এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কি- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর আগেও নির্বাচনে জামানত হারানোর উদাহরণ আছে। তবে এবারের পরিস্থিতি সত্যি উদ্বেগজনক। তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের জন্য প্রথমত একটি সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে হবে। নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে তাদের অধীনে নির্বাচন হলে সবাই ভরসা পাবে।’

বিইউ/এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর